নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজশাহী সিটি কর্পোরেন নির্বাচনে বিএনপি দলীয় মেয়র প্রার্থী মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন। মঙ্গলবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তিনি নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন।
নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণাকালে তিনি বলেন, আগামী ৩০ জুলাই রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন কোন জুয়া, বাজি বা খেলা নয়। এলাকার মানুষের সমৃদ্ধি ও শান্তির সাথে সম্পর্কিত ব্যাপার। এক্ষেত্রে ভুল হলে সিদ্ধান্ত হবে আত্মঘাতি। খুলনা ও গাজীপুর মার্কা নির্বাচনে সঠিক গণরায় ও পছন্দের প্রতিনিধি পাওয়া সম্ভব নয়। দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ নির্বাচন অতীব গুরুত্বপূর্ণ। দেশ একন একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। এক দলীয় স্বৈরশাসনের জাতাকলে জনজীবন আজ নিষ্পেষিত। রাজশাহীবাসি এহেন অবস্থার বাইরে নয়।
মুক্ত গণতান্ত্রিক পরিবেশে শ্বাস নেয়ার জন্য সকলে উদগ্রীব হয়ে আছে। এই প্রতিকুল অবস্থায় মহানগরবাসীর বিভিন্ন সমস্যার উন্নয়ন ও প্রত্যাশা পূরণের অঙ্গীকার এবং বর্তমান ফ্যাসিবাদী সরকারের গণতন্ত্র নস্যাতের নীল-নকশাকে প্রতিহত ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি এবং জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলনের অংশ হিসাবে আসন্ন সিটি কর্পোরেশন মেয়র পদে লড়ছি। আরো বলেন, আধুনিক রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের যাত্রা শুরু হয়েছিল দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সরকার ও সাবেক মেয়র রাজশাহীর গণমানুষের নেতা জনাব মিজানুর রহমান মিনুর হাত ধরে। পরবর্তীতে সেই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ব্যহত হয় ২০০৮ সালে দায়িত্বে আসা মেয়রের কার্যকালে। সেই সময়ে শান্তির শহর রাজশাহীর মানুষের সুখ-শান্তি তিরোহিত হয়ে সন্ত্রাসের জনপদে পরিণত হয়। রাজশাহী মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পরবর্তী নির্বাচনে সদ্য সাবেক মেয়র মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করেন। নগরবাসী আশা নিয়ে আমাকে মেয়র নির্বাচিত করেছিল।
কিন্তু বর্তমান বিনাভোটের সরকার ও তার স্থানীয় দোসরদের ষড়যন্ত্রে তাঁকে প্রায় অর্ধেক সময়ই দায়িত্বের বাইরে অবস্থান করতে হয়। উপরন্ত সরকারের অসহযোগিতা কাঙ্খিত উন্নয়ন বাস্তবায়নে বাধার সৃষ্টি করে। প্রতিদ্বন্দি প্রার্থী মিথ্যা প্রচারণা দিয়ে জনগণে র সামনে তাঁর ব্যর্থতাকে তুলে ধরার চেষ্টা করছে যা মোটেও সত্য নয়। বরং তা বর্তমান সরকার ও তার দোসরদের স্বৈরাচারী মনোভাবেরই পরিচায়ক। আমাদের প্রতিপক্ষ সুষ্ঠু নির্বাচনসহ দেশের প্রতিটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান প্রায় ধ্বংস করে উন্নয়নের চাপাবাজি সামনে নিয়ে এসেছেন। ২০১৩ সনের জাতীয় নির্বাচনে বৈধ সরকারের উন্নয়ন ম্যাজিক কাজে লাগেনি। ৫ সিটিতেই লজ্যাজনকভাবে হেরেছে। বর্তমান ভোট বিহিন সরকারেরর মেয়াদ আর মাত্র ৫ মাস। সুষ্ঠু ভোট হলে অকল্পনীয় ব্যবধানে ধানের শীষ জিতবে। উন্নয়ন আমরা করবো। কথিত টাকা নিয়ে ভাগতে হবে অন্যদের।
