পাবনা ব্যুরো: বর্ষার আগমনের সঙ্গে জেলার নিচু বিল ও নদী অঞ্চলের সাধারণ মানুষের যাতায়াতের জন্য অতি প্রয়োজনীয় মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে নৌকা। প্রয়োজন ভেদে এই নৌকা কিনে বা তৈরি করিয়ে নেন সাধারণ ক্রেতারা।
সময়ের স্বল্পতার কারণে বেশিরভাগ কৃষক ও মৎস্যজীবীরা হাট থেকে নৌকা কিনে নেন। আকার, ধরন আর কাঠের উপর নির্ভর করে এর দাম নির্ধারণ করেন বিক্রেতারা। সপ্তাহে দুইদিন জেলার ফরিদপুর উপজেলার বিয়েলবাড়ি ইউনিয়নের এরশাদ নগরে এই নৌকার হাট বসে।
পাবনা জেলার ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুর উপজেলার শেষ প্রান্তে বিয়েলবাড়ি ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নের এরশাদ নগর নামে এই গ্রামে দীর্ঘ তিন যুগেরও বেশি সময় ধরে চলে আসছে ঐতিহ্যবাহী নৌকার হাট। সপ্তাহে দুইদিন রবি ও বুধবার সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলে নৌকা কেনাবেচা।
গ্রামের স্বাভাবিক হাটগুলোর মত এই হাটেও মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের পণ্য কেনাবেচা হয়ে থাকে। তবে বর্ষার সময় জেলা ও জেলার বাহির থেকে শুধু নৌকা কেনার জন্য ক্রেতারা এসে থাকেন এই হাটে। প্রতিহাটে দুই থেকে তিনশ ছোট বড় নৌকা বিক্রি হয়। তিন হাজার থেকে শুরু করে বিশ হাজার টাকার নৌকাও এই হাটে বিক্রি হয়। ভালো আর বড় নৌকা নিতে হলে নৌকার কারিগরদের দিয়ে তৈরি করিয়ে নিতে হয় মনের মত নৌকা।
সালের বন্যার পর থেকে এই এরশাদ নগরে হাট শুরু হয়। বর্ষায় সাধারণ মানুষদের বন্যার হাত থেকে রক্ষার জন্য প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হোসাইন মোহম্মদ এরশাদ এই অঞ্চলের বাঁধ নির্মাণ করেন। সেই সময় থেকে স্থানীয়রা এই হাটের নামকরণ করেন এরশাদ নগর হাট। চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুর উপজেলার প্রায় ২০টি গ্রামের সাধারণ মানুষ বিশেষ করে কৃষক ও মৎস্যজীবীরা এই হাট থেকে নৌকা কিনে থাকেন। জেলার বাহিরে সিরাজগঞ্জ, বাঘাবাড়ি, উল্লাপাড়া ও নাটোর জেলার চলনবিল এলাকার নিচু অঞ্চলের বিল ও নদী পারের মানুষ প্রয়োজন ভেদে এই হাট থেকে নৌকা কিনে থাকেন।
এ অঞ্চলের প্রায় শতাধিক মানুষ নৌকা তৈরির পেশার সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে। বছরের বৈশাখ থেকে শুরু করে শ্রাবণ মাস পর্যন্ত এই চার মাস নৌকার হাট বেশ জমজমাট থাকে। তবে এবারের নৌকার দাম নিয়ে ক্রেতাদের বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতির জন্য ভালো নেই নৌকা তৈরির কারিগররা।
সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কথা হয় পাবনা সিসিক শিল্প নগরীর উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. রফিকুল ইসলামের সঙ্গে।
তিনি বলেন, নৌকা আমাদের গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য বহন করে। নৌকা আমাদের স্বাধীনতা ও জাতীয় প্রতীক। বছরের নির্দিষ্ট সময়ে জেলার এই অঞ্চলে নৌকার হাট বসে। বর্তমান করোনাকালে নানা সমস্যার মধ্যে সব শ্রেণীপেশার মানুষ জীবন যাপন করছেন। সরকার সব বাধা অতিক্রম করে দেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করছে। এই শিল্পের সঙ্গে যারা জড়িত রয়েছেন তাদের তালিকা সংগ্রহ করে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের উদ্যোগসহ তাদের প্রণোদনার আওতায় নিয়ে আসার কথা জানান তিনি।
খবর২৪ঘন্টা/নই