নিজস্ব প্রতিবেদক :
গত কয়েকদিন ধরেই রাজশাহী মহানগরীসহ এর আশে-পাশের জেলা-উপজেলাগুলোতে হাড় কাঁপানো কনকনে শীত পড়েছে। হিমেল হাওয়ায় কনকনে তীব্র শীতে এ অঞ্চলের মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রার মান ব্যহত হচ্ছে। বুধবার চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস। যার কারণে হত-দরিদ্রসহ সাধারণ মানুষরা ব্যাপক ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন।
তীব্র শীতে সবচাইতে বেশি সমস্যার মধ্যে পড়েছে শিশু ও বৃদ্ধরা। হাঁড় কাঁপানো শীতে এ সময়টাতে শিশু ও বৃদ্ধগণ বিভিন্ন শীত জনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। শীত জনিত রোগে শিশুরা প্রধানত যেসব রোগে আক্রান্ত হচ্ছে সেগুলো হলো নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, খিচুনি ও শ্বাসকষ্ট এবং বৃদ্ধরা শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে রামেক হাসপাতালে শিশু ও বৃদ্ধসহ অন্তত শতাধিক রোগী ভর্তি হয়েছে।
বুধবার সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা পৌণে ৭টা পর্যন্ত পর্যন্ত রামেক হাসপাতালের শিশু ও মেডিসিন ওয়ার্ডে অন্তত শতাধিক রোগী ভর্তি হয়েছে।
হাসপাতালে ভর্তি হওয়া শিশুদের মধ্যে বেশির ভাগই নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, খিচুনি ও শ্বাসকষ্ট এবং বৃদ্ধরা ডায়রিয়া, হার্টের সমস্যা ও শ্বাসকষ্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছেন। হাসপাতালে ভর্তি হওয়া শিশুদের বয়স যথাক্রমে ১ দিন থেকে ২২দিন, ১ বছর থেকে ৫ বছর এবং বৃদ্ধদের বয়স ৪৫ থেকে ৭৫বছরের মধ্যে।
রামেক হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, ওয়ার্ডের কোন বেড ফাঁকা নেই। প্রত্যেক বেডেই শুধু নয় ঠান্ডার দিনে কষ্ট করে মেঝেতেও বসে রোগীরা শিশু রোগীর অভিভাবকদের চিকিৎসা নিচ্ছেন। শীতের প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় শীত জনিত রোগের প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু শিশু ওয়ার্ডগুলোয় নয় মেডিসিন ওয়ার্ডগুলোর একই অবস্থা। এসব ওয়ার্ডগুলোতেও রোগীর চাপে ওয়ার্ডের বেড ও মেঝেসহ রোগীতে ভর্তি হয়েছে। এ জন্য চিকিৎসক ও নার্সদেরও বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। যাতে তারাও কোন বিশ্রামের সুযোগ পাচ্ছেননা।
রাজশাহী মহানগরীসহ এর আশে-পাশের এলাকা থেকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা কয়েকজন রোগীর অভিভাবকের সাথে কথা হলে, পুঠিয়া থেকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা শিশু রাহিমের মা জানান, গতকাল সকালে আমার ছেলের হঠাৎ করেই শরীর গরম হয়ে যায়। এ অবস্থা দেখে ভয়ে আমি দ্রুত তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসি।
গোদাগাড়ী থেকে চিকিৎসা নিতে আসা আরেক শিশু সামিয়ার মা জানান, দুপুরে আমার মেয়ে হঠাৎ করেই পাতলা পায়খানা করতে শুরু করে তাই ভয়ে আমরা দ্রুত তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসি। এদিকে নওগাঁ থেকে চিকিৎসা নিতে আসা আরেক শিশুর মা জানায়, সকালে আমার ছেলের হঠাৎ করেই সারা শরীর ঠান্ডা হয়ে যায়। এতে আমরা দ্রুত তাকে রামেক হাসপাতালে নিয়ে আসি। এভাবে বিভিন্ন এলাকা থেকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর আত্মীয়-স্বজনদের সাথে কথা বলে তাদের সমস্যার কথা জানা গেছে।
রামেক হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের কর্তব্যরত চিকিৎসকের সাথে কথা হলে তারা জানান, প্রচন্ড শীতের কারণে ও শিশু বৃদ্ধরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বিশেষ করে শিশুরা নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া ও খিচুনি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এবং বয়ষ্করা ডায়রিয়া ও শ্বাষকষ্ট রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।
নগরীর বাস টার্মিনালে ফুটপাতের পাশেই খালি গায়ে শুয়ে থাকা এক নারীর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, বাবারে এত ঠান্ডা আর সহ্য করা যাচ্ছেনা। একটা কম্বল পেলেও গায়ে দিয়ে কিছুটা ঠান্ডা থেকে রক্ষা পেতাম। একটা গরম কাপড়ের জন্য জীবনটা এবার গেল মনে হয়।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিস জানায়, বুধবার চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস এবং সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৩ দশমিক ৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস। সকাল ৬টায় বাতাসের আদ্রতা ছিল ৯৫ শতাংশ ও সন্ধ্যা ৬টায় বাতাসের আদ্রতা ছিল ৬৭ শতাংশ। তাপমাত্রার পরিমাণ আরো কমতে পারে বলে আবহাওয়া অফিস সূত্র আরো জানায়।
খবর২৪ঘণ্টা/এমকে