খবর২৪ঘন্টা নিউজ ডেস্ক: রাজধানীতে কোরবানির পশুর হাট বসানোর দাবিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টদের প্রতি আইনি (লিগ্যাল) নোটিশ পাঠানো হয়েছে। ঢাকার স্থায়ী বাসিন্দা মোহাম্মদপুরের তাজ জামে মসজিদের খতিব খন্দকার মুহম্মদ জালাল উদ্দিনের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শেখ ওমর শরীফ এই নোটিশ পাঠিয়েছেন।
নোটিশ পাওয়ার দুই কার্যদিবসের মধ্যে ঢাকায় কোরবানির পশুর হাট না বসানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঢাকায় পশুর হাটের ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নোটিশে বলা হয়, “সাংবিধানিকভাবে যেহেতু বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, সুতরাং ইসলামি আকিদাসমূহ রাষ্ট্র দ্বারা সুরক্ষিত। বাংলাদেশের সংবিধানের ৪১ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে: ‘আইন, জনশৃঙ্খলা ও নৈতিকতা সাপেক্ষে প্রত্যেক নাগরিকের যে কোনো ধর্ম অবলম্বন, পালন বা প্রচারের অধিকার রহিয়াছে।’ সুষ্ঠুভাবে কোরবানির পশু কিনতে পারা ও পশু কোরবানি করতে পারা বাংলাদেশের প্রত্যেক মুসলিমের সাংবিধানিক অধিকার। অথচ আপনাদের সিদ্ধান্ত রাজধানীর মুসলিমদের তাদের সাংবিধানিক অধিকার পালনে বাধা সৃষ্টি করছে।’
নোটিশে উল্লেখ করা হয়, ‘গত ১২ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত এক সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে, পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে এ বছর রাজধানীতে কোরবানির পশুর হাট বসতে দেয়া হবে না। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফ মাহমুদ অপু স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এমন তথ্য জানানো হয়। সংবাদ দেশের প্রায় সব গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।’
‘যদিও পবিত্র ঈদুল আজহা মুসলমানদের একটি দ্বীনি উৎসব এবং পশু কোরবানি একটি ইবাদত। ঈদুল আজহায় সাধ্যমতো পশু কোরবানি করা প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলমানের একটি ওয়াজিব (বাধ্যতামূলক) আমল। কোরবানির পশুর হাট, পশু কেনা-বেচা, পশু কোরবানি ইত্যাদি কাজ সারতে সারা বছর মাত্র তিন-চার দিন লাগে। কোরবানির পশুর হাট প্রকৃতপক্ষে দেশবাসীর নাগালের মধ্যেই বসাতে হবে। কোরবানির জন্য পশু কিনতে পারা মুসলমানদের একটি নাগরিক অধিকার। অথচ আপনারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এ বছর ঢাকায় পশুর হাট বসাতেই দেবেন না।’
নোটিশে বলা হয়, ‘তাই তথাকথিত করোনাভাইরাস সংক্রমণের সাথে পশু কোরবানি করা কিংবা কোরবানির পশুর কোনো সম্পর্ক নেই। সরকার ইতোমধ্যে সারাদেশে সাধারণ ছুটির মাধ্যমে ঘোষিত কথিত লকডাউনও অনেকটাই তুলে নিয়েছে। তাছাড়া মানুষকে ঘরে আটকে রেখে লকডাউন করলে করোনায় মৃত্যুহার কমে—এমন ধারণার পক্ষে কোনো প্রমাণিত বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।’
‘সারা বিশ্বে যেসব দেশে করোনায় সবচেয়ে বেশি হারে মৃত্যু হয়েছে (মিলিয়ন জনসংখ্যায় মৃত্যুহার হিসেবে), তার প্রথম ১০টিতেই লকডাউন হয়েছিল। অন্যদিকে লকডাউন না হয়েও সুইডেন মৃত্যুহারের দিক থেকে ১১তম অবস্থানে আছে। আবার অনেক দেশে লকডাউন তুলে নেয়ার পরও আক্রান্তের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। এ ব্যাপারে গত ২২ মে দৈনিক “দি সান” পত্রিকায় বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।’
নোটিশে আরও বলা হয়, “রসায়নে নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী ও স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির প্রফেসর মাইকেল লেভিট আরও প্রায় দুই মাস আগেই বলেন, করোনাভাইরাস মহামারি রোধে বিশ্বব্যাপী জারিকৃত লকডাউন ‘বিশাল ভুল’ ছিল। এতে সমাজের বড় ক্ষতির পাশাপাশি কোনো ধরনের হার্ড ইমিউনিটি প্রতিষ্ঠিত হয়নি।” আনহার্ড ডটকমে প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে প্রফেসর লেভিট বলেন, চীন করোনার হুমকি কীভাবে মোকাবিলা করেছে তা যদি বিশ্ব ভালোভাবে খেয়াল করত, তবে সরকারগুলো ভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নিত। বিশেষ করে অর্থনৈতিক কার্যক্রম বন্ধ করত না।
‘যদি আবারও একই কাজ করতে হয়, সেক্ষেত্রে আমাদের অনুরোধ হবে মুখের মাস্ক, হাত জীবাণুমুক্তকরণ, এমন পরিশোধ ব্যবস্থা চালু যেখানে স্পর্শের দরকার হয় না এবং শুধু বয়স্কদের আইসোলেশনে রাখা প্রয়োজন’,- বলা হয় নোটিশে।
খবর২৪ঘন্টা/নই