খবর ২৪ ঘণ্টা ডেস্ক:প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কেবল মহান মুক্তিযুদ্ধ নয়, ভাষা আন্দোলনেও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অসামান্য অবদান রেখেছেন। হাতেগোনা দুয়েকজন সে অবদানের কথা বললেও অনেকেই সেসব কথা বলতেন না।
তিনি বলেন, ভাষা আন্দোলনে তার যে অবদান, একসময় সে ইতিহাস হারিয়ে গেছে। অনেক জ্ঞানী-গুণী মানুষও উল্লেখ করতেন না তার অবদান। ১৯৪৮ সালে বঙ্গবন্ধু যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন, তখন থেকেই বঙ্গবন্ধু ভাষার জন্য আন্দোলন শুরু করেন। ওই বছরই তিনি ভাষা আন্দোলন করতে গিয়ে গ্রেফতার হয়েছেন। তার এসব অবদানের কথা অনেকেই জানতেন, কিন্তু লিখতেন না, বলতেন না।
সোমবার বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বঙ্গবন্ধুর ৯৯তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার অবদানের এসব তথ্য একসময় মুছে দেওয়া হয়েছিল। জাতির পিতার বিরুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনী ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত যেসব রিপোর্ট করে, ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর আমি সেসব রিপোর্ট সংগ্রহ করেছিলাম। সেসব গোয়েন্দা রিপোর্টেই ভাষা আন্দোলনে জাতির পিতা কী করেছিলেন, সেসব তথ্য সংগ্রহ করি। তখন আমি ভাষা আন্দোলন নিয়ে অনেক বক্তব্য দেই। অনেকেই তখন আমার বিরুদ্ধে লেখা লিখেছিলেন। তারা বলেন, আমি নাকি তথ্য আবিষ্কার করেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, কেউ কেউ অবশ্য সেসব কথার উত্তরে লিখলেন। কিন্তু আজ সেই সত্য প্রকাশিত হয়েছে। ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, ‘কারাগারের রোজনামচা’, গোয়েন্দা নথি- এগুলো একে একে প্রকাশ করতে শুরু করেছি। এরই মধ্যে দুই খণ্ডে গোয়েন্দা নথি বের হয়েছে। এর মধ্যে দ্বিতীয় খণ্ডে রয়েছে ১৯৫২ সালে জাতির পিতা যেসব কাজ করেছেন, সেগুলোর কথা। তিনি জেলখানায় থেকেই কিভাবে যোগাযোগ করেছেন, কিভাবে ছাত্রনেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, এমন সব তথ্য পাওয়া যাবে এই খণ্ডে। এরপর ১৯৫৩ সালের রিপোর্ট নিয়ে আরও এক খণ্ড বের হবে। তিনি কিভাবে আন্দোলন করেছেন, সে বিসয়ে আরও তথ্য পাওয়া যাবে এই খণ্ডে।
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, সেই যে ভাষা আন্দোলন, সেই থেকেই কিন্তু স্বাধীনতার সূচনা। ১৯৫২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি জেল থেকে ছাড়া পান তিনি। ফিরেই কিন্তু বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মর্যাদার যে আন্দোলন, তা ফের শুরু করেন। তিনি আন্দোলন চালিয়ে গিয়েছিলেন। ওই সময়ই তিনি বুঝতে পারলেন, এরা (পশ্চিম পাকিস্তানি) তো আমাদের নিজের মায়ের ভাষায় কথা বলতে দেবে না। এরা যেভাবে অধিকার কেড়ে নিচ্ছে, তাতে আর এই হানাদার-পাকিস্তানিদের সঙ্গে থাকা যাবে না। এভাবে দেশ চলে না। স্বাধীনতা অর্জন করতে হবে, সেই চিন্তা ওই ভাষা আন্দোলনের সময়ই বঙ্গবন্ধুর ভাবনায় আসে। ১৯৫৮ সালে যখন আইয়ুব খান মার্শাল ল জারি করে গ্রেফতার করে, তখন থেকেই তার পরিকল্পনা- আর নয়, এবার স্বাধীন হতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তবে স্বাধীনতার কথা বঙ্গবন্ধু কখনও প্রকাশ্যে বলেননি। যেহেতু তিনি স্বাধীনতার সংগ্রাম করবেন, সেহেতু যখন যতটুকু প্রয়োজন, সেই অনুযায়ী ধাপে ধাপে তিনি আন্দোলন-সংগ্রাম এগিয়ে নিয়ে গেছেন। শোষণ আর বঞ্চনার কথা মানুষের মাঝে পৌঁছে দিয়েছেন, মানুষের মধ্যে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছেন। ১৯৭১ সালের সেই অসহযোগ আন্দোলনকে কিভাবে সশস্ত্র বিপ্লবে রূপ দেওয়া যায়, ধীরে ধীরে পরিকল্পিভাবে একটার পর একটা পদক্ষেপ নিয়ে তিনি সেই পরিস্থিতি তৈরি করেন। তারই ফল আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও তাতে বিজয়।
খবর২৪ঘণ্টা, জেএন