মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার ভূমিহীনদের মাঝে দুর্যোগ সহনীয় ঘর নির্মাণে বরগুনার তালতলী উপজেলায় নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ভূমিহীনদের নামে দুই শতাংশ খাসজমি বরাদ্দ থেকে শুরু করে ঘর নির্মাণ কাজের প্রতিটি ধাপে অনিয়ম, নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার, ঘর নির্মাণের কয়েক ঘণ্টা পর ভেঙে পড়াসহ নানা অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
তালতলী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প আশ্রয়ণ-২ এর আওতায় উপজেলায় ১০০টি ভূমিহীন পরিবারকে ২ শতাংশ খাস জমি বন্দোবস্ত দিয়ে একটি সেমিপাকা গৃহনির্মাণ করে দেয়া হচ্ছে। যার প্রতিটি গৃহনির্মাণের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা। এই প্রকল্পের অধীনে তালতলী উপজেলায় প্রায় ১ কোটি ৭১ লাখ টাকার এই কাজের দেখভাল করছেন স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন।
তালতলী উপজেলায় ৬টি ইউনিয়নে ১০০টি দুর্যোগ সহনীয় ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। উপজেলার বেহেলা, পশ্চিম ঝাড়াখালি গ্রামের অনেকেই জানিয়েছেন, তাদের গ্রামে ভূমিহীনদের জন্য ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে নিম্নমানের ইট, নিম্নমানের বালু, কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে। এমনকি সুবিধাভোগীদের নিকট থেকে নির্মাণ ব্যয়ের জন্য টাকা পয়সা নেওয়ার অভিযোগও উঠেছে। এছাড়া বেহালা গ্রামের উপকারভোগী উর্মিলা রানীর দুর্যোগ সহনশীল ঘর নির্মাণের কয়েক ঘণ্টা পরই ভেঙে পড়ার ঘটনা ঘটেছে।
তালতলী উপজেলার করইবাড়িয়া ইউনিয়নের বেহলা গ্রামের উপকারভোগী রাজ্যেস্বরের স্ত্রী ঊর্মিলা জানান, ঘরের দেয়ালটি ভেঙে পড়ার কিছুক্ষণ আগে তিনি ঘর থেকে বাইরে বের হয়েছিলেন। নয়তো সরকারের দেয়া এ ঘরই তার প্রাণ নিতো।
মালামাল পরিবহনের জন্য তার কাছ থেকে ৯ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে বলে জানান।
পাশের গ্রামের বাসিন্দা উপকারভোগী মনোয়ারের ছেলে মনির হোসেন বলেন, ভালোভাবে ঘর নির্মাণ করবে বলে ঠিকাদার বেল্লাল আমার কাছে ৫ হাজার টাকা চায়। যদি না দেই তাহলে তাদের ইচ্ছামতো কাজ করবে। এছাড়া নিম্নমানের কাজ দেখে প্রতিবাদ করলে ঠিকাদার এসে হুমকি-ধমকি দেয়।
কড়ইবাড়িয়া ইউনিয়নের পশ্চিম ঝাড়াখালী গ্রামের উপকারভোগী আ. রহিম বলেন, আমার ঘরটি নিম্নমানের করা হয়েছে নিম্নমানের ইট, বালু, কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে। যেভাবে কাজ হয়েছে তাতে মনে হয় এই ঘর বেশিদিন টিকবে না।
হরিণবাড়িয়া ব্রিজ সংলগ্ন উপকারভোগী মোঃ সোহাগ বলেন, ঠিকাদার বেল্লাল আমার কাছে ৫ বস্তা সিমেন্ট চায় ঢালাই এর জন্য ও ঘর নির্মাণের কাঠের আড়া চায়। ৫ বস্তা সিমেন্ট আর কাঠ কিনতে আমার ১০ হাজার টাকার বেশি খরচ হয়ে যাবে।
ঠিকাদার বেল্লাল এ অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, আমি কারও কাছে কোন টাকা চাইনি। আর কেউ আমাকে টাকাও দেয়নি।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রুনু বেগমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এ ব্যাপারে আমি কিছুই বলতে পারব না। আপনারা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে কথা বলেন।
তালতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, বেল্লাল ঠিকাদারের শ্রমিক তিনি। ঠিকাদার না বেল্লাল যদি এ ধরনের কাজ করে থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রতিটি ইউনিয়নের প্রতিটি ঘর তিনি নিজে পরিদর্শন করবেন।
জেএন