রাজশাহী মহানগরীর অদূরে কাটাখালীতে বাস ও মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে আগুনে পুড়ে নারী ও শিশুসহ ১৭ জন নিহত হয়েছেন। গত শুক্রবার দুপুর পৌনে ২টার দিকে কাটাখালি থানার সামনের রাস্তায় এ মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় রাজশাহী জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি যত দ্রæত সম্ভব রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। দুর্ঘটনায় মাক্রোবাসে থাকা ১৮ জনের মধ্যে ১৭ জন মারা গেছে। বাকি একজনও আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছেন। দুর্ঘটনার একমাত্র আসামি হানিফ বাসের চালক আব্দুর রহিমকে আটক করেছে পুলিশ। আটক বাস চালক পুঠিয়া উপজেলার বারই পাড়া গ্রামের ফজলুল হকের ছেলে। গতকাল শনিবার দুপুর ২টার দিকে রাজশাহী মহানগরীর অদূরে বেলপুকুর থানার মাহিন্দ্র বাইপাস এলাকা থেকে বিশেষ অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করেছে কাটাখালি থানা পুলিশ।
নিহতরা হলেন, রংপুর জেলার পীরগঞ্জ থানার রাজারামপুর গ্রামের সালাহউদ্দিন ও তার স্ত্রী সামছুন্নাহার, সামছুন্নাহারের বোন কামরুন্নাহার, তাদের সন্তান সাজিদ ও সাবা, দ্বারিকাপাড়া গ্রামের মোখলেসুর, পীরগঞ্জ সদরের তাজুল ইসলাম ভুট্টু, তার স্ত্রী মুক্তা ও সন্তান ইয়ামিন। একউ উপজেলার বড় মজিদপুর গ্রামের ফুল মিয়া ও তার স্ত্রী নাজমা এবং তাদের সন্তান সুমাইয়া, সাদিয়া ও ফয়সাল। গতকাল শনিবার দুপুর ১২টার দিকে ডিএনএ সংগ্রহ ও ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ সময় স্বজনদের কান্নায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পরিবেশ ভারি হয়ে যায়।
জানা গেছে, গত শুক্রবার ২৬ মার্চ দুপুর পৌনে ২টার দিকে রাজশাহী মহানগর থেকে ঢাকাগামী হানিফ পরিবহনের একটি বাস ঢাকা যাচ্ছিল ও রংপুরের পীরগঞ্জ থেকে রাজশাহীর দিকে ১৮ জন যাত্রী নিয়ে একটি মাইক্রোবাস যাচ্ছিলো। পথে মাইক্রোবাসটি কাটাখালি থানার সামনের রাস্তায় পৌঁছালে একটি বাঁশবাহী ভ্যানকে ওভারটেক করতে গিয়ে যাত্রীবাহী বাসের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে বাসের ধাক্কায় মাইক্রোবাসটির সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে আগুন ধরে যায়। আগুনে পুড়ে মাইক্রোবাসের মধ্যেই নারী ও শিশুসহ ১১ জনের মৃত্যু হয়। আগুনের তীব্রতা বেশি
হওয়ায় স্থানীয়রা বার বার আগুন নেভানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। ঘটনাস্থলে রাস্তার পাশে থাকা একটি লেগুনাও পুড়ে যায়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে মাইক্রোবাসের আগুন নিভিয়ে ফেলে। মাইক্রোবাসের মধ্যে থাকা আরো ৮ জনকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠায়। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরো ৬ জনের মৃত্যু হয়। মুহূর্তের মধ্যেই ১৭ জনের প্রাণ অকালে ঝরে যায়। বাকি ২ জনের মধ্যে একজনের অবস্থায় আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে রামেক হাসপাতালের ইনসেনটিভ কেয়ার ইউনিট আইসিইউতে নেয়া হয়। বর্তমানে তিনি সেখানেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন। পরে ঘটনাস্থল থেকে লাশগুলো উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রামেক হাসপাতালে মর্গে প্রেরণ করা হয় ও হাসপাতালে মৃতদের লাশও মর্গে রাখা হয়। তবে আগুনে পুড়ে যাওয়ার পর কে কোনটা তা শনাক্ত করা যায়নি। এ কারণে শনিবার সকালে একে একে সবার ডিএনএ সংগ্রহ করা হয়। ডিএনএ সংগ্রহ শেষে ও ময়নাতদন্ত শেষে শনিবার দুপুর ১২টার দিকে লাশগুলো শোকাহত স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ সময় স্বজনদের আহাজারি ও কান্নায় হাসপাতালের আকাশ-বাতাস ভারি যায়। স্বজনদের এ অকাল মৃত্যু কিছুতেই তারা
যেন মেনে নিতে পারছেন না। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর স্বজনরাও ভিড় করে মর্গের আশেপাশে। এদিকে, ঘটনা তদন্তে রাজশাহী জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু আসলামকে প্রধান করে ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। শনিবার দুপুর ২টার দিকে রাজশাহীর বেলপুকুর থানার মাহেন্দ্রা বাইপাস এলাকা থেকে হানিফ বাসের চালক আব্দুর রহিম (৩৫) কে আটক করে কাটাখালি থানা পুলিশ। এই বাস ড্রাইভার দুর্ঘটনার একমাত্র আসামি।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (সদর) গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলেন, মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নারী ও শিশুসহ ১৭ জন নিহত হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। শনিবার দুপুরে দুর্ঘটনার একমাত্র আসামি বাস চালককে আটক করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এস/আর