নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহী মহানগরীর আলুপট্টি, জিরোপয়েন্ট থেকে রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল , গণকপাড়া, রানীবাজার মোড়, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ গেইট থেকে লক্ষীপুর, ঝাউতলা, ঢাকা বাসস্ট্যান্ডের আশেপাশের এলাকা, সিএন্ডবি মোড়ের সামনের এলাকা – এসব গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম এলাকার ফুটপাতগুলো এখন অবৈধ দখলদারদের কবলে। কেবল ফুটপাতই নয়, কোনো কোনো জায়গায় বিশেষত সাহেব বাজার ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ গেইট থেকে ঝাউতলা এলাকার মূল সড়কের অর্ধেকও দখল হয়ে যাওয়ায় নগরজুড়ে তীব্র যানজট, পথচারীদের চরম ভোগান্তি এবং দুর্ঘটনার ঝুঁকি আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে।
লক্ষীপুরের মতো ব্যস্ততম এলাকায় ডাব, ফল, রেস্টুরেন্ট, কালাই রুটি, স্যান্ডেল, বিভিন্ন আসবাবপত্র বিক্রির মতো বিভিন্ন ব্যবসার কারণে এতটাই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যে, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেতেও রোগীদের অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সারাক্ষণ লেগে থাকছে ভয়াবহ যানজট। এমনকি শহরের যে এলাকাগুলো তুলনামূলকভাবে কম ব্যস্ত, সেখানকার ফুটপাতগুলোও দখলমুক্ত নয়। ছোট ছোট দোকান, ফুড কার্ট এবং পণ্যসামগ্রীর পসরা ফুটপাত ছাড়িয়ে রাস্তায় চলে আসায় পথচারীদের বাধ্য হয়ে মূল সড়কে নেমে চলাচল করতে হচ্ছে। এর ফলে নারী ও বয়স্ক পথচারীরা যেমন হয়রানির শিকার হচ্ছেন, তেমনি দুর্ঘটনার ঝুঁকিও বাড়ছে। এছাড়াও শহরজুড়ে দেখা যায় বহুতল ভবন নির্মাণের নির্মাণ সামগ্রীও নির্বিচারে ফুটপাতে ফেলে রাখা হচ্ছে, যা জনগণের চলাচলে মারাত্মক বাধা সৃষ্টি করছে এবং শহরের সৌন্দর্য নষ্ট করছে।
এই অবৈধ দখলদারিত্বের পেছনে স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সরাসরি মদদ এবং দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, কিছু অসাধু ট্রাফিক পুলিশের সদস্য এবং স্থানীয় প্রভাবশালীরা নিয়মিত চাঁদার বিনিময়ে এসব অবৈধ দোকান পরিচালনায় সহায়তা করছেন। ফলে সিটি কর্পোরেশন বা অন্য কোনো সংস্থার পক্ষে ফুটপাত দখলমুক্ত করা কঠিন হয়ে পড়েছে। মাঝে মাঝে লোক দেখানো উচ্ছেদ অভিযান চালানো হলেও, কয়েক দিনের মধ্যেই আবারও একই চিত্র ফিরে আসে। কারণ, উচ্ছেদ হওয়া দোকানদারদের জন্য কোনো বিকল্প ব্যবস্থার অভাব। যদি ফুটপাতের দোকানদারদের জন্য অন্যত্র দোকানের ব্যবস্থা করা না হয় বা তাদের পুনর্বাসনে প্রশাসন সাহায্য না করে, তাহলে এই উচ্ছেদ অভিযানগুলো কখনোই সফল হবে না এবং সমস্যাটি চিরস্থায়ী রূপ নেবে।রাজশাহী মহানগরীর সচেতন মহল এই সমস্যার একটি স্থায়ী সমাধান দাবি করছে। ফুটপাত দখলমুক্ত করতে প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং প্রশাসনের কঠোর ও নিয়মিত পদক্ষেপ। কেবল লোক দেখানো অভিযান নয়, বরং শক্তিশালী অভিযানের মাধ্যমে দখলদারদের উচ্ছেদ করতে হবে এবং পুনরাবৃত্তি রোধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। একই সঙ্গে, উচ্ছেদ হওয়া দোকানদারদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থান বা পুনর্বাসন বা দোকানগুলো অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করাও অত্যন্ত জরুরি। যেসব প্রভাবশালী ব্যক্তি বা পুলিশ সদস্য এই অবৈধ কর্মকাণ্ডে মদদ দিচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে কঠোর দৃষ্টান্ত স্থাপন করা উচিত। রাজশাহী মহানগরীর যানজট এবং জনদুর্ভোগ লাঘবে ফুটপাতগুলো পথচারীদের জন্য উন্মুক্ত করা অত্যাবশ্যক।
বিএ..
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পুর্ণ বেআইনি।