নাটোর প্রতিনিধি: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মিয়ানমারের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের সহায়তায় সেনাবাহিনী দক্ষতা ও প্রশংসার সাথে কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। এতে করে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্বল হয়েছে। বিভিন্ন দূর্যোগ ও দূর্ঘটনায় আর্তদের সাহায্য ও সহযোগিতার মাধ্যমে সশস্ত্র বাহিনী অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। দূর্গম পার্বত্য এলাকায় সড়ক ও অবকাঠামো নির্মাণ, ভোটার তালিকা ও মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট তৈরীর ক্ষেত্রেও দক্ষতা দেখিয়েছে। সেনাবিহিনী একগ্রতা, কর্মদক্ষতা এবং নানাবিধ জনসেবামূলক কর্মকান্ডের জন্য সার্বজনীন আস্থা ও গ্রহনযোগ্যতা অর্জন করেছে।
বর্তমান সরকার জাতির পিতা প্রণীত নীতিমালার আলোকে আর্মড ফোর্সেস গোল-২০৩০ প্রণয়ন করে সেনাবাহিনীর আধুনিকায়ন ও উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছে। সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখার মাধ্যমে দেশের সার্বভৌমত্ব সুরক্ষায় অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক যে কোন হুমকি মোকাবেলায় সেনাবাহিনীর সদস্যদের প্রস্তত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহষ্পতিবার সকালে নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার দয়ারামপুরে অবস্থিত কাদিরাবাদ সেনানিবাসস্থ ইঞ্জিনিয়ার সেন্টার এন্ড স্কুল অব মিলিটারী ইঞ্জিনিয়ারিং এ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারি কোরের পুনঃমিলনী এবং বাৎসরিক অধিনায়ক সম্মেলন-২০১৮ তে যোগ দিয়ে একথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার ২০০৯ সাল থেকে অদ্যবধি ৯ বছরে সেনাবাহিনীর অবকাঠামোগত পরিবর্তনের পাশাপাশি সক্ষমতা বহুলাংশে বৃদ্ধি করেছে। সেনাবাহিনীতে আর্মড ব্রিগেড, কম্পোজিট ব্রিগেড প্যারা কমান্ডো বিগ্রেড ও পদাতিক ডিভিশন, ইনফ্রেন্টি ডিভিশন প্রতিষ্ঠাসহ অত্যাধুনিক অস্ত্রসস্ত্র ও সরঞ্জামাদিতে সজ্জিত করা হয়েছে। বাহিনীকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করতে আধুনিক যানবাহন, হেলিকপ্টার, সমরাস্ত্র ও সরঞ্জামাদি সংযোজন করা হয়েছে।
অত্যাধুনিক ব্যবস্থাসহ সিএমএইচসমূহে উন্নতমানের চিকিৎসাসেবা প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন সেনা সদ্যদের জীবনমান উন্নত করতে বর্তমান সরকার আন্তরিক রয়েছে। এছাড়া সৈনিকদের উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাসহ তাদের বাসস্থান, মেস, এসএম ব্যারাক নির্মাণ, বেতন-রেশন বৃদ্ধিসহ অনান্য সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
নিজেকে সেনাপরিবারের সদস্য হিসেবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর দুই ভাই শহীদ শেখ কামাল ও শহীদ লেফট্যানান্ট শেখ জামাল মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেন। শেখ জামাল ১৯৭৫ সালে রয়েল মিরটারী একাডেমী স্যান্ডহার্টার্স থেকে নিয়মিত প্রশিক্ষণ শেষে কমিশন লাভ করেন এবং সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ছোট ভাই শেখ রাসেলও সেনাবিহিনীতে যোগ দেয়ার ইচ্ছাপোষণ করেছিল জানিয়ে সেনা সদস্যদের উদ্দ্যেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন‘ আপনাদের মাঝে হারানো ভাইকে খুঁজে পাই’।
ইঞ্জিনিয়ারিং সেন্টার এন্ড স্কুল অব মিলিটারী ইঞ্জিনিয়ারিংকে জাতীয় পতাকা অর্জনকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে আখ্যা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী জানান, এই সেক্টরের রিক্রুট প্রশিক্ষণের সক্ষমতা বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্সকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহ্যবাহী সংগঠন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, কোরে ইতোমধ্যে ইঞ্জিনিয়ার কন্সট্রাকশন ব্রিগেড ও ডিভ ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যাটালিয়ন গঠন করা হয়েছে। এছাড়া আরই ব্যাটালিয়ন, ইঞ্জিনিয়ার কন্সট্রাকশন ব্যাটালিয়ন গঠনের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। কোরের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস উল্ল্যেখ করে কোরের সদস্য শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর ও লেঃ কর্ণেল আব্দুল কাদিরকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
এসময় প্রধানমন্ত্রীর সাথে উপস্থিত ছিলেন তাঁর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিকী, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক, নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল নিজামউদ্দীন আহমেদ, বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল আবু এসরার, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি, তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, নাটোর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রফেসর আব্দুল কুদ্দুস এমপি, সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শিমুল এমপি, নাটোর-১ আসনের সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ, শহীদ লেফটান্যান্ট কর্ণেল আব্দুল কাদিরের ছেলে সাংবাদিক নাদিম কাদির, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রিয় উপ কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক সিলভিয়া পারভীন লেনীসহ সামরিক ও বেসামরিক উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।
পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৬ষ্ঠ ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের পূনঃর্মিলনী ও প্রীতিভোজে অংশ নেন।এর আগে সকাল ১১টায় প্রধানমন্ত্রী কাদিরাবাদ সেনানিবাসে হেলিকপ্টারযোগে অবতরণ করলে সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক, কর্ণেল কমান্ড্যান্ট ও কমান্ড্যান্ট ইসিএসএমইসহ উর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ তাঁকে অভ্যর্থনা জানান।
খবর২৪ঘণ্টা.কম/নজ