নির্বাচনী ইশতেহার :
১। রাজশাহী মহানগরবাসীর করের বোঝা লাঘব ও সহজসাধ্য করার জন্য উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে সরলীকরণ প্রক্রিয়ায় নূন্যতম কর নির্দ্ধারণ করা হবে।
২। রাজশাহীতে চালু হওয়া গ্যাস সংযোগ কোন এক অদৃশ্য ষড়যন্ত্রে বন্ধ হয়ে যায়। এই সংযোগ পুনরায় চালু করার জন্য জনগণকে সাথে নিয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে এবং তা আদায় করা হবে।
৩। নাগরিকদের মৌলিক অধিকার যেমন চিকিৎসা, বাসস্থান, শিক্ষা বিষয়ে ইতোপূর্বে গৃহীত প্রকল্পের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে যথাযথ উন্নয়ন করা হবে। শিক্ষার্থীগণ যাতে শুধু সনদধারী না হয়ে প্রকৃত অর্থে জ্ঞানী, দক্ষ ও মানবিক গুণের অধিকারী হয়ে দেশপ্রেমিক তথা সুনাগরিক হয়ে দেশের মুখ উজ্জ্বল করে সেই লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় মোটিভেশন প্রোগ্রাম চালু করা হবে।
(ক) রাজশাহী মহানগরে বর্তমানে অবস্থিত আরবান ক্লিনিকসমূহের সংখ্যা বৃদ্ধি ও উন্নয়ন করা হবে। এছাড়াও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামগ্রিক অব্যবস্থা দূরীকরণে যথাযথ কর্তৃপক্ষের সহায়তায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
(খ) স্বল্প আয়ের গৃহহীন জনগোষ্ঠির জন্য গৃহীত গৃহ নির্মাণ প্রকল্প চালু রাখা হবে এবং এর কর্মপরিধি আরও বৃদ্ধি করা হবে।
(গ) রাজশাহী শিক্ষা নগরী হিসেবে পরিচিত। কিন্তু শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত উন্নতমানের স্কুল-কলেজ নেই। সরকারী স্কুল ও কলেজের সংখ্যা বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। এ ছাড়াও সিটি কর্পোরেশনের অর্থায়ন ও তত্ত¡াবধানে একটি বিশ্ববিদ্যালয়, একটি কলেজ ও স্কুল স্থাপন করা হবে। কৃষি নির্ভর অর্থনীতির উন্নয়নে এ অঞ্চলে একটি পূর্ণাঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রয়োজন; এর বাস্তবায়নেও যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হবে। ছাত্র-বৃত্তি ও পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের জন্য কৃতি-শিক্ষার্থীদের স্বর্ণপদক প্রদান করা হবে। শিক্ষার্থীদের সন্ত্রাস ও মাদক থেকে দূরে রাখতে তাদেরকে খেলাধুলার প্রতি আগ্রহী করে তোলার জন্য পর্যাপ্ত খেলার মাঠ ও বিভিন্ন টুর্ণামেন্টের আয়োজন করা হবে।
(ঘ) চাকুরির ক্ষেত্রে চলমান কোটা আন্দোলনকে সহযোগিতা করা হবে এবং কোটা প্রথা সংস্কার করে মেধাবীদের চাকুরির নিয়োগ প্রাপ্তিতে পূর্ণ সহযোগিতা করা হবে।
৪। একটি আধুনিক নগরীর উপযোগী রাস্তাঘাট তৈরী, ড্রেনেজ-ব্যবস্থা, পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা, সুপেয় পানির ব্যবস্থা করার কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হবে।
৫। শহরের যানজট নিরসনকল্পে ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়নে সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব ট্রাফিক-কর্মী বাহিনী গড়ে তোলা হবে। যত্রতত্র গাড়ী পার্কিং এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং বিভিন্ন মার্কেট এলাকায় বহুতল গাড়ী-পার্কিং তৈরী করা হবে।
