নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহী মহানগরীতে শিশুর সাথে যুবলীগ নেতা সুমনের বিকৃত যৌনাচার নিয়ে শিরোইল কলোনি এলাকায় উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। সুমনের পক্ষপাতিত্বেরও অভিযোগ উঠেছে চন্দ্রিমা থানার ওসি হুমায়ন কবিরের বিরুদ্ধে। এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলছেন, ঘটনার শুরু থেকেই চন্দ্রিমা থানার ওসি হুমায়ন কবির সুমনের পক্ষে কথা বলে যাচ্ছেন। বিভিন্ন সময় তিনি
সেই ভিডিওটি কাটিং করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন। অথচ মোবাইল ফোনে কথা বলার অডিও স্বীকারোক্তিও ফাঁস হয়ে গেছে। সুমনের সেই বিকৃত যৌনাচারের অডিও ক্লিপ নিয়ে দ্বিতীয় দফায় তোলপাড় শুরু হয়।
আবার যুবলীগ নেতা সুমনের পক্ষে কথা বলা শিরোইল কলোনী জামে মসজিদের ইমাম মুফতি মাওলানা মাইনুল ইসলাম আশরাফি দেওয়া মিথ্যা মামলা গ্রহণেরও অভিযোগ করছেন তারা। একের পর এক তিনি সুমনের হয়ে কথা বলছেন বলেও অভিযোগ করা হচ্ছে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে।
যুবলীগ নেতা সুমনের বিকৃত যৌনাচারের ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইতে শুরু করে। তখন সুমন দাবি করে, তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে এটা করা হয়েছে। কাটিং করে তার মাথা বসানো হয়েছে তাকে রাজনৈতিকভাবে হেও প্রতিপন্ন করার জন্য।
এরপর মহানগর যুবলীগের টনক নড়ে। গত এপ্রিল মাসের ২০ তারিখ রাজশাহী মহানগর যুবলীগের কার্যনির্বাহী কমিটির জরুরী সভায় সুমনের বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে ১৫ দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয় ও তার সকল সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করা হয়।
এর কয়েকদিন পরেই চন্দ্রিমা থানায় একটি জিডি করা হয়। জিডিতে তার ছেলেকে পাওয়া যাচ্ছেনা বলে এক নারী উল্লেখ করেন। সেই জিডির বিষয়টি ওসি হুমায়ন কবির স্বীকার করে বলেন, এক মহিলা তার ছেলেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা বলে জিডি করেছেন। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়টি যেতে না যেতেই যুবলীগ নেতা তৌহিদুল হক সুমনের যৌনাচার নিয়ে মোবাইলে কথা বলা নিজের স্বীকারোক্তির অডিও ক্লিপ ফাঁস হয়ে যায়। অডিও ক্লিপটি ফাঁস হয়ে গেলে আবারো দ্বিতীয় দফায় সমালোচনার মুখে পড়ে সুমন। সেই অডিও ক্লিপে তার স্বীকারোক্তির কথা শোনা যায়। যেটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভেসে বেড়ায়।
এদিকে, বিকৃত যৌনাচারের ভিডিওকে কেন্দ্র করে নগরীর শিরোইল কলোনী এলাকার মানুষ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। পক্ষে-বিপক্ষে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়।
এরই মধ্যে শিরোইল কলোনী জামে মসজিদের ইমাম মুফতি মাওলানা মাইনুল ইসলাম আশরাফি সুমনের পক্ষ নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলে বিতর্কের মধ্যে পড়েন। সুমনের পক্ষে কথা বলার বিষয়টি মসজিদের আওতাধীন মুসল্লিদের পছন্দ না হওয়ায় সামাজিকভাবে বসে ইমামকে মসজিদের ইমাম পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়।
