খবর২৪ঘণ্টা.কম, ডেস্ক: বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার হঠাৎ করে শক্তি বৃদ্ধি করার পর নো ম্যানস ল্যান্ডে আশ্রয় নিয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের মধ্যে তৈরি হয়েছে আতঙ্ক।
এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবিও সীমান্তে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপিকে পাঠানো হয়েছে পতাকা বৈঠকের বার্তা। ঢাকায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবাদও জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, মিয়ানমারের শক্তিবৃদ্ধির বিষয়টি অত ‘গুরুত্ব দিয়ে দেখার কিছু নেই’।
রাখাইনে সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের মুখে পালিয়ে আসা অন্তত ১৭ হাজার রোহিঙ্গা বান্দরবান সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে আশ্রয় নিয়ে আছে। তাদের মধ্যে প্রায় সাত হাজার রোহিঙ্গা রয়েছে তুমব্রু সীমান্তের শূন্য রেখায়। তাদের ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে দুই দেশের যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের সভায় মিয়ানমার আশ্বস্তও করেছিল।
বান্দরবানের স্থানীয় প্রশাসন ও বিজিবি কর্মকর্তারা জানান, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ ফেব্রুয়ারির শুরু থেকেই শূন্যরেখায় অবস্থান নেয়া রোহিঙ্গাদের সরে যেতে নানাভাবে হুমকি-ধামকি দিচ্ছিল। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার সকালে হঠাৎ তুমব্রু সীমান্তে শক্তি বৃদ্ধি করে মিয়ানমার। বেশ কিছু সামরিক পিকআপ, ট্রাক ও ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বিপুল সংখ্যক বিজিপি সদস্য অবস্থান নেয় শূন্য রেখা থেকে দেড়শ ভেতরে।
কাঁটাতারের বেড়ার কাছে অবস্থান নিয়ে টানা কয়েক ঘণ্টা মাইকিং করে তারা রোহিঙ্গাদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। ফলে রোহিঙ্গাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে বলে নাইক্ষ্যংছড়ির উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সরওয়ার কামাল জানান।
তিনি বলেন, সীমান্তের কোনাপাড়া নোম্যান্স ল্যান্ডে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সীমান্তে নিরাপত্তা বাড়িয়েছে বিজিবি ও প্রশাসন।
বিজিবির বান্দরবান সেক্টরের কমান্ডার কর্নেল আব্দুল খালেক বলেন, এর আগেও মিয়ানমার তাদের সীমান্তে লোকবল বাড়িয়ে আবার তাদের ফিরিয়ে নিয়েছে। কিন্তু এবার তুমব্রু সীমান্তে এত বেশি শক্তি বৃদ্ধির কারণ স্পষ্ট নয়। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিজিবির পক্ষ থেকেও নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
সীমান্তে এই উত্তেজনার খবর ছড়িয়ে পড়লে বিকালে ঢাকায় পিলখানায় বিজিবি সদরদপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে আসেন এ বাহিনীর অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুজিবুর রহমান। তিনি বলেন, বর্ডার এলাকায় ভারী অস্ত্র মোতায়েন, সেনা সমাবেশ- এগুলো বর্ডার নর্মসের বাইরে। আমরা এটা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি, সতর্ক অবস্থানে আছি। যে কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে বিজিবি সবসময়ই দেশের জন্য নিবেদিতপ্রাণ হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক বলেন, বিজিবির পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে ফ্ল্যাগ মিটিং ডাকা হয়েছে। পাশাপাশি একটি প্রতিবাদলিপিও পাঠানো হয়েছে বিজিপিকে।
শূন্য রেখায় আটকে থাকা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ঠেলে দিতে মিয়ানমার এই তৎপরতা চালাচ্ছে কি না- এমন প্রশ্নে মুজিবুর রহমান বলেন, কিছুদিন আগেও তারা মাইকিং করেছিল যে ‘বাংলাদেশি হয়ে’ রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের এলাকায় থাকতে পারবে না। এটা এক ধরনের পুশ-ইন এর চেষ্টাই বলা যায়। তবে আমি বলব, উচ্চপর্যায়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের পথ অনেকটাই প্রসারিত হয়েছে। আশা করি দ্রুতই এটার নিষ্পত্তি হবে।
মিয়ানমার সীমান্তে তাদের লোকবল কী পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে, বাংলাদেশের অন্য কোনো বাহিনীকে সীমান্তে নেয়া হচ্ছে কিনা- এমন প্রশ্নে বিজিবির অতিরিক্ত পরিচালক বলেন, পরিস্থিতি এমন হয়নি যে অন্য ফোর্সকে ইনভলভ করতে হবে। এখনো পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে।
মিয়ানমারের এ ধরনের তৎপরতাকে বাংলাদেশ ‘উসকানি’ হিসেবে দেখছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে বৈঠক হয়েছে, সমঝোতা স্মারক হয়েছে। কাজেই এটা উসকানির কোনো পর্যায়ে পড়ে না। তারা কী কারণে সেনা মোতায়েন করল তা ফ্ল্যাগ মিটিংয়েই জানা যাবে।
বিজিবির প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ পরিদর্শনে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া সফররত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালকেও তুমব্রু পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা। জবাবে তিনি বলেন, মিয়ানমার দাবি করেছে, জিরো লাইনে অবস্থান নিয়ে থাকা রোহিঙ্গারা যাতে আর বাংলাদেশে না ঢোকে সেজন্যই তারা নিরাপত্তা বাড়িয়েছে।
খবর২৪ঘণ্টা.কম/রখ