গত ৪ দিন আগেই শুরু হয়েছে সিয়াম-সাধনা ও আত্মশুদ্ধির মাস পবিত্র মাহে রমজান। এ মাসে আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য অর্জনের জন্য মুসলমানরা রোজা পালন করে থাকেন। অন্যান্য বছরের থেকে এবারের মাহে রমজান একটু আলাদা। করোনা মহামারির কারণে ভীতি ও আতঙ্কের মধ্যেই ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা রোজা পালন করছেন। অন্যান্য বছর রোজায় ইফতারি আয়োজনে রোজাদাররা বিভিন্ন পদের খাবার দিয়ে ইফতারি পসরা সাজান। কিন্ত এবারের প্রেক্ষাপটে সেটি করতে পারছেন না। করোনা থেকে বাঁচতে রোজাদাররা যতটুকু সম্ভব ভাজাপোড়া থেকে কিছুটা দূরে থাকার চেষ্টা করছেন। এ কারণে এই রমজানে ফলের চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ।
তারমধ্যে অন্যতম চাহিদার শীষে রয়েছে গ্রীষ্মের রসালো ফল তরমুজ। রোজা থেকে সারাদিনের ক্লান্তি দূর করতে ও একটু প্রশান্তি পেতে ইফতারিতে অন্য পদের সাথে তরমুজ প্রাধান্য পাচ্ছে। প্রায় বাড়িতেই ইফতারি আয়োজনে তরমুজ থাকছে। যদিও রোজা শুরু হওয়ার পর তরমুজের দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ থেকে ১২ টাকা পর্যন্ত। শুধুমাত্র রোজাকে কেন্দ্র করে রসালে ফল তরমুজের দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ক্রেতাদের অভিযোগ, রোজায় তরমুজের চাহিদা বাড়ায় পরিকল্পিতভাবে দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। যাতে সব শ্রেণীর মানুষ তরমুজ কিনে খেতে পারে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছরের মার্চ মাসের শুরুতে রাজশাহী মহানগরীর বাজারগুলোতে গ্রীষ্মের রসালো ফল তরমুজ আসতে শুরু করে। তখন তরমুজের দাম ক্রেতাদের নাগালের বাইরে ছিল। সে সময় প্রতি কেজি তরমুজ ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হয়। তরমুজগুলো বরিশাল থেকে রাজশাহীতে এসেছিল। অন্যান্য বছর বরিশালের তরমুজ পরে এলেও এবার এসেছে অগ্রিম।
দাম বেশি হওয়ার কারণে এই তরমুজ সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরেই থেকে যাচ্ছে। নিম্ন আয়ের মানুষেরা তরমুজ ছুঁতেও পারছেন না। চলতি এপ্রিল মাসের শুরু থেকে তরমুজ ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হতে শুরু করে। এরমধ্যেই ১৪ তারিখ থেকে শুরু হয় পবিত্র মাহে রমজান মাস। এবার অন্যান্য ইফতার সামগ্রী
সেভাবে বিক্রি না হওয়ায় ও করোনা মহামারির কারণে নগরবাসী ভাজাপোড়া থেকে কিছুটা মুখ ফিরিয়ে নেয়ায় ইফতারে ফলের চাহিদা বাড়ে। অন্যান্য ফলের পাশপাশি সামর্থ্যবান ও মধ্যবিত্তরা তরমুজ রাখছেন ইফতারিতে। কিন্ত দাম বেশি হওয়ার কারণে সেগুলো কম আয়ের মানুষজন ছুঁয়ে দেখতেও পারছেন না। রমজান মাসে এ ফলটির চাহিদা বাড়ার সাথে সাথে দামও বেড়েছে। মাত্র কয়েকদিন আগেও রাজশাহী মহানগরীর বাজারগুলোতে তরমুজ প্রতি কেজি ৩৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। এখন সেই তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা কেজিতে। দাম করে বা কম দামে কেউ তরমুজ নিতে পারছেন না। এ নিয়ে ক্রেতাদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। বাজার মনিটরিংয়ের মাধ্যমে দাম ক্রেতাদের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসার জন্য সাধারণ কম আয়ের মানুষজন আহবান জানিয়েছেন।
তরমুজ কিনতে আসা আব্দুল্লাহ নামের এক ব্যক্তির সাথে কথা হলে তিনি বলেন, গত ২/৩ দিন আগেও বাজারে তরমুজের দাম কম ছিল। কিন্ত হঠাৎ করেই শুনছি এখন তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা কেজিতে। দাম করার কোনো সুযোগ নেই। রাহিম নামের আরেক ব্যক্তি বলেন, দাম যাই যোক রসালো ফল হওয়ায় ইফতারে তরমুজ রাখতে হচ্ছে। পরিবারের সদস্যরাও এবার তরমুজ খাচ্ছে। দামটা আরেকটু কম হলে সুবিধা হতো। মুক্তার নামের আরেক ক্রেতা বলেন, দম সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকলে সবাই কিনে খেতে পারবে। নাম না প্রকাশ করার শর্তে এক নারী বলেন, ইফতারে তরমুজ খেতে ভালো লাগছে। মৌসুমের শুরু হওয়ায় এখন তরমুজের স্বাদ রয়েছে। তার মতো অনেকেই ইফতারি আয়োজনে তরমুজ রাখছে। তরমুজ বিক্রেতাদের সাথে কথা হলে তারা বলেন, যখন কম দামে তরমুজ পাইকারি বাজারে কেনা যায় তখন কম দামেই বিক্রি করা হয়। পাইকারি বাজারে দাম বাড়লে খুচরা বাজারেও এর প্রভাব পড়ে। পাইকারি বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় একটু দাম বেড়েছে। দাম কমলে কম দামেই বিক্রি করা হবে।
এস/আর