নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজশাহী মহানগরীতে পাওনা টাকার দাবিতে জয়পুরহাটের ব্যবসায়ী ফজলে রাব্বি (২৮) কে গোডাউন ঘরে রাতভর আটকে রেখে মারধর করা হয়েছে। আহতবস্থায় শনিবার বিকেল ৫টার দিকে ওই ব্যবসায়ীকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহত ব্যবসায়ী জয়পুরহাট সদর উপজেলার চকমোহন নারায়নপাড়া এলাকার হেলালুদ্দিনের ছেলে। পাওনা টাকা পরিশোধ করে দেওয়ার পরে শিল্পনগর পুলিশ ফাঁড়িতে বসে রাব্বির কাছ থেকে স্বীকারোক্তি নেওয়া হয় যে তারা ভবিষ্যতে কোন আইনি ব্যবস্থা নিতে পারবে না বলেও অভিযোগ রয়েছে।
আহত ব্যবসায়ী রাব্বি অভিযোগ করে জানান, তিনি গত কয়েক মাস ধরে রহমান ট্রেড হাউজ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক আব্দুর রহমানের সাথে অটোরিক্সার ব্যাটারি কেনাবেচা করে আসছেন। ব্যবসায়ীক কারণে পরিচালক তার কাছে সাড়ে ২৯ হাজার টাকা পেত। কিন্তু তার সাথে নিয়মিত লেনদেন হতো। চলতি মাসের ১৩ সেপ্টেমবর নতুন কিছু ব্যাপারে এগ্রিমেন্ট করা হবে বলে জয়পুরহাট থেকে তাকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ডেকে পাঠান পরিচালক। এরপর রাব্বি ১৪ তারিখ শুক্রবার রাত ৭টার দিকে নগরীর সপুরা বিসিক এলাকায় অবস্থিত তার অফিসে যান। সেখানে যাওয়ার পর আব্দুর রহমান তাকে গোডাউন দেখার কথা বলে গোডাউনে নিয়ে গেলে হঠাৎ করেই ৬/৭ লোক তাকে রড দিয়ে মারধর শুরু করে। এ সময় তার সাথে রংপুরের আতাউর ও আরেক ব্যবসায়ী কুলন্দা মোহন রায় ছিলেন। তাদেরকেউ মারধর করে টাকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু ১ লাখ টাকার দাবিতে তারা রাব্বিকে বেশ কয়েক দফায় রড দিয়ে মারধর করে। এতে তার পা দিয়ে রক্তপাত হয়। রাতে তারা তাকে ওষুধ ও ব্যান্ডেজ কিনে দেয়। তারপর তারা সেই গোডাউন ঘরেই সবাই মিলে জুয়া খেলে গভীর রাত হলে চলে যায়। তাকে গোডাউনে পাহার দেওয়ার জন্য দু’জনকে রাখা হয়। যাদের রাখা হয় তারা দেশীয় অস্ত্রের ভয় দেখায়।
নিবার সকালে রাব্বি বিষয়টি মোবাইল ফোনে তার ফুফু রাজিয়া সুলতানাকে জানায়। রাজিয়া সুলতানাকে জানালে রাজিয়া বিষয়টি বোয়ালিয়া থানার ওসিকে জানায়। বোয়ালিয়া থানার ওসির নির্দেশে শিল্পনগর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মাসুদ তাকে উদ্ধার করে রামেক হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ফাঁড়িতে নিয়ে আসে। দুপুরে রাব্বির স্ত্রী জয়পুরহাট থেকে টাকা নিয়ে আসলে ফাঁড়িতে বসেই পরিশোধ করা হয়। কিন্তু ওই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক তার লোকজনসহ পুলিশের সামনেই ভয়ভীতি দেখিয়ে মারধরে কোন আইনত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেনা এমন ফাঁকা কাগজে স্বীকারোক্তি নেয়। রাব্বি এমন স্বীকারোক্তি দিতে না চাইলে তারা পুলিশের সামনেই ভয় দেখায়। শুধু তাই নয় পুলিশের এসআই মাসুদও তাদের পক্ষ হয়ে ভয় দেখায় বলে রাব্বির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে।
রাবি অভিযোগ করে আরো বলেন, আমি তার সাথে ব্যবসা করতাম। টাকা সেটা ভালভাবে বললেই দিয়ে দিতাম। কিন্ত আটকে রেখে মারধর করার দরকার ছিলনা। আমাকে রড দিয়ে পিটিয়েছে তারা। পুলিশের সামনে হুমকি দিলে পুলিশও নিশ্চুপ ছিল। এসআই মাসুদ আমাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে বলে, পুলিশ সবকিছু করতে পারে। সাদা কাগজে সই দিয়ে যেতে হবে। পরে বাধ্য হয়ে সই দিয়ে চলে আসি।
আইনি সহায়তা নিয়ে কাজ করা সংগঠন নবদিগন্ত মহিলা উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক রাজিয়া সুলতানা অভিযোগ করে বলেন, তারা আমার ভাতিজাকে রাতভর আটকে রেখে মারধর করেছে। তারা পাসহ শরীরের অন্যান্য অঙ্গে আঘাত করেছে। টাকা দেওয়া হলে আমরা পরবর্তীতে আইনি কোন পদক্ষেপ নিবনা এমন স্বীকারোক্তির জন্য সাদা কাগজে সই করিয়ে নিয়েছে। পুলিশের সামনে লোকজন আমাদের সাথে খারাপ আচরণ করলেও পুলিশ চুপ ছিল। এসআই মাসুদ আমাদের হুমকি দিয়ে বলেন, পুলিশ সবকিছু করতে পারে। সই দিয়েই এখান থেকে যেতে হবে। নাহলে চালন দিয়ে দেবো। আইনের লোকের থেকে এমন ব্যবহার আশা করা যায় না। এ সময় তার সহকারী আসমা খাতুনের সাথে চড়াও আচরণ করা হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি। রহমান ট্রেড হাউজের প্যাডে দেওয়া নম্বরে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
বিষয়ে শিল্পনগর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মাসুদ তার বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, পুলিশ কোন মীমাংসা করতে পারে না। আমি কাউকে উদ্ধার করেনি। এ ছাড়া যদি কোন সাদা কাগজ আপনাকে তারা দেখিয়ে থাকে আপনি ব্যবস্থা নেন। আপনার সামনেই হুমকি দেওয়া হয়েছে এবং পুলিশ চুপ ছিল এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এগুলো সত্য না। আমি কারো সাথে খারাপ আচরণ করিনি।
খবর ২৪ ঘণ্টা/এমআর