বিশেষ প্রতিনিধি: থার্টি ফাস্ট নাইট উপলক্ষে বিষাক্ত মদ খেয়ে দুই দিনের অকালে ঝরেছে ৬ যুবকের প্রাণ। চোখের সামনে তরতাজা যুবক ছেলের মৃত্যু দেখে শোকে হতবিম্বল হয়ে পড়েছেন তাদের বাবা-মা ও নিকট স্বজনরা। যদিও থার্টি ফাস্ট নাইট উপলক্ষে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে বিভিন্ন নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। সেই নির্দেশনার মধ্যে একটি নির্দেশনা ছিল লাইলেন্সপ্রাপ্ত মদের বারগুলোও বন্ধ থাকবে। কিন্ত অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন কৌশলে সেদিনও মদ বিক্রি করা হয়েছে। তারপরও নিহতের স্বজন ও নগরের সচেতন মহলের মানুষজন দাবি করে বলছেন, পুলিশের পক্ষ থেকে আরো কঠোর নজরদারি ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করলে মাদক ব্যবসায়ীরা হয়তো ক্রেতাদের এ বিষাক্ত মদ সরবরাহ
করতে পারতোনা। যারা খাওয়ার জন্য ক্রয় করেছিল তারাও হয়তা দল বেঁধে এ ধরণের বিষাক্ত মদ খেতে পারতোনা। তারা আরো দাবি করে বলছেন, শিক্ষানগরী রাজশাহীতে সাম্প্রতিক সময়ে মাদক ব্যবসায়ীদের সিণ্ডিকেট আবারো মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। তারা নতুন নতুন কৌশলে বিভিন্ন ধরণের মাদকদ্রব্য মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। সূত্র বলছে, এসব কাছে বিভিন্ন বয়সের তরুণ-তরুণী এমনকি স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদেরও ব্যবহার করা হচ্ছে।
থার্টি ফাস্ট নাইটে নির্দেশনা না মেনে অনেক স্থানেই গভীর রাত পর্যন্ত আনন্দ উল্লাস ও উচ্চসরে মাইক বাজাতে শোনা গেছে। অনেক মানুষ অভিযোগ করছেন, আরএমপির নির্দেশনা পুরোপুরি না মানলেও পুলিশের পক্ষ থেকে তেমনভাবে কোন ব্যবস্থা নেয়া
হয়নি বা নজরদারি তেমন চোখে পড়ার মতো ছিলনা।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, শুধু থার্টিফার্স্ট নাইট নয় বছরের অন্যান্য বিষয় দিনগুলোতেও এ ধরনের কার্যকলাপ চলছে। বিভিন্ন এলাকায় এরা এ ধরনের উপকরণ দিয়ে মদ বানাচ্ছে। তাই পুলিশের পক্ষ থেকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি।
থার্টি ফাস্ট নাইটে রেক্টিফাইড স্পিরিটনহ অন্যান্য উপকরণ মিশ্রিত অবৈধ মদ খেয়ে দুই দিনে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এখনো রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫ জন চিকিৎসাধীন রয়েছে। তারা এখনো সুস্থ হতে পারেননি। মদ খেয়ে যাদের মৃত্যু হয়। তাদের স্বজনরা তথ্য গোপন করে চিকিৎসা তাদের চিকিৎসা করাচ্ছিলেন। যদিও চিকিৎসকরা পরে বিষয়টি জানতে পারেন। ৬ জনের মৃত্যুর বিষয়টি ছড়িয়ে পড়লে নগর জুড়ে বিষয়টি টক অব দ্যা টাউনে পরিণত হয়।
যাদের মৃত্যু হয়েছে তারা হলেন, রাজশাহী মহানগরীর কাদিরগঞ্জ দড়িখরবনা এলাকার মৃত সেলিমের ছেলে মোহাম্মদ মুন আহম্মেদ (১৮), নগরীর হাতেমখাঁন এলাকার মৃত. লুৎফুর রহমানের ছেলে তুহিন (২৬), হোসনিগঞ্জ এলাকার আইনুল ইসলামের ছেলে ফাইসাল (২৮), রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার শান্তাপাড়া গ্রামের রফিকুল ইসলাম সজল (২৫) ও নগরীর বাকির মোড় এলাকার উত্তমের ছেলে সাগর (২৫) ও নগরীর দড়িখড়বোনা এলাকার মাইনুল ইসলামের ছেলে ইসাতুল ইসলাম বিজয় (২২)। সবশেষে রোববার দুপুরে ইসাতুলের রামেক হাসপাতালের ইনসেনটিভ কেয়ার ইউনিট আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়।
