খবর২৪ঘণ্টা ডেস্ক: ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমানের মেয়ে শাজনীন তাসনিম রহমানকে হত্যার দায়ে গৃহকর্মী শহীদুল ইসলাম ওরফে শহীদের ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাত পৌনে ১০টায় গাজীপুরের কাশিমপুর হাই-সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়। কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. মিজানুর রহমান ফাঁসি কার্যকরের বিষয়টি গণমাধ্যম কর্মীদের জানান।
.
ফাঁসি কার্যকরের প্রায় ১ ঘণ্টা আগে জেলা সিভিল সার্জন সৈয়দ মো. মঞ্জুরুল হক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ফারজানা মান্নান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাহেনুল ইসলামসহ পুলিশ প্রশাসনের লোকজন কারা অভ্যন্তরে প্রবেশ করেন।
রায় কার্যকরকে ঘিরে কারা ফটকের সামনে বিকেল থেকেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। শহীদুল ইসলামের ছোট ভাই মহিদুল ইসলাম, খালা ও বোনসহ পরিবারের ৫ সদস্য কারাগারে এসে তার সঙ্গে দেখা করেন।
কাশিমপুর কারাগারের জেলার বিকাশ রায়হান জানান, শাজনীন হত্যা মামলার আসামি শহীদুল ইসলাম ওরফে শহীদ ২০১২ সাল থেকে গাজীপুরের কাশিমপুরে হাই-সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি ছিল।
তিনি বলেন, রিভিউ খারিজের পর তাকে কারাগারের কনডেম সেলে রাখা হয়। পরে তার মৃত্যু পরোয়ানা কারাগারে এসে পোঁছায় এবং আদালতের রায় কার্যকরের জন্য কারাগারে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ও প্রস্তুতি নেয়া হয়। রাত পৌনে ১০টার দিকে কারাগারের জল্লাদ রাজু শহীদুলের ফাঁসি কার্যকর করেন।
ফাঁসি কার্যকরের পর সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষে শহীদুলের লাশ তার ভাই মহিদুল ইসলাম গ্রহণ করেন। লাশ নিয়ে রাতেই তার গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের মোকসেদপুর থানার ডাংগাদূর্গাপুরের উদ্দেশে রওনা হয় স্বজনরা। সেখানে পারিবারিক কবরাস্থানে তাকে দাফন করা হবে।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ১৯৯৮ সালের ২৩ এপ্রিল রাতে গুলশানে নিজ বাড়িতে খুন হন শাজনীন। পরদিন শাজনীনের বাবা লতিফুর রহমান গুলশান থানায় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় একটি হত্যা মামলা করেন। একই বছরের ৪ সেপ্টেম্বর ওই ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি ধর্ষণ ও হত্যা মামলা করে সিআইডি।
তদন্ত শেষে প্রথম মামলায় ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত-১ এবং দ্বিতীয় মামলায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। দুটি মামলাতেই আদালত অভিযোগ গঠন করেন।
পরে ২০০৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতের বিচারক কাজী রহমতউল্লাহ মামলাটির রায় ঘোষণা করেন। রায়ে শাজনীনকে ধর্ষণ ও খুনের পরিকল্পনা এবং সহযোগিতার দায়ে ছয় আসামির ফাঁসির আদেশ দেন আদালত।
বিচারিক আদালতের রায়ের পর মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের (ডেথ রেফারেন্স) জন্য মামলাটি হাইকোর্টে যায়। একই সঙ্গে আসামিরাও আপিল করেন। ২০০৬ সালের ১০ জুলাই হাইকোর্ট পাঁচ আসামি হাসান, শহীদুল, বাদল, মিনু ও পারভীনের ফাঁসির আদেশ বহাল রাখেন।
এরপর হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন (লিভ টু আপিল) করেন চার আসামি- শহীদুল, হাসান, বাদল, মিনু ও পারভীন। গত ২ আগস্ট আসামিদের মধ্যে শহীদুলের ফাঁসির রায় বহাল রেখে আদেশ দেন আপিল বিভাগ। বাকি চারজনকে খালাস দেয়া হয়।
সর্বশেষ গত ৫ মার্চ শহীদুলের মৃত্যুদণ্ডের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ। বুধবার তার ফাঁসি কার্যকরের মধ্যদিয়ে আলোচিত এই ধর্ষণ ও হত্যা মামলার সর্বশেষ আইনি ধাপ সম্পন্ন হলো।
খবর২৪ঘন্টা/নই