বিশেষ প্রতিবেদক : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৩০ ডিসেম্বর। ভোটগ্রহণ উপলক্ষে ইতিমধ্যেই প্রার্থীরা নিজ নিজ প্রতীকের পক্ষে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন। এরমধ্যে রাজশাহীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আসন রাজশাহী মহানগর এলাকা নিয়ে গঠিত রাহশাহী-২ সদর। এ আসনটি রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের ৩০টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। বিভিন্ন কারণে এ আসনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ আসনটিতে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র ও এমপি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপি মনোনীত এমপি প্রার্থী মিজানুর রহমান মিনু, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী ফয়সাল হোসেন, সিপিবির প্রার্থী এনামুল হক ও মহাজোটের প্রার্থী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন
বাদশা। প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই প্রত্যেকটি দলের এমপি প্রার্থীরা নগরজুড়ে পোস্টার, ব্যানার ও মাইকিংয়ের মাধ্যমে প্রচার-প্রচারণা ও গণসংযোগ করে ব্যস্ত পার করছেন। উদ্দেশ্য একটাই প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীকে হারিয়ে বিজয় অর্জন করা। প্রত্যেকটি প্রার্থী নিজ নিজ দলের নেতাকর্মী নিয়ে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরুর দিন থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা পাল্টা হামলাসহ অন্যান্য ঘটনা ঘটলেও এখনো এখানে রাজনৈতিক সৌহার্দ্য সম্প্রিতী রয়েছে। বিভিন্ন স্থানে হামলার হামলার ঘটনা ঘটলেও রাজশাহী এর ব্যতিক্রম। এখানে প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি। যদিও শুরু থেকে নৌকার সমর্থক কর্তৃক বিএনপি প্রার্থীর পোস্টার ও ফেস্টুন কেটে ফেলার অভিযোগ করা হচ্ছে বিএনপির পক্ষ থেকে। এ ছাড়া তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেনি। চারজন প্রার্থী প্রচারে নামলেও বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মিনুর প্রচারণা চলছে জোরেসোরে। তার প্রচারণায় যুক্ত
হয়েছেন বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এ ছাড়াও শরিক দল জামায়াতও ভোটের প্রচারে অংশ নিচ্ছেন। গতকাল বুধবার নগরীর ৩নং ওয়ার্ডে মিনুর প্রচারে অংশ নেয় শিবিরের নেতাকর্মীরা। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে স্বরুপে ফিরেছে রাজশাহী মহানগর বিএনপি। তাঁকে বিজয়ী করতে রাত-দিন প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন নেতাকর্মীরা। রাজশাহী মহানগর বিএনপির ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীরা ছাড়াও পাড়া-মহল্লায় সাধারণ মানুষের মাঝে মিনুর ধানের শীষের পক্ষে আমেজ তৈরি হয়েছে বলে নেতাকর্মীরা দাবি করছেন। নিজ নিজ উদ্যোগেও নেতাকর্মীরা মিনুর ধানের শীষের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন। কারণ হিসেবে নেতাকর্মীরা বলছেন, মিনু দীর্ঘ ১৭ বছর রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও ৫ বছর এমপি ছিলেন। তিনি রাজশাহীর উন্নয়নে রেখেছেন অসামান্য অবদান। এ কারণে এবার মিনুতেই আস্থা নেতাকর্মীদের। তাঁর জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে নেতাকর্মীরা একজোট হয়ে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর পক্ষে নগর বিএনপির সভাপতি ও রাসিকের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ মোসাদ্দেক
