নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচনে মেয়রপদে দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা দিয়েও শেষ পর্যন্ত মনোনয়নপত্র দাখিল করেনি বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামী। তবে দলটি নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডের ১৪টিতেই কাউন্সিলর পদে এবং ১০টি সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদের ২টিতে নিজেদের প্রার্থী দিয়েছে। এই ১৬টি কাউন্সিলর পদে জিততে চায় দলটি। এদিকে ৩০টি ওয়ার্ডেই কাউন্সিলর প্রার্থী দিয়েছে বিএনপি। এসব প্রার্থী কোনোভাবেই জামায়াতকে ছাড় দিতে নারাজ। কিন্তু মেয়র ছাড়া অন্য কোনো পদ নিয়ে নগর বিএনপির এই মুহূর্তে কোনো ভাবনা নেই বলে দায়িত্বশীল নেতারা জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কয়েক মাস আগে মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি সিদ্দিক হোসাইনকে স্বতন্ত্র মেয়রপ্রার্থী ঘোষণা দিয়ে নগরজুড়ে পোস্টার-ফেস্টুন সাঁটিয়েছিল দলটি। শেষ পর্যন্ত দলের পক্ষ থেকে মেয়রপদে কেউ মনোনয়নপত্র উত্তোলন করেননি। তবে এখন পর্যন্ত বিএনপির মেয়রপ্রার্থী ও নগর সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের পক্ষে মাঠেও নামেনি দলটি। এ নিয়ে নগরজুড়ে নানামুখী আলোচনা চলছে। অনেকে বলছেন, ১৬টি
ওয়ার্ডে কাউন্সিলর, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে প্রার্থী দিয়ে শক্তির জানান দিচ্ছে জামায়াত। এর মধ্য দিয়ে রাজশাহী নগরীতে বিএনপি ও জামায়াতের দুই মেরুতে অবস্থানের বিষয়টি ক্রমেই পরিষ্কার হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৩ সালের সিটি নির্বাচনে নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডেই কাউন্সিলর, সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী দিয়েছিল বিএনপি। তার মধ্যে অন্তত ২৪টিতেই বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী জয়লাভ করেছিলেন। জামায়াত প্রার্থী দিয়েছিল ৬টি সাধারণ ও ২টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে। এর মধ্যে জিতেছিল একটি কাউন্সিলর ও ২টি সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে। বাকিগুলোতে জয়ী হয়েছিল আওয়ামী লীগ সমর্থিত ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।
জামায়াতের দলীয় সূত্র জানায়, রাজশাহী মহানগরীর বেশ কিছু ওয়ার্ডে জামায়াতের ভোটব্যাংক রয়েছে। এ রকম বেছে বেছে এবার ১৪টিতে কাউন্সিলর প্রার্থী দেওয়া হয়েছে। আর ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মধ্যে ৭ ও ১০নং ওয়ার্ডে গত নির্বাচনে জামায়াতের নারী কাউন্সিলর প্রার্থী জয়লাভ করেছিলেন। সেই ওয়ার্ড দুটিতে এবারও নারী প্রার্থী দিয়েছে দলটি।
স্থানীয় বিএনপি দলীয় সূত্র জানায়, গত সিটি নির্বাচনে অধিকাংশ সাধারণ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডে বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীরা জয়লাভ করেন। তাই এবার তারা এত বেশি ওয়ার্ডে জামায়াতকে ছাড় দিতে চান না। অধিকাংশ ওয়ার্ডের বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর
প্রার্থীর দাবি, তারা গত নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন। তাই এবারও তারা সবাই ভোট করবেন। অবশ্য বিএনপির স্থানীয় নেতারা বলছেন, কাউন্সিলর প্রার্থী নিয়ে জামায়াতের সঙ্গে কোনো বিরোধ নেই। তারা যেটা ভালো মনে করেছে, সেটা করছে।
নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন বলেন, ৩০টি ওয়ার্ডে এবারও বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। তবে জামায়াত কতটিতে প্রার্থী দিল, না দিল এ নিয়ে আমাদের ভাবনা নেই। নির্বাচনে আমরা শুধু ধানের শীষের মেয়রপ্রার্থী নিয়েই ভাবছি।
এ ব্যাপারে নগর জামায়াতের নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট আবু ইউসুফ মোহাম্মদ সেলিম বলেন, মেয়রপদে জামায়াতের প্রার্থী দেওয়া হয়নি। স্থানীয়ভাবে যেসব এলাকায় জামায়াতের ভোট বেশি রয়েছে, সেসব এলাকায় কাউন্সিলর পদে জামায়াত সমর্থকরা মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। সে অনুযায়ী ১৪টি সাধারণ ওয়ার্ড এবং ২টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে দল সমর্থিতরা প্রার্থী হয়েছেন।
উল্লেখ্য, আসন্ন সিটি নির্বাচনে মেয়রপদে ৬ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৬৭ জন এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৫২ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। ৯ জুলাই প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন। ১০ জুলাই প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে। ওই দিন থেকে ২৮ জুলাই পর্যন্ত চলবে প্রচারণা। ৩০ জুলাই অনুষ্ঠিত হবে ভোট।