নিজস্ব প্রতিবেদক: মাদকবিরোধী অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে ভারতের সীমান্তবর্তী রাজশাহী মহানগর ও উপজেলার মাদক কারবারের চিত্র পাল্টে গেছে। এলাকা ছাড়া হয়েছে পুলিশের তালিকাভুক্ত মাদক কারবারিরা। তারপরও মাদক বিক্রি চলছেই। মাদক কারবারিরা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সেবকারীদের ডেকে নিয়ে ইয়াবা ও ফেনসিডিল মাদক বিক্রি করছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান শুরুর পর রাজশাহী মহানগরের ১২ টি থানায় মাদকের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বিভিন্ন মেয়াদে জেল জরিমানা দেওয়া হচ্ছে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে।
পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাদের বিরুদ্ধে মাদক বেচাকেনা ও সেবন করার অভিযোগ এনে একাধিক মামলাও দায়ের করা হয়েছে।
তবে অভিযানে রাজশাহী মহানগর ও জেলা পুলিশ শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করতে পারেনি।
চুনো পুটিরা অভিযানে গ্রেফতার হলেও শীর্ষ মাদক চোরাকারবারিরা রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে–এমন অভিযোগ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিরুদ্ধে। আর পুলিশের দাবি অভিযানের কারণে শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীরা এলাকা ছেড়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চারঘাট, বাঘা ও গোদাগাড়ি সীমান্তবর্তী হওয়ায় প্রতিদিন মাদক ব্যবসায়ীরা ভারত থেকে খুব অনায়াসে ফেনসিডিলসহ অন্যান্য মাদক বিক্রির জন্য নিয়ে আসে। যেগুলো সীমান্তবর্তী অন্তত অর্ধশত গ্রামে বেচাকেনা হয়।
আবার মাদকের বড় একটি অংশ বিভিন্ন পথে রাজধানী ঢাকায় সরবরাহ করা হয় বিশেষ বরে ফেনসিডিল।
রাজশাহীতে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ বেশ কয়েকজন নিহত হয়। যাদের বিরুদ্ধে মাদকের মামলা ছিল।
তারপরও বন্ধ হয়নি মাদকের কারবার। মাদক চোরাচালানিরা সুন্দরী তরুনীদের দিয়ে এ ব্যবসা পরিচালনা করছেন। ওইসব সুন্দরী তরুনীরা মোবাইল ফোনে খবর দিয়ে সেবনকারীদের কাছে ফেনসিডিল ও ইয়াবা বিক্রি এখনও অব্যাহত রেখেছে। ফোনের মাধ্যমে স্পট পরিবর্তন করে প্রতিদিন তারা বিক্রি করছে ফেনসিডিল ও ইয়াবা। সেবনকারীরা স্পটেই সেবন করে মোটরসাইকেল করে বাড়ি ফিরছে। প্রতিদিন ভিন্ন ভিন্ন স্পটে ফেনসিডিল বেচাকেনা চলছে। সঙ্গে বিক্রি হচ্ছে ইয়াবা এবং গাঁজা।
তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার কারণে আগের তুলনায় ফেনসিডিলের বেচাকেনা অনেক কমে গেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। গ্রেফতারের ভয়ে নতুনদের আনাগোনা নেই বললেই চলে। শুধুমাত্র নিয়মিত সেবনকারীরাই মাদক কারবারিদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে মাদক সেবন করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা যেসব মাদক আটক করছি, সেগুলো আসছে ভারতীয় সীমান্ত পথে। মাদকের অভিযোগে কাউকে গ্রেফতার করলেই স্থানীয় কিছু নেতা অভিযুক্তদের পক্ষে সুপারিশ করেন বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
রামচন্দ্রপুর এলাকার যুবক মাসুদ রানা ও মামুন খান বলেন, আগে প্রকাশ্যেই মাদকের ব্যবসা চলতো। মাদকবিরোধী অভিযানের কারণে ইদানিং সেটা কমে গেছে, তবে মাদক বেচাকেনা বন্ধ হয়নি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রতিদিন ভারত থেকে মাদক ঢুকছে ফেনসিডিল। তারা আরো বলেন মতিহার, বোয়ালিয়া ও রাজপাড়ার থানার এলাকা বন্ধু হয়নি মাদক চোরাকারবারি।
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসিরা বলেন, ‘সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী মাদকবিরোধী অভিযান ১৭ মে থেকে শুরু সেই থেকে অভিযান চলছে। এ পর্যন্ত কয়েক হাজার জনকে গ্রেফতার করে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।’
তারা দাবি করেন, তাদের এই অভিযানের ফলে শীর্ষ মাদক বিক্রেতারা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছে। ফলে থানা এলাকায় চারঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি নজরুল ইসলাম বলেন, মাদকের ব্যবহার আগের মতো নেই। চোরাচালানিদের কৌশলের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তাদের অবৈধ সব দরজা বন্ধে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’
এদিকে এই মাদক কারবারিদের আশ্রয়দাতা হিসেবে ই মাদক কারবারিদের আশ্রয়দাতা হিসেবে চারঘাট থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক উৎপল কুমার, এসআই শরিফুল ইসলাম, মামুনুর রশিদ ও তরিকুল ইসলামের নামও উঠে এসেছে। এদের মধ্যে উৎপলকে এরই মধ্যে পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। তাঁরা নিয়মিত এলাকায় গিয়ে মাসোয়ারা
আদায় করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তবে জানতে চাইলে ওই পুলিশ কর্মকর্তারা মাদকের সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেন। উৎপল বলেন, ‘মাদকের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রশ্নই আসে না।’
এ ছাড়া মাদক কারবারিদের সঙ্গে সখ্যের অভিযোগ আছে রাজশাহী নগরীর বোয়ালিয়া থানার এসআই নাসির আহামেদ, ডিবির এসআই মনিরুল ইসলাম, মাহাবুব হাসান গোদাগাড়ী থানার এসআই আকবর, এসআই নুর ইসলাম, এসআই নাইমুলসহ আরো অন্তত অর্ধশতাধিক পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে। এরা নিয়মিত মাদক কারবারিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে মাসোয়ারা আদায় করে থাকেন। কখনো কখনো নিজেরাই মাদক দিয়ে সাধারণ মানুষকে ফাঁসিয়ে দেওয়ার অভিযোগ আছে এদের বিরুদ্ধে।
অন্যদিকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সোর্স পরিচয়ধারীরাও মাদক কারবারে জড়িত রয়েছে এখনো।
এরা মাদক কারবারিদের তথ্য দেওয়ার নামে নিজেরাই মাদক কারবার পরিচালনা ছাড়াও নিয়মিত মাসোয়ারা আদায় করে পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের হাতে তুলে দেয়।
এছাড়াও বোয়ালিয়া থানা ও ডিবি পুলিশের বেশ কয়েক কর্মকর্তা মাদক চোরাকারবারীর অডিও রেকর্ড খবর ২৪ ঘণ্টার হাতে এসে পৌঁছেছে শীঘ্রই প্রচার করা হবে।
খবর২৪ঘণ্টা.কম/নজ