ওমর ফারুক :
আত্মশুদ্ধি ও সিয়াম-সাধনার মাস পবিত্র মাহে রমজানের রোজাকে কেন্দ্র করে রাজশাহী মহানগরীতে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়েছে লাগামহীনভাবে। সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে দেশিসহ সব ধরণের মুরগির দাম। এতে সাধারণ ও নিম্ন আয়ের মানুষেরা ব্যাপক হয়রানির মধ্যে পড়েছেন। কারণ যেভাবে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম দ্রুত সময়ের মধ্যে বেড়েছে সেভাবে মানুষের আয় বাড়েনি। তাই রমজানে পরিবার-পরিজন নিয়ে বিপদের মধ্যে পড়েছেন কম আয়ের মানুষজন। সাধ ও সাধ্যের মধ্যে কাঙ্খিত জিনিস না পাওয়ায় হতভম্ভ হয়ে পড়েছেন এসব মানুষ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রমজান মাস শুরু হওয়ার আগে রাজশাহী মহানগরীতে দেশিসহ সব মুরগির দাম স্বাভাবিক ছিল। কিন্ত রমজান ঘনিয়ে আসতেই রাজশাহী মহানগরীর বাজারগুলোতে দেশি মুরগিসহ সব ধরণের মুরগির দাম হু হু করে অকারণে বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। যা সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। সাধারণ মানুষকে যেন দাম শুনেই ক্ষ্যান্ত থাকতে হয়। কেনার মত দুঃসাহস দেখাতে পারেন না তারা।
ছবি : ব্রয়লার মুরগি
দেশি মুরগিসহ সব ধরণের প্রতি কেজি মুরগির দাম বেড়েছে প্রায় ৪৫ টাকা থেকে শুরু করে ৮০ টাকা পর্যন্ত। আর গরুর মাংসের দাম বেড়েছে প্রতি কেজি ৫০ টাকারও বেশি। যেখানে রমজানের আগে নগরীতে দেশি মুরগির দাম ছিল প্রতি কেজি ৪০০ টাকা সেখানে বর্তমানে সেই মুরগি বিক্রি করা হচ্ছে ৪৫০ টাকা কেজি ধরে। সোনালি মুরগি ছিল ১৯০ টাকা থেকে ২১০ টাকা কেজি। বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৯০ টাকা কেজি। ব্রয়লার মুরগি ছিল ১১০ টাকা কেজি অথচ সেই মুরগির দাম বর্তমানে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪৫ টাকা কেজি। সোনালি প্যারেন্স মুরগি ১৪৫ টাকা থেকে ১৮৫ টাকা কেজিতে উঠে গেছে। দেশি মুরগিসহ প্রত্যেকটা মুরগির দাম বেড়েছে লাগামহীন। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেস বাজার মনিটরিং করা হলেও দাম কমাতে তারা ব্যর্থ হচ্ছেন। জেলা প্রশাসনের কাছে ব্যবসায়ীরা নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়াবেনা বলেও জানালে একের পর এক দাম বাড়িয়ে চলেছেন। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। নিয়ন-নীতির তোয়াক্কা না করেই এসব অসাধু ব্যবসায়ীরা বেশি মুনাফার লোভে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। অথচ জেলা প্রশাসন থেকে বার বার তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম না বাড়ানোর জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।
ছবি : দেশি মুরগি
অসাধু ব্যবসায়ী এই সিন্ডিকেটটি প্রতি বছর রমজানের সময় অকারণে জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে সাধারণ মানুষকে ভোগান্তির মধ্যে ফেলেন। তারপরও এরা ধরা ছোঁয়ার বাইরেই থেকে যায়। মহানগরীর প্রত্যেকটি বাজারে জিনিস পত্রের দামের একই চিত্র।
নগরীর কোর্ট স্টেশন বাজারে মুরগি কিনতে আসা সাহেবুল্লাহ নামের এক ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন, কয়েকদিন আগেও আমি সোনালি মুরগি ১৯০ টাকা কেজি কিনেছি কিন্ত এখন এর দাম ধরা হচ্ছে ২৯০ টাকা কেজি। দেশটা কি মগের মুল্লুক হয়ে গেল নাকি? ব্যবসায়ীরা যা ইচ্ছা তাই করবে আর আইনের আওতায় আসবে না। এখনই প্রশাসনের উচিত এসব অসাধু ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে এসে কঠোর শাস্তি দেওয়া। যাতে ভবিষ্যতে রমজান মাসে মানুষকে আর ভোগান্তির মধ্যে না ফেলতে পারে তারা।
ছবি : গরুর মাংস
আরেক ব্যক্তি সিরাজুল যিনি পেশায় ব্যাটারি চালিত রিক্সা চালক। তিনি জানালেন, সেহেরির কথা চিন্তা করে একটি মুরগি কিনতে এসেছিলাম। কিন্তু দোকানে পৌঁছে আর মুরগি কেনার সাহস দেখাতে পারিনি। কারণ যেভাবে মুরগির দাম বেড়ে গেছে সেভাবেতো আমাদের আয় বাড়েনি। তাই দ্রæত এদের মত কালো বাজারিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উঠিত।
এক মুরগি ব্যবসায়ীর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ইচ্ছাকৃত দাম বাড়ানো হয়নি। পাইকারি বাজারে দাম বেড়ে গেছে। তাই খুচরা বাজারেও এর প্রভাব পড়ছে।
এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সুব্রত পাল বলেন, বাজার মনিটরিং করে ব্যবসায়ীদের দাম না বাড়ানোর জন্য সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। দাম বাড়ালে কঠোর শাস্তির কথাও বলা হয়েছে। বিষয়টি ভালভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে। দু’একদিনের মধ্যেই মুরগির বাড়তি দাম কমে যেতে পারে বলে আশা করছি।
খবর২৪ঘণ্টা/এমকে