পাবনা প্রতিনিধি: ‘শতবর্ষে শত প্রাণ, বাজুক মনে ঐক্যতান’ এই শ্লোগানে পালিত হচ্ছে আলোকিত মানুষ গড়ার বিদ্যাপীঠ পাবনার পাকশী রেলওয়ে সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূর্তি অনুষ্ঠান।
শুক্রবার (১৮ জানুয়ারী) দুপুর হতে সন্ধ্যারাত পর্যন্ত বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বসেছিল নবীন আর প্রবীণদের এক মিলনমেলা। এ উপলক্ষে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে যেন বাঁধভাঙ্গা আনন্দ আর উৎসবের সৃষ্টি হয়েছে সেখানে।
অনুষ্ঠানের প্রথম দিনেই বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থী, নবীন-প্রবীণের আড্ডায় প্রাণ ফিরে পায় দুইদিনব্যাপী এ আয়োজন। সহ¯্রাধীক শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক তাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে উপস্থিত হয়ে একে অপরের সাথে কুশল বিনিময়ে প্রতিষ্ঠান চত্বর হয়ে ওঠে মুখরিত। এ যেন এক অন্যরকম দৃশ্য।
বিশাল প্যান্ডেল জুড়ে চলে দিনভর বিভিন্ন ব্যাচের শৈশবের কথা, স্মৃতিচারণ, আলোচনা সভা, সংবর্ধনা। ফাঁকে ফাঁকে চলে বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীদের সেলফি আর ফটোসেশন। এছাড়াও বর্তমান শিক্ষার্থীরা আবীর রঙে রাঙিয়ে দেয় নবীন-প্রবীণ শিক্ষার্থীদের। দীর্ঘদিন পর প্রিয় সহপাঠি বা প্রিয় বান্ধবীকে কাছে পেয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন অনেকেই।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে পতাকা উত্তোলন করে অনুষ্ঠানের প্রথমদিনে বেলুন উড়িয়ে কর্মসূচির শুভ উদ্বোধন করেন পাবনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামসুর রহমান শরীফ। বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ এর সভাপতি, পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের ব্যাবস্থাপক (ডিআরএম) মোহাম্মদ নাজমুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন, শামসুর রহমান শরীফ ডিলু এমপি। বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন, ঈশ্বরদী উপজেলা পরিষদ এর চেয়ারম্যান মোকলেছুর রহমান মিন্টু, ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আহমেদ হোসেন ভূইয়া, বিবিএস কেবলস এর পরিচালক আশরাফ আলী খাঁন মঞ্জু। অন্যদের মাঝে বক্তব্য রাখেন, ঈশ্বরদী উপজেলা আওয়ামীলীগ এর সহ-সভাপতি মোহাম্মদ রশীদুল্লাহ, শতবর্ষ উদযাপন কমিটির আহবায়ক হাবিবুল ইসলাম হবিবুল, পাকশী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনামুল হক বিশ্বাস, প্রাক্তন ছাত্র সাইফুল আলম বাবু মন্ডল, প্রাক্তন ছাত্রী মিলা মাহফুজা, নুরজাহান জলী, ফরিদা ইয়াসমিন রিনা, নুরুন্নাহার বেলী, প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন।
শতবর্ষ পূর্তি উৎসবে আসা শিক্ষার্থীদের অনেকেই দেশে ও বিদেশে প্রতিষ্ঠিত। তারা প্রথমদিনেই ফিরে যান উচ্ছল তারুণ্যে ভরা দিনগুলোতে। পুরোনো সব বন্ধু আর সহপাঠীকে পরষ্পর জড়িয়ে ধরে আত্মহারা হয়ে হাত হাত ধরে টেনে বুকে জড়িয়ে ধরে কুশল বিনিময় করেন। অনেকে আবার পুরোনো সহপাঠীদের পেয়ে সেলফি তুলতে ব্যাস্ত। কেউ কেউ স্কুল আঙিনায় হেঁটে হেঁটে পুরোনো গাছগুলো খুঁজতে থাকে, যে গাছতলায় বসে সহপাঠীদের নিয়ে আড্ডা দেওয়ার সব স্মৃতিচারণ করে ক্যামেরায় পুরোনো বান্ধবীদের সাথে ছবি তুলে ফটোসেশন করেন। দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত পাকশীর সড়কগুলো ছিলো লোকারণ্য। হাজারো নবীন প্রবীণের প্রাণোচ্ছল অংশগ্রহনে সবুজে প্রকৃতি আর শীতের সন্ধ্যা যেন আরও চঞ্চল হয়ে ওঠে। মুখর হয়ে ওঠে স্কুলমাঠ প্রাঙ্গন। যেন সবার মাঝে আনন্দের ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে। অনুষ্ঠানে আগত সকলের আপ্যায়ন, চিকিৎসা, তদারকিসহ সব ব্যাবসস্থা নেয় আয়োজক
কমিটি। এছাড়াও প্রশাসনের পক্ষ থেকে ছিল কঠোর নিরাপত্তা উৎসবের চারিদিকে।
পাকশী রেলওয়ে সরকারী বালিকা বিদ্যালয়ের গৌরবময় পথচলা শতবর্ষ উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানের দ্বিতীয়দিন শনিবার (১৯ জানুয়ারী) দিনব্যাপী শিক্ষার্থীদের স্মৃতিচারন অনুষ্ঠান শুরু হবে সকাল দশটা থেকে। বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হবে বৃটিশ শাসনামলে পরিকল্পিত নগরী পাকশীর অপরুপ নৈসর্গিক পরিবেশে প্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী বাংলাদেশ রেলওয়ে সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তি ও পুনর্মিলনীর এই আয়োজন।
খবর ২৪ঘণ্টা/ জেএন