বাঘা প্রতিনিধি: কমদামে কেনা রোগাক্রান্ত পশু রাতের আঁধারে জবাই করে দিনের বেলায় তা সুস্থ সবল পশুর মাংস বলে বিক্রি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সহজ সরল ক্রেতারা ন্যায্য দামে এসব মাংস কিনে প্রতারিত হচ্ছেন হরহামেসাই । আর এভাবে ক্রেতা ঠকিয়ে লাভবান হচ্ছে অসাধু মাংস ব্যবসায়ীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রোববার বাঘার হাটে অসুস্থ গরু জবাই করে মাংস বিক্রি করেন স্থানীয় কয়েকজন মাংস ব্যবসায়ী। এই মাংস বিক্রির জন্য রাতে গরুটি জবাই করেন কসাই সাজেদুল ও তার ব্যবসায়ী পার্টনার জহুরুল ও মনি। বিষয়টি বাজার পাহারাদারদের নজরে এলে মাংস ব্যবসায়ীরা (কসাই) স্থানীয়ভাবে সমাঝোতা করেন। এর আগে বাঘা মাজার গেট এলাকায় মরা গরু জবাই করে মাংস বিক্রির সময় হাতে নাতে আটক করা হয়- রতন ও সারোয়ার নামের স্থানীয় দুই কসাইকে। এ অভিযোগে পরে তাদের ভ্রাম্যমান আদালতে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। বিষয়টি জানাজানির পর মাংস কেনার ব্যাপারে ক্রেতাদের মধ্যে ভীতির সঞ্চয় হয়। কসাইরাও সুযোগ বুঝে সুস্থ্য গরুর সাথে অসুস্থ্য গরু জবাই করে বিক্রি করেন। এভাবেই বাজার ছেয়ে যায় গরু ও ছাগলের রোগাক্রান্ত মাংসে। সাপ্তাহিক হাট বাজার ছাড়াও স্থানীয় বাজারে প্রতিদিন জবাই করা হয় গরু,মহিষ,ছাগলসহ বিভিন্ন পশু। এর মধ্যে বেশিরভাগ পশু বাইরে থেকে জবাই করে বাজারে আনা হয়। স্থানীয়রা বলছেন এ ব্যবসার সাথে আরো অনেকেই জড়িত রয়েছে, যাদের বিচার হওয়া দরকার।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ক্রেতা জানান, কোনো পশু অসুস্থ হলে পশুর মালিক মাংস ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। ওই পশুর আনুমানিক মূল্য ৫০ হাজার টাকা হলেও ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা কম মূল্যে কেনে মাংস ব্যবসায়ীরা। এরপর জবাই করে বাজারে মাংস বিক্রি করা হয়। তবে এর অধিকাংশই চলে যায় স্থানীয় খাবার হোটেলে। জবাই করা পশুর যেসব অংশ মানুষের খাবার অযোগ্য সেগুলো এখন আর বাদ দেওয়া হয় না।
পশু জবাই ও মাংসের মান নিয়ন্ত্রণ আইন মতে, পশু জবাইয়ের আগে ভেটেরিনারি কর্মকর্তা কর্তৃক পশুটি জবাইয়ের উপযোগী বলে সনদপত্র থাকতে হবে। কিন্তু বিধি মোতাবেক পরীক্ষা ছাড়াই পশু জবাই কওে মাংস বিক্রি করা হচ্ছে দেদারছে। বিধান লঙ্ঘন কারিদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী, কারাদন্ড অথবা অর্থদন্ড, কিংবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবার বিধান থাকলেও এ আইনের তোয়াক্কা করছেন না এসব মাংস ব্যবসায়ীরা।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, দিনের বেলায় দ্রব্য মূল্যে নিয়ন্ত্রনে বাজার মনিটরিং এর সীমাবদ্ধ থাকলেও রাতের আধারে লুকিয়ে করা কাজগুলো রয়েছে অধরা। ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার নিয়ম থাকলেও বর্তমানে তা নিষক্রিয়। বিশেষ করে পৌরসভার কোনো মনিটরিং ব্যবস্থা নেই। মাংস ব্যবসায়ীদের জন্য কোনো বাজারে কসাইখানা থাকলেও যত্রতত্র পশু জবাই করে বাজারে মাংস নিয়ে আসা হয়। মাংস ব্যবসায়ীরা জানান,কসাইখানা থাকলেও এগুলো পরিস্কারের অভাবে পশু জবাইয়ের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। মাংস ব্যবসায়ী সাজেদুল জানান, রোববার হাটে তার জবাই করা গরুটির পায়ে আঘাত লাগা ছিল। কিন্তু রোগাক্রান্ত ছিলনা। মিথ্যা অভিযোগে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হয়েছিল।
উপজেলা ভেটেরিনারি সার্জন আব্দুল কাদির বলেন, প্রায় কসাইরা পশু পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আসেন না। নিয়মিত মনিটরিং না থাকায় সুযোগ নিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। অসুস্থ্য পশুর মাংস খেলে মানুষের বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান তিনি।
বাজারে রোগাক্রান্ত ও মরা গরু-মহিষ ও ছাগলের মাংস বিক্রি হলে সঙ্গে সঙ্গে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান উপজেলা নির্বাহি অফিসার। এতে সচেতন সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিবেন বলে জানান বাঘা ও আড়ানী পৌর মেয়র।
খবর২৪ঘণ্টা.কম/নজ
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পুর্ণ বেআইনি।