ওমর ফারুক, রাজশাহী:
রাজশাহী মহানগর ও আশেপাশের জেলা-উপজেলা থেকে ২০১৮ সালের জুলাই মাস থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত গলায় ফাঁস ও বিষপান করে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিদায়ী বছরে নারী ও পুরুষ উভয়ের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবনতা উদ্বেগজনক হারে বাড়ে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারিবারিক কলহের জের, সংসারে অভাব-অনটন, পরকিয়া প্রেম ও যুবক-যুবতীদের পছন্দমত বিয়ে না দেওয়াসহ নানা কারণে বাড়ছে আত্মহত্যা ঘটনা।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আত্মহত্যা করে মৃত্যুবরণ করা নারী-পুরুষদের মধ্যে অধিকাংশের বয়স ২০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। ছেলেদের বয়স ২০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে এবং মেয়েদের বয়স ১৫ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। এছাড়া কিছু কিশোরীও রয়েছে এই তালিকায়। যাদের বয়স ১৩ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে। বেশ কিছু বয়স্ক মানুষও আত্মহত্যা করেছেন। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের জুলাই মাস থেকে ৩১ ডিসেম্বর
পর্যন্ত ৬ মাসে যে ১১০ জন আত্মহত্যা করেছে গলায় ফাঁস দিয়ে মারা গেছে ৫ জন এবং বিষপান করে মারা গেছেন ১০৫ জন। হারপিক পান ও ঘুমের ওষুধ সেবনেও কয়েকজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে। ১১০ জনের মধ্যে জুলাই মাসে ১১ জন, আগষ্ট মাসে ২৮ জন, সেপ্টেমবর মাসে ১৭ জন, অক্টোবর মাসে ২৩ জন, নভেম্বর মাসে ১৭ জন ও ডিসেম্বর মাসে ৯ জন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মনোরোগ বিভাগের চিকিৎসকের কাছে আত্মহত্যার প্রবনতার কারণ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, কয়েক বছর আগেও রাজশাহীসহ সারা দেশে আত্মহত্যার খবর খুব বেশি একটা শোনা যেতনা। কিন্তু বর্তমানে পত্রিকার পাতা খুললে চোখে পড়ে আত্মহত্যার ঘটনার। যা আমাদের সমাজের সচেতন মানুষদের ভাবিয়ে তুলেছে। তিনি আত্মহত্যার প্রবনতা প্রসঙ্গে আরো বলেন, স্বামীর সাথে পারিবারিক কলহের জের ধরে অভিমানে অনেক নারী আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। তারমধ্যে বেঁচে থাকার কোন ইচ্ছা থাকেনা। সংসারে অভাব-অনটন, চাওয়া-পাওয়ার সংমিশ্রন না ঘটলে এবং পরকিয়ার কারণেও অনেক নারী-পুরুষ আত্মহত্যা করে
থাকেন। কাঙ্খিত কোন কিছু না পেলেই তাদের মধ্যে নিজেকে শেষ করে দেওয়ার ইচ্ছা হয় এবং সেই ইচ্ছা থেকেই তারা আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। আত্মহত্যার করার আগেও সেসব নারী ও পুরুষরা মনে করেন কেউ যদি তাদের কাছে এগিয়ে আসেন তাহলে তারা আত্মহত্যা করবে না। কিন্তু অবশেষে যখন কাউকেই সে পাশে পায়না তখন আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়। আত্মহত্যার মতো ঘটনার জন্য শুধু যিনি আত্মহত্যা করেন তিনিই দায়ী নন এর জন্য সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলোও দায়ী বলে অভিমত দেন তিনি। সমাজের মানুষদের ব্যাপক সচেতনতার মাধ্যমে আত্মহত্যার মত ঘটনা কিছুটা কমতে পারে বিশিষ্ট ব্যক্তিরা অভিমত ব্যক্ত করেন। আত্মহত্যার মত ঘটনাগুলোকে কমিয়ে আনতে হলে ব্যক্তির পাশাপাশি সমাজকেও অনেক ভুমিকা পালন করতে হবে বলে তিনি মনে করেন।
খবর ২৪ঘণ্টা/আর