বিশেষ প্রতিনিধি: রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন মেয়র নির্বাচনে মাঠে নামতে বুলবুলকে তিন শর্ত দিলেন নাদিম মোস্তফা। শর্ত হচ্ছে এক- শর্ত পুঠিয়া দুর্গাপুরের বিএনপি’র কমিটি ভেঙে দিয়ে নাদিম মোস্তফার পক্ষের কমিটি দিতে হবে। দুই – বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দিয়ে ফোন করা হবে নাদিম মোস্তফার কাছে। তিন-মহানগর সকল নেতা-কর্মীর কাছে ক্ষমা চেয়ে ধানের শীষের পক্ষে রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মাঠে নামাতে হবে। শনিবার রাতে হঠাৎ বুলবুলের আগমনে এমন শর্ত দেন নাদিম মোস্তফা । রাজশাহী মহানগর বিএনপির একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
গত ২০১৬ সালে ২৭ ডিসেম্বর বুলবুলের নেতৃত্বে মহানগর ও জেলা বিএনপি’র ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে ও দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ভুল বুঝিয়া নাদিম মোস্তফা ও মিজানুর রহমান মিনুকে বাদ দিয়ে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মহানগর ও জেলা কমিটির পদে তিনি সভাপতি হন। অপর দিকে তোফাজ্জল হোসেন তপুকে জেলা সভাপতি করেন। এরপর থেকেই বুলবুলের রাজনীতিতে ধস নামে। এখন রাতের আঁধারে নেতাকর্মীর বাসায় গিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করছেন বলে নাদিম মোস্তফার অনুসারী নেতা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একথা বলেন।
তিনি বলেন, শর্ত গুলো না মানলে বুলবুলের পক্ষে কাজ করবেন না তারা। এদিকে মিনুর পক্ষের বিএনপির এক শীর্ষ নেতা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খবর ২৪ ঘন্টা.কমের বলেন,
মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মেরেছেন আমাদের কিছু করার নেই। কারণ তিনি মিজানুর রহমান মিনু কে বাদ দিয়ে নিজে সভাপতি হওয়ার পর দলীয় হাইকমান্ডের কাছে মিনুর বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা তার ঠিক হয়নি। তিনি সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ার পর মহানগর বিএনপি’র ব্যাপক দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছে।
এছাড়াও সিটি কর্পোরেশন মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পরে দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে অসদাচারণ নেতাকর্মীদের পাশে না থাকার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
ওই নেতাকে খবর ২৪ ঘন্টা.কমের পক্ষে প্রশ্ন যদি এমনই হয় তাহলে তো সরকার সমর্থিত মেয়র প্রার্থীর জয় নিশ্চিত, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন আমাদের কিছুই করার নেই। যে যেমন কর্ম করবে সে তেমন ফল পাবে। বুলবুল বিএনপি’র মহাগর ও জেলা কমিটি নিয়ে যে, নোংরামি করেছে তার খেসারত তাকেই দিতে হবে।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ২০১৩ সালের নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের পক্ষেই মাঠে নেমেছিলেন দলের প্রভাবশালী নেতা নাদিম মোস্তফা। এরপর প্রায় পাঁচ বছর এই দুই নেতাকে কখনো একসাথে দেখা যায়নি। তবে আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে এবার গভীর রাতে নাদিমের দুয়ারে গেলেন বুলবুল। তবে নাদিমের সঙ্গে বুলবুলের সে দেখা খুব একটা কথা হয়নি বলেই জানা গেছে।
সূত্র জানায়, এতোদিন দূরত্ব থাকলেও আসন্ন সিটি নির্বাচনেও বিএনপির মনোনয়ন পাওয়ায় জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নাদিম মোস্তফার কাছে নেওয়ার চেষ্টা করছেন বুলবুল। তাই দীর্ঘ পাঁচ বছর পর শনিবার গভীর রাতে ঘনিষ্ঠ কয়েকজন নেতাকর্মীকে নিয়ে নগরীর পাঠানপাড়ায় নাদিম মোস্তফার বাড়ি যান বুলবুল।
এ সময় বেশ কিছুক্ষণ একসাথে সময় কাটান এই দুই নেতা। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে তাদের মধ্যে কথা হয়। মেয়র বুলবুল গত নির্বাচনের মতো এবারও তার পক্ষে নাদিম মোস্তফাকে নির্বাচনী মাঠে নামার আহ্বান জানান। তবে মাঠে নামার বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত জানাননি নাদিম মোস্তফা।
তবে শর্ত গুলো পূরণ হলেই মাঠে নামবেন নাদিম মোস্তফার। এমন আভাস দিলেন নাদিম মোস্তফা ঘনিষ্টজনেরা ।
জানা গেছে, ২০১৩ সালের পর বুলবুল ও নাদিমকে শুধু একসাথে দেখা গেছে আদালত চত্বরে। পুলিশ কনস্টেবল সিদ্ধার্থ হত্যা মামলাসহ রাজনৈতিক বিভিন্ন মামলায় তারা আদালতে হাজিরা দিতে যান। তবে রাজনৈতিক কোনো কর্মকাণ্ডে মেয়র বুলবুল এবং জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নাদিম মোস্তফাকে গেল পাঁচ বছরে কখনও একসাথে দেখা যায়নি। এমনকি নাদিম মোস্তফা রাজশাহীতে অবস্থান করলেও কখনও এই দুই নেতা এক সাথে হননি।
হঠাৎ বুলবুলের আগমন নিয়ে জানতে চাইলে নাদিম মোস্তফা বলেন, শনিবার রাত ১২টা ২০ মিনিট। বুলবুল তার বাসায় যান। সেখানে তিনি রাত দেড়টা পর্যন্ত ছিলেন। এ সময় বুলবুল তাকে সিটি নির্বাচনে তার পক্ষে মাঠে নামার অনুরোধ করেন। তিনি বুলবুলকে তার বিরুদ্ধে করা নানা কাজের কথা স্মরণ করিয়ে দেন। মেয়র বুলবুল কৌশলে তার কথাগুলো এড়িয়ে যান।
মহানগর বিএনপির সভাপতি ও সিটি মেয়র মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, যেহেতু আমি প্রার্থী হচ্ছি। তাই সব নেতার কাছে যাওয়া আমার নৈতিক দায়িত্ব। আমি সব সিনিয়র নেতাদের সাথেই দেখা করে কথা বলেছি। তারই ধারাবাহিকতায় নাদিম মোস্তফার বাড়িতেও গিয়েছি। পাঁচ বছর তার বাড়িতে না গেলেও বিভিন্ন স্থানে আমাদের দেখা হয়েছে, কথাও হয়েছে। আমাদের মাঝে কোনো সমস্যা নেই।
খবর২৪ঘণ্টা.কম/নজ