নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের সমাজকল্যাণ অফিসার (নিজ বেতনে) নারগিস আরা রুবী এবং তার স্বামী হিসাবরক্ষক মহিউদ্দিন মারুফের বিরুদ্ধে অবৈধ নিয়োগ ও অবৈধ অর্থ-সম্পদ অর্জনের অভিযোগ তদন্তে কমিটি গঠিত হয়েছে। সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশে পরিচালক (স্বাস্থ্য) রাজশাহী বিভাগ এ তদন্ত কমিটি গঠন করেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং দুর্নীতি দমন কমিশনে লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে পরিচালক স্বাস্থ্যকে বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয় অধিদপ্তর।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সরকারী চাকরিতে নিয়োগের প্রক্রিয়া (নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, নিয়োগ বোর্ড, পরীক্ষা/সাক্ষাতকার ইত্যাদি) ছাড়াই রামেক হাসপাতালে নারগিস আরা রুবি এবং তার স্বামী মহিউদ্দিন মারুফ নিয়োগ পেয়েছেন।
সূত্র মতে, ১৯৮৬ সালের ৯ অক্টোবর রামেক হাসপাতালের স্মারক-আর.এম.সি.এইচ/১৪৯১০/১(৪) মোতাবেক এলডিএ কাম টাইপিস্ট পদে নারগিস আরা রুবিকে নিয়োগ দেন তৎকালীন পরিচালক কর্নেল (অব.) জহরউদ্দিন আহমেদ। তবে তিনি (রুবি) আবেদন করেছিলেন সমাজ কল্যাণ অফিসার পদে। উভয়পদে কর্তৃপক্ষ কোন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করেনি। অথচ ‘বিশ্বস্ত’ সূত্রের বরাতে ওই বছরের ১৮ আগস্ট আবেদন করেছিলেন রুবি। তার যোগ্যতা হিসেবে নিয়োগপত্রে ‘Subject to Satisfactory political antecedence and physical fitness and health” রাজনৈতিক পরিচয় ও শারীরিক সুস্থতা)’ উল্লেখ রয়েছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, নারগিস আরা রুবির তখন টাইপিংয়ের সনদপত্রও ছিল না।
জানা যায়, বাংলাদেশে সরকারি চাকরির নিয়োগ বিধি তৈরি হয় ১৯৭৭ সালে। এতে যে কোন সরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়োগ বোর্ড গঠন ও বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা/সাক্ষাতকারের মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার বিধান রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১৯৭৭ সালে প্রণীত নিয়োগ বিধির আলোকে ১৯৮১ সালে রামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নিয়োগ বোর্ডের/কমিটির মাধ্যমে সুইপার পদে জনৈক মিনা বেগমকে নিয়োগ দিয়েছে। কিন্তু ৫ বছর পর নারগিস আরা রুবি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে গোপন সমঝোতার মাধ্যমে অবৈধভাবে (যথাযথ প্রক্রিয়া ছাড়াই) সরাসরি নিয়োগ নিয়েছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, নারগিস আরা রুবির নিয়োগ অবৈধ হলেও একই অফিসের হিসাবরক্ষক ‘ক্ষমতাধর’ স্বামীর দাপটে সবচেয়ে বেশি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন তিনি। এক্ষেত্রে তিনি সরকারি নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে সমাজ কল্যাণ অফিসার পদটি (নিজ বেতনে) দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে আঁকড়ে ধরে আছেন। এর আগে ব্লাড ব্যাংকে (যেখানে প্রতিমাসে মোটা অংকের টাকা কমিশন পাওয়া যায়) ও পরিচালকের পিএ হিসেবে কাজ করেছেন বহুদিন। এসব নিয়ে বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। কিন্তু ক্ষমতাধর স্বামীর কারসাজিতে তিনি সবসময় ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন।
এদিকে, নারগিস আরা রুবির ক্ষমতাধর স্বামী, রামেক হাসপাতালের হিসাবরক্ষক মহিউদ্দিন মারুফের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগে অবৈধ নিয়োগ লাভ ও নামে-বেনামে বিপুল অবৈধ অর্থ-সম্পদ অর্জনের কথা উত্থাপন করা হয়েছে।
অভিযোগ মতে, মহিউদ্দিন মারুফও নিয়োগ প্রক্রিয়া ছাড়াই ১৯৮৫ সালে নি¤œমান সহকারী কাম টাইপিষ্ট পদে রামেক হাসপাতালে যোগদান করেন। চাকরির শুরু থেকে অদ্যাবধি পর্যন্ত তিনি রামেক হাসপাতালের টেন্ডার সংক্রান্ত যাবতীয় কাজের দায়িত্ব পালন করছেন। এ সুযোগে তিনি ঠিকাদারদের সাথে সিন্ডিকেট করে অঢেল অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েছেন।
অভিযোগে বলা হয়েছে, বিভিন্ন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত হয়ে রামেক হাসপাতালে বেনামে ঠিকাদারী করেন হিসাবরক্ষক মহিউদ্দিন মারুফ নিজেই। এছাড়া দরপত্র মুল্যায়ণ ছাড়া পিপিআর আইন এবং বিধিমালা লংঘন করে ইচ্ছামত বিভিন্ন দামি
যন্ত্রপাতি ও মালামাল কেনার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে ২০১৩ সালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে লিখিত অভিযোগ দেন স্থানীয় ‘মেসার্স আব্দুল্লাহ এন্টারপ্রাইজ’ নামক ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাকে বদলী করা হয়েছিল। কিন্তু অদৃশ্য ক্ষমতার জোরে ওই বদলির আদেশ বাতিল করিয়ে রামেক হাসপাতালেই থেকে যান তিনি। এছাড়া গতবছর রাজশাহী মেট্টোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) গোয়েন্দা (ডিবি) শাখার সদস্যরা ইয়াবাসহ রামেক হাসপাতালের হিসাবরক্ষক মহিউদ্দিন মারুফকে আটক করেন। কিন্তু এ যাত্রায়ও অদৃশ্য ক্ষমতার জোরে তিনি জেলহাজতে যাবার আগেই মুক্ত হন বলে অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে।
জানতে চাইলে রাজশাহী বিভাগীয় (স্বাস্থ্য) পরিচালক ডা. আব্দুস সোবহান রামেক হাসপাতালের সমাজ কল্যাণ অফিসার রুবী ও তার স্বামী হিসাবরক্ষক মারুফের বিরুদ্ধে অবৈধ নিয়োগ ও অর্থ-সম্পদ অর্জনের অভিযোগ তদন্তে কমিটি গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, বিধি অনুযায়ী বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ও বোর্ড গঠন ছাড়া ছাড়া কোনো সরকারী নিয়োগ বৈধ হয় না। নিয়োগপত্রে ‘Subject to Satisfactory political antecedence and physical fitness and health” (সন্তোষজনক রাজনৈতিক পরিচয় ও শারীরিক সুস্থতা)’ এধরণের কথাবার্তা লেখার কোনো নজির নেই। বিষয়টি তার দপ্তরের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. আব্দুর রহমানের নেতৃত্বাধীন দুই সদস্যের কমিটি তদন্ত করছেন। কমিটিকে সুপারিশসহ প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। যা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে উপস্থাপন করা হবে।
খবর২৪ঘণ্টা/এমকে