বাগমারা প্রতিনিধি :
গরীবের ঘরের আদরের সন্তান। তাই বাবা-মা শখ করে নাম রেছে রানী। সেই রানীর জীবন এতটাই দূর্বিসহ হয়ে ওঠবে কে জানত। দারিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত পিতা-মাতার সংসারে বোঝা হয়ে ওঠেন রানী। মাত্র ১০ বছর বয়সে রানীর বিয়ে হয় এক ভ্যান চালকের সাথে। রানী এখন রানী খাতুন। এই ভ্যান চালক পরে মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন। শুরু হয় রানী খাতুনের সংগ্রামী জীবন। তিনি এখন চা বিক্রেতা। উপজেলা মচমইল বাজারের চেয়ারম্যান মোড়ে দিনভর চা বিক্রি করেন রানী খাতুন। রানী খাতুনের বাবার বাড়ি পাশ্ববর্তী আউসপাড়া ইউনিয়নের রক্ষিতপাড়া গ্রামে। পিতার দারিদ্রতার কারণে মাত্র ১০ বছর বয়সে মচমইল গ্রামের ভ্যান চালক নয়ন নামে এক যুবকের সাথে তার বিয়ে হয়। শুরুতে সংসারে অভাব থাকলেও
ছিল সুখ আর শান্তি। স্বামী এক সময় ভ্যান চালনার পেশা ছেড়ে দিয়ে মচমইল বাজারের চেয়ারম্যান মোড়ে একটি চা স্টল খুলেন। দিন শেষে ভালোই কেনা বেচা হয়। এরি মাঝে তাদের ঘর উজ্জল করে জন্ম নেয় এক পুত্র সন্তান। কিন্তু রানীর কপালে সেই সুখ আর বেশি দিন সইলো না। তার স্বামী ক্রমেই মাদকাসক্ত হয়ে পড়তে থাকে। এক সময় সে হেরোইন সেবন শুরু করে। এভাবে তার স্বামী দোকানের সব মালামাল বিক্রি করে পরোপুরি নেশার জগতে ঢুকে পড়ে। সে আর বাড়িতেই রাত্রী যাপন করে না। এই অবস্থায় আর কতদিন একমাত্র ছেলে এসএসপি পাশ করে সবে মচমইল কলেজে ভর্তি হয়েছে। স্বামী নিরুদ্দেশ তার উপর ছেলের লেখাপড়া ও সংসারের খরচ। নিরুপায় রানী এবার নিজেই হাল ধরেন চা স্টলের। স্বামীর অনেক ধার দেনা শোধ করে স্থানীয় এনজিও থেকে ঋন নিয়ে তিনি আবার চালু করেছেন একমাত্র বেচে থাকার অবলম্বন চা স্টলটি। প্রায় বার বছর ধরে রানী এই্ ভাবে চা স্টল চালিয়ে সংসার পরিচালনা
করে আসছেন। স্বামীকে মাদক থেকে ফেরাতে পারেননি। মাঝে কিছুদিন তাকে জেল খানায় রাখা হয়েছিল। এখন সে মাঝে মধ্যে বাড়িতে আসলেই অধিকাংশ সময় থাকেন বন্ধু বান্ধবদের নিয়ে নেশার জগতে। রানী খাতুন জানান, তার চা স্টলটি ভালোই চলছে। প্রতিদিন হাজার বারশ টাকার বেচাবিক্রি হয়। দোকানে চা ছাড়াও সকালের নাস্তা রুটি খিচুরী ও ডালপুরি তৈরি করে। দোকানটি তার ভাড়া নেওয়া। এছাড়া রয়েছে এনজিও’র কিস্তিÍর চাপ। সব মিলিয়ে সংসার চালাতে তাকে হিমসিম খেতে হয়। বৃদ্ধ শ্বশুর শ্বাশুড়ীকে তাকেই দেখতে হয়। তাদের কোন জমিজমা নেই। এমকি ভিটাবাড়িও নেই । প্রতিবেশির ভিটায় দুটো ঘর তুলে কোন রকমে মাথা গোঁজার ঠাই করে নিয়েছেন। শুভডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হাকিম জানান, রানী
খাতুৃন খুবই সংগ্রামী একজন নারী। তার স্বামী নেশাগ্রস্থ হওয়ায় তাকে খুব কষ্ট করে চলতে হয়। আগামীতে তার জন্য ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কোন কিছু সহযোগিতা করা যায় কিনা তার চেষ্টা করব। স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বর আবেদ আলী জানান, আমার খুব কাছের প্রতিবেশি রানী খাতুন। তার স্বামীকে মাদক থেকে ফেরাতে চেষ্টা করেও কোন কাজ হয়নি। তবে রানী খুবই আত্মসচেতন একজন মানুষ। সে দিনরাত পরিশ্রম করে একমাত্র পুত্রকে লেখাপড়া শেখাচ্ছে। ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে সে এত কষ্ট করে চলেছে।
আর/এস