৬। রাজশাহীতে আন্তর্জাতিক ফুটবল, কিক্রেট, হকিসহ অন্যান্য টুর্ণামেন্ট এর ভেন্যু স্থাপনের লক্ষে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ ও একটি ইনডোর স্টেডিয়াম স্থাপন করা হবে।
৭। সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন সকল মসজিদ, মাদ্রাসা, গোরস্থান, মন্দির, মঠ, শশ্মান, গীর্জাসহ অন্যান্য উপাসনালয়ের সংস্কার ও সৌন্দর্যবর্দ্ধন করা হবে।
৮। জলবায়ুর পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব রোধকল্পে নগরীতে পর্যাপ্ত বৃক্ষরোপণ করে “গ্রীণ সিটি হেলদি সিটি” ¯েøাগান এর বাস্তব রূপায়ন করা হবে।
৯। মুক্তিযোদ্ধা, বিধবা নারী ও সিনিয়র-সিটিজেনবৃন্দের সামাজিক নিরাপত্তাবিধান এবং সিটি কর্পোরেশনে ওয়ান স্টপ / ইন্টারনেট ভিত্তিক সেবা প্রদান নিশ্চিত করা হবে।
১০। কর্মজীবি মহিলাদের থাকার জন্য হোস্টেল নির্মাণ এবং তাঁদের শিশু সন্তানদের দেখা-শোনার জন্য ডে-কেয়ার সেন্টার গড়ে তোলা হবে।
১১। মাদকাসক্ত যুবসমাজকে সুস্থ ধারায় ফিরিয়ে আনার জন্য পর্যাপ্ত মাদক-নিরাময় কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে এবং তাদের কর্মসংস্থানের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। অন্যদিকে কেউ যাতে মাদকাসক্ত না হয় সেজন্য মনস্তাত্তি¡ক সেবা প্রদান করা হবে।
১২। বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের জন্য কারিগরী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, বিভিন্ন শিল্পকারখানা গড়ে তোলা এবং ক্ষুদ্র শিল্পে উৎসাহী করা হবে। বিশেষ করে রাজশাহী রেশম কারখানার পুনঃচালুসহ অন্যান্য প্রকল্প গ্রহণ করা হবে।
১৩। রাজশাহীতে পর্যটনকে আকৃষ্ট করতে দীর্ঘ পদ্মা নদীর বাধ সংস্কার ও সৌন্দর্যবর্দ্ধন করা হবে। এছাড়াও অন্যান্য ঐতিহ্যমন্ডিত স্থানসমূহকে আকর্ষণীয় করে তোলা হবে। জিয়া পার্ক, সিটি পার্কসহ শহীদ কামরুজ্জামান পার্কের আরও সংস্কার এবং অসামাজিক কার্যকলাপ রোধকল্পে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
১৪। পরিবেশ দূষণমুক্ত রাখতে আবর্জনা পরিস্কার ও কার্যকর ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা হবে। পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসম্মত পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা হবে। উম্মুক্ত জলাশয় সংস্কার ও এর পানি ব্যবহারের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
১৫। দেশের সর্বকালের কৃতি সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসনের জন্য “মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসন প্রকল্প” বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
১৬। রাজশাহীকে মেগা সিটিতে রূপান্তরের লক্ষ্যে ভবিষ্যতে এর পরিধি আরও বৃদ্ধি করা হবে।
১৭। সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য দুই ঈদ এবং পহেলা বৈশাখে উৎসব বোনাস প্রদান করা হবে। কর্মকর্তা ও কর্মচারী মৃত্যুবরণ করলে এককালীন ৫০,০০০/- (পঞ্চাশ হাজার) টাকা প্রদান করা হবে। পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণকেন্দ্র গঠন করা হবে।
১৮। সর্বোপরি জনগণের ভোটের অধিকার, গণতন্ত্র, ন্যায় বিচার এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
খবর২৪ঘণ্টা/এমকে
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পুর্ণ বেআইনি।