খবর ২৪ ঘণ্টা ডেস্ক: ভানুয়াতুতে ‘পাচার হওয়া’ ১০১ বাংলাদেশীকে দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। ওইসব বাংলাদেশীর এতে ঘোর আপত্তি রয়েছে। তারা বলছেন, যদি ফেরত পাঠানো হয় তাহলে তাদের জীবন বিপন্ন হবে। নভেম্বর থেকে ভানুয়াতুর রাজধানী পোর্ট ভিলা’য় রাষ্ট্রীয় তত্ত্বাবধানে রয়েছেন তারা। পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে আটক করে।
ওইসব বাংলাদেশী বলেছেন, তাদেরকে দাসের মতো অবস্থায় বা পরিবেশে আটকে রাখা হয়েছে। পাচার করার দায়ে অভিযুক্ত সেকদাহ সুমন ও বাক্কো নাবিলা বিবি। তাদেরকেও আটক করে মানব পাচার সহ কমপক্ষে ৩০০ অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে। গত সপ্তাহে তাদের জামিন আবেদন করা হয়। কিন্তু ভানুয়াতু হাই কোর্ট সেই আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন রেডিও নিউজিল্যান্ড।
এতে আরো বলা হয়েছে, গত মাসে প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনার জন্য ভানুয়াতু যান বাংলাদেশী এক কূটনীতিক। স্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে তিনি ওইসব বাংলাদেশীর কয়েকজনের সঙ্গে সাক্ষাত করেন। এ তথ্য দিয়েছেন বাংলাদেশী অভিবাসীদের প্রতিনিধি শাহিন খান ও অভিবাসন বিষয়ক একজন কর্মকর্তা।
ক্যানবেরায় বাংলাদেশ হাই কমিশনের একজন সেক্রেটারি নাহিদ আফ্রোজ। তিনি ইমেইলে জানিয়েছেন, ‘ইরেগুলার’ অবস্থায় থাকা ওইসব মানুষকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি আমরা। আমরা মানব পাচার ও চোরাচালানে কোনো অবস্থায়ই প্রণোদনা দিতে পারি না।
ভানুয়াতুর অভিবাসন বিষয়ক কর্মকর্তা স্টিফেন উইলি বলেছেন, এসব বাংলাদেশীর অনেকের ভিসা ও ভ্রমণ সংক্রান্ত কাগজপত্রের মেয়াদ এরই মধ্যে শেষ হয়ে গেছে। যাদের মেয়াদ আছে, তাও অল্প সময়ের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যাবে। তিনি এক সাক্ষাতকারে বলেছেন, আমরা বুঝতে পারছি, এটি একটি মানবিক ইস্যু। তাই যতটা সম্ভব তাদেরকে আমরা সহায়তা করে যাচ্ছি। একই সঙ্গে তাদেরকে বাংলাদেশে ফিরে যেতে সহায়তা করছি। তিনি আরো বলেন, কয়েকজন বাংলাদেশী অভিবাসীকে ভানুয়াতুতে রেখে দেয়া হবে হাইকোর্টে চলমান বিচারের প্রত্যক্ষদর্শী বা সাক্ষী হিসেবে। কিন্তু ডকুমেন্টের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর তাদের বেশির ভাগকেই চলে যেতে হবে।
ওদিকে দেশে প্রত্যাবর্তনের প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছেন আটক ওইসব বাংলাদেশী। তারা বলছেন, বাংলাদেশে তাদের প্রচুর ঋণ আছে। দেশে ফিরলে ‘লোন শার্ক’ বা ঋণদাতাদের টার্গেটে পড়বেন তারা। শাহিন খানের দেয়া একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, আটক ওই ১০১ জন বাংলাদেশীর মধ্যে মাত্র ১৪ জন দেশে ফিরতে রাজি হয়েছেন। ওদিকে কাজ হারানো ও নির্যাতনের কারণে অভিবাসীরা ১৮ লাখ ডলার করে ক্ষতিপূরণ চেয়েছেন। শাহিন খান বলেন, ক্ষতিপূরণ না দেয়া পর্যন্ত আমরা আমাদের অবস্থান পরিবর্তন করবো না। কারণ, আমরা প্রচুর অর্থ হারিয়েছি। দেশে আমাদের অবস্থা অত্যন্ত বাজে। তিনি বলেন, দেশে ফিরলে বাংলাদেশ তাদেরকে কোনো পাওনা বা কাজ দেবে না। তাই তারা ওই ক্ষতিপূরণ চান ভানুয়াতুর কাছে।
শাহিন খান বলেছেন, গতমাসে তাদের সঙ্গে সাক্ষাত করতে গিয়েছিলেন বাংলাদেশী কূটনীতিক নাহিদ আফ্রোজ। এ সময় তিনি তাদের সঙ্গে রুক্ষè আচরণ করেন বলে অভিযোগ তার। শাহিন খান বলেছেন, তিনি আমাদের দাবিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। বলেছেন, তাদেরকে দেশে ফিরতে হবে, না হয় মরতে হবে ‘উইদাউট কেয়ার’। এ অভিযোগের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেন নি নাহিদ আফ্রোজ। এসব অভিবাসীকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার বিষয়েও তিনি ইমেইলে কোনো প্রশ্নের উত্তর দেন নি। এ অবস্থায় স্টিফেন উইলি মনে করেন না, ভানুয়াতু সরকার এসব ব্যক্তিকে কোনো অর্থ পরিশোধ করবে না।
ওদিকে ভানুয়াতু সরকারের বিরুদ্ধেও অভিযোগ করেন শাহিন খান। তিনি বলেন, সরকার থেকে রেশন করে যে খাবার দেয়া হয় তা দিন দিন কমিয়ে দেয়া হচ্ছে। তবে এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন স্টিফেন উইলি। কিন্তু এসব অভিবাসী দীর্ঘ সময় ভানুয়াতুতে থাকায় তাদের আর্থিক সমস্যাকে আরো কঠিন করে তুলেছে। এ জন্যই তাদের অনেকেই দেশে ফিরতে চান না। শাহিন খান বলেন, আমরা এখানে আমাদের পরিবারগুলোর একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। আমাদেরকে এভাবে আটকে রাখায় একটি টাকাও আয় করতে পারছি না।
খবর২৪ঘণ্টা, জেএন