হোসেন বুলবুলসহ, যুবদল, ছাত্রদল, সংগ্রামী দল, তাঁতী দল, মহিলাদল ও অন্যান্য পেশাজীবীরাও কাজ করছেন। যাতে তার প্রচারণার পাল্লা আরো একধাপ এগিয়ে রয়েছে। বিএনপি ছাড়াও অন্যান্য অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা পৃথক পৃথক ভাবে ওয়ার্ড পর্যায়ে ও পাড়া-মহল্লায় প্রচার মিছিল করছেন। পুরুষের পাশাপাশি নারীদেরও ধানের শীষের পোষ্টার লাগাতে দেখা গেছে। শুধু নেতাকর্মীরাই নন মিজানুর রহমান মিনু ১১ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণার শুরুর দিন হযরত শাহমখদুম রুপোষ (রা) এর মাজার জিয়ারত করে নেতাকর্মীদের নিয়ে গণসংযোগ শুরু করেন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ছুটে বেড়াচ্ছেন নগরীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। গণসংযোগে বেরিয়ে তিনি নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের ব্যাপক ভালবাসা ও সমর্থন পাচ্ছেন । তার গণসংযোগে হাজার হাজর মানুষ অংশগ্রহণ করছেন। দীর্ঘদিন পর ভোটের মাঠে মিনুকে কাছে পেয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। অনেক স্থানে সাধারণ গৃহবধূদের মিনুকে ধান উপহার দিতে দেখা গেছে। মিনুও হাসিমুখে প্রিয় প্রতীক ধানের শীষের ধান
উপহার নিয়েছেন। এছাড়া এ আসনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের এমপি প্রার্থী রয়েছেন ফয়সাল হোসেন। তিনি হাতপাখা মার্কা নিয়ে প্রতিদ্ব›দ্বীতা করছেন। অবশ্য তিনি পোস্টারে তার ছবি ব্যবহার করেননি। শুধু পোস্টার ও ফেস্টুনে তার প্রতীকের ছবি ব্যবহার করেছেন। হাতপাখা প্রতীকের পক্ষে তারা মাইকিংও করছেন। তারাও নেতাকর্মী নিয়ে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। তবে এর পরিমাণ খুব কম। মিনু ও ফয়সাল ছাড়াও এ আসনে প্রার্থী রয়েছেন সিপিবির এনামুল হক। কাস্তে মার্কা নিয়ে রাজশাহী সদরে ভোটে অংশগ্রহণ করেছেন তিনি। তিনিও নির্বাচনী প্রচারে নগরীর বিভিন্ন স্থানে পোস্টারিং করেছেন। তবে মাইকিংয়ের তার প্রচারণা খুব একটা বেশি দেখা যায়নি। অল্প পরিসরে হলেও তিনি প্রথম দিন থেকেই নির্বাচনী প্রচারে নেমে পড়েছেন। উদ্দেশ্য একটাই কাস্তে মার্কা নিয়ে নির্বাচনে জয়লাভ করা হয়। নৌকা প্রতীক নিয়ে রাজশাহী-২ আসন থেকে নির্বাচন করছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই নগরীর বিভিন্ন স্থানে তার পোস্টার ও ফেস্টুন দেখা গেছে
বিপুল পরিমাণ। তবে বৃষ্টির পর প্রত্যেকে প্রার্থীর কিছু পোস্টার ছিঁড়ে গেছে। তিনি প্রথম দিন থেকে নির্বাচনী প্রচারে সরব হলেও তার দল স্বল্প পরিচিত হওয়ায় শরিক দল আ’লীগের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে। তার নির্বাচনী প্রচারণার বেশি অংশই আ’লীগের উপর নির্ভরশীল। কারণ নির্বাচনী প্রচারে যে পরিমাণ নেতাকর্মী দরকার তা নগর এলাকার কোন ওয়ার্ডেই নেই। এ কারণে শরিক দলের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে। অবশ্য শরিক দল আ’লীগের নেতাকর্মীরা তাঁর নৌকা প্রতীকের পক্ষে মাঠে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। মাইকিংয়ের মাধ্যমেও তার প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে। বাদশা ২০০৮ সালে প্রথম এমপি নির্বাচিত হন এবং ২০১৪ সালে বিএনপি ভোটে না আসায় বিনা প্রতিদ্ব›দ্বীতায় এমপি হন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। নেতাকর্মীদের পাশপাশি তিনিও দিনভর
নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা করছেন। গত ১০ বছরে নিজের উন্নয়ন কর্মকান্ড তুলে ধরছেন। উল্লেখ্য, রাজশাহী মহানগর এলাকা নিয়ে গঠিত রাজশাহী-২ সদর আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ১৭ হাজার ৮৫২ জন। পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৫৫ হাজার ৯০৭ জন। এই আসনে ৬ হাজার ৩৮ জন নারী ভোটার বেশি। এ আসনে নতুন ভোটার রয়েছে প্রায় ৩৩ হাজার। নতুন ও নারী ভোটারদের ভোটও নির্বাচনে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে। যেকোনো প্রার্থীকে বিজয়ী হতে হলে নারী ভোটারদের ভোট পাওয়ার বিকল্প রাস্তা কমই আছে। এ ছাড়া নতুন ভোটারও এখানে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ রয়েছে। আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে মাধ্যমে এর অবসান গঠবে। আগামী ৫ বছরের জন্য নির্বাচিত হবেন জনপ্রতিনিধি।
খবর ২৪ ঘণ্টা/আর