1. [email protected] : Abir k24 : Abir k24
  2. [email protected] : bulbul ob : bulbul ob
  3. [email protected] : Ea Shihab : Ea Shihab
  4. [email protected] : khobor : khobor 24
  5. [email protected] : অনলাইন ভার্সন : অনলাইন ভার্সন
  6. [email protected] : omor faruk : omor faruk
  7. [email protected] : R khan : R khan
মোদির জন্য বাইডেন ভাল নয় কেন? - খবর ২৪ ঘণ্টা
বুধবার, ১৪ মে ২০২৫, ০৪:৫৩ পূর্বাহ্ন

মোদির জন্য বাইডেন ভাল নয় কেন?

  • প্রকাশের সময় : সোমবার, ৯ নভেম্বর, ২০২০

২০০৫ সালে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের শাসনামলে গুজরাটের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ভিসা দিতে অস্বীকৃতি জানায় যুক্তরাষ্ট্র। এরপর যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতায় এলেন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির বারাক ওবামা। তার দ্বিতীয় মেয়াদের সময় ভারতে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন মোদি। দু’ জনের মধ্যে সম্পর্ক কোলাকুলি পর্যন্ত পৌঁছায়। কিন্তু ওবামার রিপাবলিকান উত্তরসূরী ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর দুয়েকবার ভারতের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করলেও দুই দেশের মধ্যকার কৌশলগত সম্পর্ক আরও গভীর হয়েছে।
ভারত বা যুক্তরাষ্ট্রে যেই ক্ষমতায় আসুক না কেন, দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক আরো জোরদার হওয়ার পথেই রয়েছে। কিন্তু এ চিন্তা একপাশে রেখে দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্কের ওঠা-নামা বিবেচনাটাও জরুরি।

সাম্প্রতিক মার্কিন নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন ডেমোক্র্যাট জো বাইডেন। ট্রাম্পের তুলনায় তিনি ভারতের জন্য সুখবর।

কিন্তু মোদির জন্য রাজনৈতিকভাবে তিনি অতটা ভালো নাও হতে পারেন। এই সামান্যতম পার্থক্যেরও গুরুত্ব রয়েছে। যতই হোক— মোদি ভারত নয়, আর ভারতও মোদি নয়। ভারত তার যেকোনো নেতার চেয়ে বড়, আর তিনি যতই জনপ্রিয় হোন না কেন। এ খবর দিয়েছে ভারতের শক্তিশালী অনলাইন মিডিয়া- দ্য প্রিন্ট ।

বাইডেন চুপ থাকবেন না
২০১৫ সালে হিন্দু মৌলবাদিরা ‘ঘর ওয়াপসি (সংখ্যালঘুদের ধর্মান্তর)’ ক্যাম্পেইনের সময় ভারত সফরে এসে ধর্মীয় সহিষ্ণুতা নিয়ে কথা বলেছিলেন ওবামা। নয়া দিল্লি ছাড়ার আগে তিনি বলেছিলেন, কোনো সমাজই মানুষের নিকৃষ্টতম প্রবৃত্তি থেকে মুক্ত নয়, আর প্রায় ক্ষেত্রেই সেসব প্রবৃত্তি চরিতার্থে ধর্মকে ব্যবহার করা হয়। প্রতিটি মানুষেরই অধিকার রয়েছে, নিপীড়নের আশঙ্কা না করে নিজের ধর্ম চর্চার বা চর্চা থেকে বিরত থাকার।

চলতি বছরের শুরুর দিকে ট্রাম্প ভারত সফর করেন। তার সফরের সময় দিল্লিতে তীব্র ধর্মীয় সহিংসতা দেখা দেয়। ট্রাম্প ওই সহিংসতা বা ভারতের বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধন আইন (সিএএ) নিয়ে কথা বলতে অস্বীকৃতী জানান। বলেন, ‘আমি এ বিষয়টি ভারতের ওপর ছেড়ে দেবো। আশা করবো যে, তারা সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে।’

এই দুই ঘটনা থেকে টের পাওয়া যায় যে, মোদি এ বছর হোয়াইট হাউজে বাইডেন ও কমালা হ্যারিসকে দেখতে চাননি। বাইডেন ও হ্যারিস উভয়েই প্রকাশ্যে জানিয়েছেন যে, তারা একটি উদার ভারত দেখতে চান। এ ব্যাপারে নিশ্চিত থাকা যায় যে, ট্রাম্পের মতো ভারতকে ‘ফ্রি-পাস’ দেবেন না বাইডেন। তিনি সিএএ ও জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি)-এর বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। এছাড়া, কাশ্মীর ইস্যুতে হ্যারিসের অবস্থানও নয়াদিল্লিকে সতর্ক করে তুলেছে। তিনি বলেছেন, আমাদের কাশ্মীরিদের মনে করিয়ে দিতে হবে যে, তারা এ পৃথিবীতে একা নয়। আমরা সেখানকার পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছি। পরিস্থিতি দাবি করলে, হস্তক্ষেপেরও দরকার হতে পারে।
বাইডেনের শাসনামলে কাশ্মীর ইস্যুতে ভারত চাইলেই মার্কিন আইনপ্রণেতাদের ধমক দিয়ে চুপ রাখতে পারবে না।

ডনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর, তার ইসলামবিদ্বেষের কারণে খুশিই হয়েছিলেন মোদির হিন্দু মৌলবাদিরা। তার প্রেসিডেন্ট হওয়াকে বিশ্বজুড়ে জাতীয়তাবাদী, বিদেশিভীতি, ইসলামভীতি-ভিত্তিক রাজনীতির জয় হিসেবে দেখেছিল তারা। একইভাবে বাইডেনের জয় বৈশ্বিক রাজনীতিতে ঠিক বিপরীত প্রভাব ফেলবে।

চীনের উত্থান ঠেকাতে বাইডেনের শাসনামলে যুক্তরাষ্ট্র—ভারত সম্পর্ক গভীর হবে। কিন্তু যখন মোদির সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিষয় আসবে— তখন ডেমোক্র্যাটদের মনে আসবে মোদি রীতিমতো ট্রাম্পের হয়ে প্রচারণায় অংশ নিয়েছিলেন।
মনে রাখতে হবে, ট্রাম্পের আমলে মার্কিন সরকার ভারতের ক্রমবর্ধমান গণতান্ত্রিক অবক্ষয় নিয়ে একেবারেই চুপ ছিল না। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এলিস ওয়েলস এক বিবৃতিতে, সিএএ, কাশ্মীরি রাজনীতিকদের বন্দি করা ও কাশ্মীরে ইন্টারনেট নিষেধাজ্ঞার তীব্র সমালোচনা করেন। ট্রাম্প প্রশাসন যেহেতু এটুকু করেছে, তাহলে বাইডেন প্রশাসন কতটুকু করতে পারে তা সহজেই অনুমেয়।
যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সৌদি আরবের মতো অত গুরুত্বপূর্ণ নয় ভারত যে এসব বিষয়ে অন্যদিকে চোখ ফিরিয়ে রাখবে তারা। চীনকে মোকাবিলায় ইতিমধ্যেই গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও অধিকারের দিকে জোর দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। ভারতের গণতন্ত্রের অবনমন আরও বাড়তে থাকলে, বাইডেনের পক্ষে একইসঙ্গে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পক্ষে কথা বলা ও মোদির সঙ্গে সুসম্পর্ক ধরে রাখা সম্ভব হবে না।

ট্রাম্পের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও সম্প্রতি দিল্লি সফর করেছেন। এ সফরে গণতন্ত্র নিয়ে খুব একটা উচ্চবাচ্য করেননি তিনি। ট্রাম্প হয়তো গণতন্ত্রকে অতটা গুরুত্ব দেননি, কিন্তু ডেমোক্র্যাটরা ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, ধর্মীয় স্বাধীনতা, সহিষ্ণুতার দিকে নিশ্চিতভাবেই জোর দেবে। অভিন্ন শত্রু হিসেবে চীনের উত্থান দেশ দুটির সম্পর্ক জোরদারের জন্য যথেষ্ট নয়।
এদিকে, মোদি ভারতীয়-আমেরিকানদের ওপর বেশ বিনিয়োগ করেছেন। কিন্তু হ্যারিস ভাইস-প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায়, মার্কিন রাজনীতিতে ভারতীয় আমেরিকানদের মোদির সেনাবাহিনী হিসেবে দেখা হবে না। উল্টো, ভারতের হিন্দু মৌলবাদিতা যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাট নেতাদের কাছে বিরক্তকরই ঠেকবে। এসবের কোনোটাই মোদির জন্য সুখবর নয়।

স্টেডিয়ামভর্তি মানুষের উদ্দেশ্যে মোদির সঙ্গে ভাষণ দিতে পেরে ডনাল্ড ট্রাম্প খুশিই হয়েছিলেন। মোদি তার ভাষণে —‘আপকি বার, ট্রাম্প সরকার (এইবার, ট্রাম্প সরকার)’ বলে তাকে একরকম পৃষ্ঠপোষকতাই করেছেন। কিন্তু বিভিন্ন ইস্যুর দিকে নজর দিলে দেখা যায়, ট্রাম্প আসলে ভারতের জন্য তেমন একটা ভালো ছিলেন না।

