স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শহীদ শামসুজ্জোহা হলে ‘জোহা হল কথা কয়’ শীর্ষক নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে। মঙ্গলবার (৯ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৬টায় বাংলাদেশ সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক ভার্চুয়ালি নাটকটির উদ্বোধন করেন।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক নাট্যজন লিয়াকত আলী লাকির ভাবনা ও পরিকল্পনায় এবং সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে নাটকটি মঞ্চস্থ হয়। নাটকটিতে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের জোহা হলের নির্যাতনের এক নির্মম সত্য চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। নাটকটিতে ২২১ জন অংশগ্রহণকারী কলাকুশলী ছিলেন।
৭১ মিনিট ব্যাপ্তি এই নাটকের শুরুতে দেখা যায়, রাজশাহীর আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে নারী-পুরুষকে ধরে জোহা হলে নিয়ে আসে পাকিস্তানি হানাদারেরা। কাউকে আনা হয় গলায় লাঠি ঠেকিয়ে, কাউকে আবার মাথার চুল ধরে টেনে-হিচড়ে। নির্যাতিতদের চিৎকারে প্রকম্পিত জোহা প্রতিটি আঙিনা। পাকিস্তানি সেনারা তখন মেতেছেন নিষ্ঠুরতার উল্লাসে, কণ্ঠে তাদের পৈশাচিকতার সুর, মুখে মানবিকতা বিবর্জিত অট্টহাসি। নাটকটির প্রায় পুরোটা জুড়েই পাকিস্তানি বাহিনীর নৃশংসতার দৃশ্য স্পষ্ট।
মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের গণকবরের সাক্ষী বহনকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের বধ্যভূমি সম্পর্কে নাটকটির শেষ দিকে বলতে শোনা যায়, ‘ওখানে (বধ্যভূমিতে) যারা যায়, তারা কেউ জানে না এই মাটির কান্না। শুনেছি, ওখানে যাঁরা ঘুমিয়ে আছেন, তাঁদের পরিবারের কেউ খোঁজ রাখে না। কী কষ্ট তাঁদের! শুনেছি, ওখানে অনেকেই জুতা পায়ে ওঠে বেদিতে। জোহা হলে নেই কোনো স্মৃতি সংগ্রহশালা। চিরচেনা এই জোহা হল যে কত অব্যক্ত কথা কয়!’
নাটকটির নির্দেশক আতাউর রহমান রাজু জানান, নাটকটিতে মুক্তিযুদ্ধের সময় জোহা হলের বারান্দা, বেলকনি, রাস্তা এবং চতুর্দিকে যা যা ঘটেছে তা হুবহু চিত্রিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। সে সময়ের নির্যাতনের চিত্র বর্তমান প্রজন্মকে দেখানো ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সবার মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্যই এই নাটকের আয়োজন। এই নাটকটির মাধ্যমে তরুণ শিক্ষার্থীদের মনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, স্বদেশপ্রেম ও মানবতাবোধ গ্রথিত হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
নাটক শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, একটি নাটক শত বক্তব্য ও সেমিনারের চেয়ে বেশি বার্তা দিতে পারে। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও চেতনা এমন নাটকের মাধ্যমে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে যাবে এটাই প্রত্যাশা।
এছাড়া নাটকে আরো উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী মো.জাকারিয়া ও অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম, বিশিষ্ট নাট্যকার অধ্যাপক মলয় ভৌমিক, রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. হুমায়ুন কবির, রাজশাহী জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ প্রায় ৪ হাজার দর্শক উপস্থিত ছিলেন।