বাগমারা প্রতিনিধ: বাগমারায় এক বছরে ১৭ খুন। খুনের মামলা গুলোর কোন অগ্রগতি নেই। ফলে খুন বেড়েই চলেছে। এ নিয়ে জনমনে ক্ষোভ ও আতংক বিরাজ করছে। অপরাধীরা খুন সংগঠিত করার পরেও মামলার চার্জসীটে দীর্ঘ সূত্রিতার কারণে অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
বাগমারা থানা সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য মতে, ১৮ এপ্রিল ২০১৮ উপজেলার নরদাশ ইউনিয়নের একটি বিলে মাছচাষ নিয়ে বিরোধের জের ধরে জোকাবিল মৎস্যজীবী সমিতির কোষাধ্যক্ষ আনিসুর রহমান মৃধাকে (৬০) প্রকাশ্যে ছেলের সামনে কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষরা।
১৩ এপ্রিল রাত ৮ টার দিকে উপজেলার ভাসুপাড়া গ্রামে নানার বাড়ি থেকে খাদিজা খাতুন (১৫) নামে এক তরুনীর ঝূলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সে উপজেলার আউচপাড়া ইউনিয়নের বিষপুর গ্রামের আব্দুল মালেকের প্রথম পক্ষের মেয়ে। এ ঘটনায় থানায় একটি ইউডি মামলা দায়ের হয়েছে।
গত বছরের ২১ ডিসেম্বর উপজেলার হামিরকুৎসা ইউনিয়নের আলোকনগর শেখপাড়া গ্রামের মৃত ওয়াজেদ আলীর দুই ছেলে মন্টু প্রামানিক ও নজের আলী প্রামানিকের মধ্যে জমিজমা নিয়ে বিরোধ বিরোধের জের ধরে ছোট ভাইয়ের হাঁসুয়ার কোপে বড় ভাই কৃষক মন্টু প্রামানিক (৫২) খুন হন। এ ঘটনায় থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।
৭ নভেম্বর উপজেলার আউচপাড়া ইউনিয়নের রক্ষিতপাড়া গ্রামে জমিজমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষের হামলায় কৃষক আকবর আলী (৬৫) নিহত হন। এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় চারজনের বিরুদ্ধে থানায় হত্যা মামলা দায়ের হয়।
১০ নভেম্বর বড়বিহানালী ইউনিয়নের গোয়াবাড়ি গ্রামের ভ্যানচালক আনিসুর রহমান (৬৮) খুন হন। এ খুনের ঘটনায় নিহত আনিছুর রহমানের স্ত্রী জহুরা বেগম ও ছেলে সাইদুল ইসলামকে আটক করা হলে তারা হত্যাকান্ডের কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দী দেয়।
২৭ নভেম্বর রাতে উপজেলার মাড়িয়া ইউনিয়নের মাড়িয়া গ্রামের আজাহার আলীর ছেলে কৃষক খোরশেদ আলমকে (৩৫) দুর্বৃত্তরা কুপিয়ে খুন করে। এ ঘটনায় সাতজনকে আসামি করে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হলেও এখনো কেউ গ্রেফতার হয়নি।
২ অক্টোবর একই ইউনিয়নের দাসপাড়া গ্রামের জহুরল ইসলামের স্ত্রী আকলিমা বেগম (২২) নামে এক গৃহবধূ রহস্যজনকভাবে খুন হন। এ খুনের ঘটনায় থানায় অপমৃত্যুর মামলা হয়।
২৪ সেপ্টেম্বর উপজেলার গনিপুর ইউনিয়নের রঘুপাড়া গ্রামে পরকীয়ার জের ধরে স্ত্রীর হাতে স্বামী সাজ্জাদ হোসেন (২৮) এবং একই দিন আউচপাড়া ইউনিয়নের শিয়ালী গ্রামে পারিবারিক কলহের জের ধরে পাষন্ড স্বামীর কোদালের কোপে স্ত্রী তহমিনা বেগম (২৫) খুন হন। একই দিনে পৃথক এই দুইটি হত্যাকান্ডের ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
৮ সেপ্টেম্বর গোবিন্দপাড়া ইউনিয়নের রমজানপাড়া কারিগরি কলেজের পেছনে পাট ক্ষেতের মধ্যে থেকে অজ্ঞাত এক যুবককের (৩০) গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
৭ জুলাই শুভডাঙ্গা ইউনিয়নের বুজরুক কৌড় গ্রামের আব্দুর রশিদ (৩০) নামে এক যুবককে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় নিহত আব্দুর রশিদের বাবা লোকমান আলী বাদি হয়ে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
১০ জুন রমজানের রাতে গ্রামের একটি মসজিদ থেকে তারাবীর নামাজ শেষে বাড়ী ফিরার সময় দুর্বৃত্তরা খাঁপুর দাখিল মাদরসার কম্পিউটার বিভাগের শিক্ষক আবুল কালাম আজাদকে (৩৮) কুপিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনায় থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হলে পুলিশ তিনজনকে আটক করে।
এর মাত্র চার দিন আগে ৬ জুন গোবিন্দপাড়া ইউনিয়নের শান্তিপাড়া গ্রামের বৃদ্ধ জেকের আলীকে (৬৫) পিটিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষরা। এ ঘটনায় পাঁচজনের বিরুদ্ধে থানায় হত্যা মামলা দায়ের হলেও একমাত্র রহিদুল ইসলাম ছাড়া এখন পর্যন্ত আর কেউ গ্রেফতার হয়নি।
৯ এপ্রিল ক্রয়কৃত জমির দখল নিয়ে বিরোধের জের ধরে নরদাশ ইউনিয়নের সাঁইধারা গ্রামের রহিদুল ইসলাম (৩০) নামে এক প্রতিবন্ধীকে কুপিয়ে খুন করে প্রতিপক্ষরা।
১ মার্চ অপহরণের চার দিন পর একটি পরিত্যক্ত ইটভাটার মধ্যে থেকে দ্বীপপুর ইউনিয়নের দ্বীপপুর গ্রামের আনোয়ার হোসেন (৫২) নামের এক ব্যবসায়ীর গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ খুনের রহস্য এখনো উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ।
২৭ ফেব্রুয়ারী রাতে গনিপুর ইউনিয়নের আচিনঘাট গ্রামের আজগর আলীর ছেলে পিন্টু হোসেন (২৫) দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হন।
এর দুইদিন আগে ২৪ ফেব্রুয়ারী আউচপাড়া ইউনিয়নের রক্ষিতপাড়া গ্রামে ভাতিজার ছুিরকাঘাতে খুন হন চাচা তজের আলী (৪০)।
১৫ ফেব্রুয়ারী গোবিন্দপাড়া ইউনিয়নের হাটদামনাশ হাজীপাড়া গ্রামে মুনমুন খাতুন (২২) নামে এক গৃহবধূ স্বামীর হাতে খুন হন।
আগামীতে খুন ঘটনা বেড়ে যেতে পারে বলে আশাংকা প্রকাশছে বাগমারা সচেতন মহল।
খবর২৪ঘণ্টা.কম/নজ