নিহতের বাবা মাইনুল ইসলাম খবর ২৪ ঘন্টাকে বলেন, যুবক ছেলেকে হারিয়ে আমরা শোকে কাতর হয়ে পড়েছি। থার্টি ফাস্ট নাইটে ছেলে বন্ধুদের সাথে উপশহর নিউমার্কেট এলাকার একটি
জায়গায় বিষাক্ত মদ খেয়েছিল বলে পরে জানতে পারি। শুক্রবার দুপুরে বিজয় জুম্মার নামায পড়তে যায়নি। পরে বমি করেছে বেশ কয়েকবার। শনিবার সকালে বেসকারী হাসপাতালে ভর্তি করি। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাকে রামেক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। রোববার সকালে রামেক হাসপাতলে নেয়া হলে তাকে তাৎক্ষণিক হাসপাতালের আইসিইউতে নেয়া হয়। আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুরে তার মৃত্যু হয়।
আমার তরতাজা যুবক ছেলের মৃত্যু যাদের কারণে হয়েছে তাদের কঠোর শাস্তির দাবি করছি। ছেলের মৃত্যুর জন্য কাকে দায়ী করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যারা মদ বিক্রি করেছে তারাই প্রকৃত দায়ী। যাতে এ সমাজ মাদক মুক্ত হয়। কাউকে আর এভাবে জীবন দিতে না হয়। তিনি আরো বলেন, আমাদের পাড়ার আরো কয়েকজনের মৃত্যু ও বেশ কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়ে রয়েছে। প্রশাসনের লোকজনকে আরো কঠোরভাবে মাদক দমনের জন্য আহবান জানাচ্ছি। বিশেষ দিনগুলোতে পুলিশের কঠোর নজরদারিরও দাবি জানাচ্ছি। নাম না প্রকাশ করার শর্তে নিহতের
আরেক স্বজন বলেন, থার্টি ফাস্ট নাইটের আগেই যদি পুলিশ অভিযান চালিয়ে এসব মদ বিক্রেতাদের আওতায় নিয়ে আসতো তাহলে এমন ঘটনা হয়তো দেখতে হতোনা। ওই রাতেও যদি পুলিশের কঠোর মনিটরিং থাকতো তাও হয়তো ছেলেরা মদ খাওয়ার সুযোগ পেতোনা। তাই মাদক দমনে পুলিশের আরো কঠোর ভূমিকা ও দোষীদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে আরএমপির উদ্ধর্তন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। নগরবাসি বলছেন, শান্তির নগরীতে মাদক ব্যবসায়ীরা অশান্তি ও অরাজকতা সৃষ্টি করছে এটা কোনভাবেই কাম্য নয়। মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আরো কঠোর অভিযানের দাবি জানাচ্ছি। যাতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়।
এদিকে, ৬ যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় ৪ জনকে আটক করেছে পুলিশ। নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। আটককৃৃৃরা হলো, নগরীর বোয়ালিয়া থানাধীন সাগরপাড়া এলাকার মৃৃত পবিত্র শিংয়ের ছেলে পরিমল সিং (৬০), হাসেম আলীর ছেলে সাজু (৩০), পরিতোষের ছেলে বাপ্পা সিং (২৮), সিপাইপাড়া এলাকার মৃত আবদুর রউফের ছেলে ইফতেখার হোসেন ওরফে সুমন (৫০)। এ সময় তাদের কাছ থেকে মদ তৈরির বিভিন্ন উপকরণ উদ্ধার করা হয়েছে।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (সদর) গোলাম রুহুল কুদ্দুস সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, গ্রেফতারকৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে তারা অতিরিক্ত লাভের আশায় বিদেশী মদের সাথে রেক্টিফাইড স্পিরিটসহ অন্যান্য উপকরণ মিশিয়ে এক বোতলকে একাধিক বোতলে পরিণত করেছিলো এবং এই অবৈধ মিশ্রিত মদ মৃত ও অসুস্থদের কাছে বিক্রি করেছিল।
এস/আর