প্রভাষ আমিন : ৫ আগস্ট ধানমন্ডি এলাকায় সংঘর্ষ কাভার করার সময় দুর্বৃত্তদের হামলায় অন্তত ১২ জন সাংবাদিক আহত হয়েছিলেন। মজাটা হলো, সাংবাদিকদের উপর হামলা হয়েছিল পুলিশের সামনেই, কখনো পুলিশের প্রশ্রয়ে। কিন্তু পুলিশ কাউকেই গ্রেপ্তার করেনি, সাংবাদিকদের রক্ষায় এগিয়ে আসেনি। কিন্তু হামলার প্রতিবাদে সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন মাঠে নামার পর টনক নড়ে সরকারের।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বললেন, সাংবাদিকরা হামলাকারীদের নাম-ঠিকানা দিলে পুলিশ গ্রেপ্তার করবে। কিন্তু হামলাকারীদের খোঁজে বের করার দায়িত্ব সাংবাদিকদের নয়। সব পত্রিকা ও টিভিতে হামলাকারীগের ছবি দেখা গেছে। কিন্তু গ্রেপ্তার হয়নি।
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুও হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের আশ্বাস দিয়েছিলেন। আমরা আশ্বস্থ হয়েছিলাম। হামলার ঠিক এক সপ্তাহ পর ১২ আগস্ট রোববার চাঁদপুরের এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছিলেন, ভিডিও ফুটেজ দেখে হামলাকারীদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তার কথা শুনে মনে হয়েছিল, এবার নিশ্চয়ই হামলাকারীরা ধরা পড়বে। অন্য মন্ত্রীরা যাই বলুন, পুলিশ তো নিশ্চয়ই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশ পালন করবে। তবে সাংবাদিকদের উপর হামলাকারীদের ধরতে এক সপ্তাহ পর পুলিশকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশ দিতে হবে কেন, এটা মাথায় ঢোকেনি। পুলিশের তো স্বাভাবিকভাবেই পত্রিকায় ছাপা হওয়া ছবি আর টিভিতে সম্প্রচারিত ফুটেজ দেখে হামলাকারীদের ধরার কথা। যাক তবুও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশের কথা শুনে আশ্বস্থ হয়েছিলাম, এইবার নিশ্চয়ই হামলাকারীরা ধরা পড়বেই পড়বে। কিন্তু হামলার দুই সপ্তাহ এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশের এক সপ্তাহ পূর্তি হচ্ছে। আজ আরেক রোববার। কিন্তু বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করলাম সাংবাদিকদের উপর হামলাকারীদের কাউকেই পুলিশ ধরতে পারেনি। ভিডিও ফুটেজ দেখে কাউকে চিহ্নিত করতে পেরেছে, এমন খবরও পাইনি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশ অমান্য করতে পারেন, পুলিশ বাহিনীতে এমন ক্ষমতাধর লোকও তাহলে আছে? পুলিশ পারে না, এমন বদনাম দেওয়া যাবে না। এই সময়ে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন ও কোটা সংস্কার আন্দোলনে অভিযোগে ৯৯ জনকে আটক করা হয়েছে। এদের মধ্যে পাবলিক-প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী যেমন রয়েছে, আছে নারী উদ্যোক্তাও। পুলিশ এতটাই তৎপর ও দক্ষ, ¯্রফে সন্দেহের বশে সিরাজগঞ্জের এক চরে গ্রামের বাড়িতে ঘুমিয়ে থাকা ইডেন কলেজের এক ছাত্রীকে ধরে এনেছে। কিন্তু আটক ৯৯ জনের মধ্যে একজনও সাংবাদিকদের উপর হামলাকারী নয়।
এখন মনে হচ্ছে, মন্ত্রীরা আমাদের ছেলে ভোলানো আশ্বাস দিয়েছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশও নিশ্চয়ই লোক দেখানো। নইলে তার নির্দেশ পুলিশ মানবে না কেন? মন্ত্রীরা জানেন, সাংবাদিকদের হম্বিতম্বি সাময়িক। আর তারা মানববন্ধনের মতো নিরীহ কর্মসূচি ছাড়া আর কিছু করার সক্ষমতা নেই দ্বিধাবিভক্ত সাংবাদিকদের। তাদের ধারণাই সঠিক, কারণ সাংবাদিক সংগঠনগুলোও এই হামলার বিষয় ভুলে গেছে।
লেখক : হেড অব নিউজ, এটিএন নিউজ