ট্রাম্পের একঘরে নীতিমালায় ভারতের মতো মিত্ররা প্রতারিত বোধ করেছে। তার রক্ষণশীল নীতিমালা ভারতের অর্থনীতির ক্ষতি করেছে। তার বিদেশভীতি, পুরো বিশ্বের মুসলিমদের চেয়েও ভারতীয় অভিবাসন-প্রত্যাশীদের বেশি ক্ষতি করেছে।
ডনাল্ড ট্রাম্প ভারতকে ভেনেজুয়েলা ও ইরান থেকে সস্তায় তেল কিনতে দেননি। বরং যুক্তরাষ্ট্র থেকে উচ্চমূল্যে তেল কিনতে বাধ্য করেছেন। চীনের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত বিরোধ চলা সত্ত্বেও রাশিয়া থেকে অস্ত্র কেনার সুযোগ দেননি মোদি সরকারকে।
এদিকে, ভারতীয় পণ্য আমদানিতে শুল্ক আরোপ করেছেন ট্রাম্প। ভারতীয় অর্থনীতির দুর্দশায় দেশটিকে রপ্তানির ক্ষেত্রে যে ছাড় দেয়া হতো তা সরিয়ে নিয়েছেন। মার্কিন ভিসা নীতিতে পরিবর্তন এনেছেন, যার কারণে মার্কিন কোনো কোম্পানির পক্ষে ভারতীয় কর্মী নিয়োগ দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।

যেকারণে ভারতের জন্য ট্রাম্পের চেয়ে ভালো হবেন বাইডেন
ট্রাম্প প্রশাসনের তুলনায় বাইডেনের ডেমোক্র্যাট প্রশাসন ভারতের সঙ্গে আরো যৌক্তিক হওয়ার প্রত্যাশা করা হচ্ছে। নতুন প্রশাসন ভারতকে বন্ধু হিসেবে বিবেচনা করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সম্প্রতি ভারতের সঙ্গে সীমান্তে চীনের আগ্রাসন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমতাবস্থায় চীনের প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের কট্টরপন্থি অবস্থান ভারতের জন্য ইতিবাচক ছিল। একইসঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসন পাকিস্তানের প্রতিও কট্টর অবস্থান গ্রহণ করেছে।
বাইডেনের ডেমোক্র্যাট প্রশাসন ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি ফের চালুর চেষ্টা করবে। এতে করে ভারতের জন্য ইরানি তেল কেনার পথ সুগম হতে পারে। এছাড়া, বাইডেন-হ্যারিস প্রশাসন প্যারিস জলবায়ু চুক্তি, ভারতীয় শ্রমিকদের ভিসা ও অন্যান্য বিষয়েও নীতিমালা শিথিল করবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। এসবই ভারতের জন্য ভালো।

বাণিজ্য চুক্তি, কোলাকুলি নয়
আদতে এমনটাই হওয়া উচিৎ। অতিমাত্রায় ব্যক্তিগত কূটনীতি মোদির জন্য পাকিস্তানের নওয়াজ শরিফ ও চীনের শি জিনপিংয়ের ক্ষেত্রে অসন্তষ্টি বয়ে এনেছে। আবার ট্রাম্পের সঙ্গে মোদির স্টেডিয়াম র্যা লির পর বাইডেনের জয়ী হওয়াটা মোদির জন্যও বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ব্যাপারটা এমনও না যে, নিজের কূটনৈতিক কৌশলে ট্রাম্পকে বশ করতে পেরেছিলেন মোদি। ট্রাম্প প্রায়ই ভারতের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ঝেড়েছেন। বাইডেন এমনটা করবেন না বলে ধারণা করা যায়। সাম্প্রতিক একটা উদাহরণ থেকেই এটা স্পষ্ট হয়— ট্রাম্প ভারতকে নিয়ে বলেছেন দেশটির ‘বাতাস নোংরা’। এ প্রসঙ্গে বাইডেন বলেছেন, বন্ধুদের সঙ্গে এভাবে কথা বলতে নেই।

ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের দেশীয় রাজনীতির উর্ধ্বে গিয়ে জাতীয় স্বার্থ নিয়ে কাজ করার সময় এসেছে। চীন তাদের প্রভাব সম্প্রসারণ জারি রেখেছে। এমন সময়ে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি ভালো বাণিজ্যিক চুক্তি নিশ্চিত করতে পারা ভারতের জন্য অনেক মূল্যবান অর্জন হবে।

 জে এন

পোস্টটি শেয়ার করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পুর্ণ বেআইনি।

Developed By Khobor24ghonta Team