অন্যদিকে শিরোইল কলোনী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিরঞ্জন প্রামানিকও সুমনের পক্ষে প্রচারণা শুরু করেন। পক্ষে কথা বলে তিনিও সমালোচনার মুখে পড়েন। ইমাম ও প্রধান শিক্ষকের সুমনের পক্ষ নিয়ে কথা বলায় এলাকাবাসীর মধ্যে চরম অসন্তোষ দেখা দেয়। এই দু’জন প্রকাশ্যে সুমনের পক্ষ নিয়ে প্রচারনা করেন।
ইমামকে বরখাস্ত করার পরও গতকাল শুক্রবার জুম্মার নামাযের আগে তিনি মসজিদে গিয়ে সুমনের পক্ষে কথা বলেন। এতে উপস্থিত মুসল্লিরা ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। এতে মসজিদে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে চন্দ্রিমা থানা পুলিশ মসজিদে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। ঘটনাস্থলে কি হয়েছে জানার জন্য ওসি হুমায়ন কবিরকে কল দেওয়া হলে তিনি বলেন, সেখানে কিছুই হয়নি। সেটা তেমন কিছুনা।
নামাযের পরে মসজিদের ইমাম মুফতি মাওলানা মাইনুল ইসলাম আশরাফি ওয়ার্ড কাউন্সিলর নুরুজ্জামান টিটুসহ ৮/৯ জনকে নামীয় আসামী ও অজ্ঞাতনামা আরো ৮/৯ জনকে আসামী করে একটি অভিযোগ দেয়।
এলাকাবাসীর নামে থানায় মিথ্যা অভিযোগ করার বিষয়টি জানতে পারলে শিরোইল কলোনীর বাসিন্দারা শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে চন্দ্রিমা থানা ঘেরাও করে ঝাড়ু মিছিল বের করে । তারা তাদের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান। সেই সাথে মসজিদের ইমাম ও শিক্ষকের কঠোর শাস্তির দাবি জানান তারা। সেখানে কাউন্সিলর নুরুজ্জামান টিটুসহ অন্যান্য এলাকাবাসী অবস্থান করে। দীর্ঘ সময় পরে তারা নিজ এলাকায় ফিরে আসে।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে থানা ঘেরাও করতে যাওয়া এক ব্যক্তি বলেন, মসজিদের ইমাম প্রকাশ্যে সুমনের পক্ষে কথা বলে প্রচারণা করে। যা অডিও ক্লিপের মাধ্যমে প্রমাণিত। অন্যদিকে এলাকাবাসীকে হয়রানি করার জন্য মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেছে। এগুলো উদ্দেশ্যে প্রণোদিত। তিনি আরো অভিযোগ করে বলেন, থানার ওসিও সুমনের পক্ষে কাজ করছে। যারা সুমনের বিপক্ষে কথা বলছে তাদের হয়রানি করতেই এই মামলা। ইমাম ও শিক্ষকের শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে আরেক ব্যক্তি বলেন, এমন চলতে দেওয়া যায়না। সত্য কথা বলার কারণে ভাল মানুষকে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। থানার ওসির কথাবার্তাও রহস্যজনক। তাই বিষয়টি নিয়ে পুলিশের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
চন্দ্রিমা থানার ওসি হুমায়ন কবির অভিযোগের কথা স্বীকার করে বলেন, কাউন্সিলর নুরুজ্জামান টিটুসহ ৮/৯ জন ও অজ্ঞাতনামা আরো ৮/৯ জনকে আসামী করে অভিযোগ করা হয়েছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চন্দ্রিমা থানায় স্থানীয়দের যাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, কাউন্সিলরসহ কিছু মানুষ থানায় এসেছিল। তারা তাদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া অভিযোগের বিষয়ে কথা বলছিল। এ ছাড়া অন্য কিছু নয়।
এ বিষয়ে বোয়ালিয়া ডিভিশনের উপ-পুলিশ কমিশনার আমির জাফর এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, থানার ওসির যুবলীগ নেতা সুমনের পক্ষে কথা বলার সুযোগ নেই। থানার ওসি প্রকৃত কথাই বলবে। বিষয়টি খোঁজ নেওয়া হবে।
খবর২৪ঘণ্টা/আর