রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের সাথে প্রতারণা ও করে অর্থ আদায় চক্রের মূল হোতা ফজলুর রহমান ওরফে পলাশ (৪৮) সহ ১৬ জন দালালকে আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ১০টা থেকে দুপুর পৌণে ১২ টা পর্যন্ত নগরীর লক্ষীপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে নগর গোয়েন্দা শাখা। দালাল চক্রের মূল হোতা পলাশের নগরীর লক্ষ্মীপুর এলাকায় একটি ফার্মেসি ও একটি ডায়াগনিক সেন্টার রয়েছে। এই ফার্মেসি ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার সম্পন্ন দালালদের উপর নির্ভর করে চলে । হাসপাতালের অধিকাংশ দালাল তার ডায়াগনস্টিক এবং ফার্মেসীর হয়ে কাজ করে।
এ তথ্য নিশ্চিত করে রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) উপ-পুলিশ কমিশনার আরেফিন জুয়েল জানান, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনাকালীন সময়ে চিকিৎসা সেবা দেয়া হবেনা এমন মিথ্যা তথ্য দিয়ে অসহায় ও দরিদ্র রোগীদের বেসরকারী ক্লিনিকে চিকিৎসা সেবার প্রলোভনে টাকা হাতিয়ে নেয়ায় প্রতারক চক্রের মূল হোতাসহ ১৬ জনকে আটক করা হয়েছে। এ বিষয়ে নগরীর রাজপাড়া থানায় একটি প্রতারণা মামলা দায়ের করেছেন সাব্বির হোসেন (২৮) নামের এক যুবক। তিনি নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানাধীন শিরোইল মহলদারপাড়া এলাকার সিরাজুল ইসলামের ছেলে।
আটক দালাল ও প্রতারকরা হলেন, নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানাধীন হেতেমখান লিচু বাগান এলাকার মৃত আনছার আলীর ছেলে ফজলুর রহমান ওরফে পলাশ (৪৮), নগরীর সাগরপাড়া এলাকার খোকন শেখের ছেলে সজিব শেখ (২৬), বোয়ালিয়া থানার সাধুরমোড় এলাকার মুনসুরের ছেলে মুন্না (৩২), আবুল হোসেনের ছেলে বাদল হোসেন (৩৮), চন্ডিপুরের আজিমের ছেলে লালন মিয়া (৩৮), মৃত নিজামের ছেলে আমিনুল (৫০), বহরমপুরের মৃত এলাহীর ছেলে আনারুল (৫০), দাসপুকুরের মৃত আবুল কাশেমের ছেলে মাসুদ রানা (৩০), ভাটাপাড়া এলাকার নুরুল ইসলামের ছেলে জাহিদ হাসান ওরফে রাকিব (২৫), লক্ষীপুর ঝাউতলা এরাকার মৃত ছগিরের ছেলে
আনিছুর রহমান আনিছ (৫৫), লক্ষীপুর কাঁচাবাজার এলাকার সেলিম রেজার ছেলে মনোয়ার হোসেন (২৮), হামিদের ছেলে নাসির বিন আল নাদিম (২২), লক্ষনদাসের ছেলে প্রসাদ (২৪), কাজিহাটা এলাকার আব্দুস সবুরের ছেলে আনোয়ার হোসেন ওরফে মাসুদ (৩২), কাশিয়াডাঙ্গা থানার নবগঙ্গা এলাকার মৃত সজব আলীর ছেলে আরব আলী (৫৫) ও রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের মৃত সইজুদ্দিনের ছেলে আবু সাইদ (৫৯)। এছাড়াও এজাহারে আরো উল্লেখ করা হয়, এসব দালাল ও প্রতারকদের নেতা নগরীর রাজপাড়া থানার বহরমপুর এলাকার পলাতক রুবেলসহ অজ্ঞাতনাম আরো ৫/৭ জন। তারা প্রতারণা ও চাঁদাবাজি করে থাকে।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, শারীরিক অসুস্থতার কারনে তিনি গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার দিকে নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানাধীন শিরোইল মহলদারপাড়া এলাকার সিরাজুল ইসলামের ছেলে সাব্বির (২৮) রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগের টিকিট কাউন্টারে গিয়ে টিকিট কাটেন। এ সময় পাশে দাঁড়ানো ৩ জন তাকে বলে করোনাকালীন হওয়ায় হাসপাতালে কোনো চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে না। তাদের সাথে গেলে নিজস্ব ক্লিনিকে কম খরচে চিকিৎসা করে দিবে। ছদ্মবেশী দালালদের কথায় তিনি তাদের সাথে গেলে তারা লক্ষীপুর মোড়স্থ এশিয়ান ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সামনে পৌঁছালে তারা তাকে বলে যে, ৩ হাজার টাকা দেন। ভেতরে চিকিৎসক আছে। টাকা নিয়ে তারা ভেতরে চলে যায়। এর কয়েক মিনিট পর তারা বের হয়ে এসে আরো ২ হাজার টাকা দাবি করে এবং বলে আরো টেস্ট করাতে হবে। ভুক্তভোগী সাব্বির তখন জানান যে, তার কাছে আর
টাকা নেই। টাকা ফেরত দেন চিকিৎসা না নিয়ে চলে যাবো। এ সময় দালালরা তাকে জানায় যে, টাকা ফেরত দেয়া যাবেনা। টাকা কাউন্টারে জমা দেয়া হয়ে গেছে। আরো ২ হাজার টাকা তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা করো। এতে তাদের সাথে আমার কথা কাটাকাটি শুরু হলে পাশেই দাঁড়িয়ে আরো ৫/৭ লোক দালালদের সাথে যুক্ত হয়ে তাকে গালি দিতে শুরু করে। টাকা নাদিলে তাকে আটকে রেখে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকিও দেয়। এ সময় তিনি টাকা ফেরত নিবেনা বলে জানালে দালালরা তাকে ছেড়ে দেয়। ছাড়া পেয়ে তিনি ডিবি অফিসে গিয়ে মৌখিক অভিযোগ দেন। অভিযোগের পর ডিবি পুলিশ প্রথমে মূল হোতাসহ প্রথমে ৩ জন ও পরে তাদের শনাক্ত করে দেয়া ১৩ জনসহ মোট ১৬ জনকে আটক করে ডিবি পুলিশ।
আটককৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানিয়েছে যে, তারা দালাল, প্রতারক, অর্থ আত্মসাৎকারী ও চাঁদা আদায়কারী চক্রের সদস্য। তারা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের সাথে প্রতারণা করে বাইরের নি¤œমাণের ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে গিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করে। তাদের কথা শুনলে গুম ও খুনেরও হুমকি দেয়া হতো। পরে সেই টাকা ভাগ বাটোয়ারা করে নেয়া হতো। বৃহস্পতিবারের ঘটনায় সাব্বিরের খোয়া যাওয়া ৩ হাজার টাকার মধ্যে ২ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে ফজলুর রহমান পলাশের কাছ থেকে। নগর গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) উপ-পুলিশ কমিশনার আরেফিন জুয়েল বলেন, হাসপাতাল দালাল ও প্রতারকমুক্ত রাখতে গোয়েন্দা পুলিশের অভিযান অব্যাহত থাকবে। আটককৃতদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
এস/আর