নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীর পবা উপজেলা পরিষদ চত্বরে এসেই এখন থেকে চোখে পড়বে একটি পাঠাগার। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘আলোর উঠান’। ব্যতিক্রমধর্মী এ পাঠাগারে সারি-সারি তাকে সাজানো রয়েছে বিভিন্ন ধরনের বই। সেখানে তাক থেকে বই নিয়ে পড়ছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে আসা সেবাপ্রার্থীরা। পড়া শেষে আবার বই রেখেও দিচ্ছেন যথাস্থানে। উপজেলায় আগত দর্শনার্থীদের বইমুখী করে তুলতে উপজেলা চত্বরের পরিত্যাক্ত জায়গায় এই ব্যতিক্রমী পাঠাগার নির্মাণের উদ্যোগ নেন ইউএনও মো. সোহরাব হোসেন।
বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলা পরিষদ চত্বরে ফিতা কেটে এই আলোর উঠানের উদ্বোধন করেছেন জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার। তিনিই ছিলেন এই পাঠাগারের প্রথম পাঠক। এ সময় তিনি বলেন,‘পবা উপজেলা চত্বরে ইউএনওর উদ্যোগে ‘আলোর উঠান’ উন্মুক্ত পাঠাগারের উদ্বোধন করা হলো। উপজেলা পরিষদে আগত পাঠক, দর্শনার্থী সকলের জন্য উন্মুক্ত এই পাঠাগার প্রাঙ্গনে বসে একখানা বই হাতে নিয়ে সময় কাটাতে পারবেন। কখনো ভিড়ের কারণে সেবা পেতে দেরি হলে, সেই সময়টা এখানে বসে আনন্দে কাটাতে পারবেন।’
সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলা পরিষদ চত্বরে বসার গোল ঘরের পাশে এই নান্দনিক পাঠাগার করা হয়েছে। সেখানে সারি সারি তাকে শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন ধরনের বই। পাঠাগারের দেয়ালে বিখ্যাত মনীষীদের কথা শোভা পাচ্ছে। যেমন-‘পৃথিবী তাদেরই যারা বই পড়ে-রিক হল্যান্ড।, ‘আমাদের আত্মার মাঝে যে জমাট বাধা সমুদ্র সেই সমুদ্রের বরফ ভাঙার কুঠার হলো বই’-ফ্রানৎস কাফকা।, বই হলো পৃথিবীর রক্ষাকবচ-ভিক্টর হুগো। বই ছাড়া ঘর, একটি আত্মা ছাড়া শরীরের মতো-মার্কস টুলিয়াস সিসেরো।, ‘একটি ভালো বই হলো বর্তমান ও চিকালের জন্য সবচেয়ে উৎকৃষ্ট বন্ধু-টুপার।’, ’ভালো বন্ধু, ভালো বই এবং একটি শান্ত বিবেক; একটি আদর্শ জীবন।’
উদ্বোধনের পরপরই উপজেলায় আগত বইপ্রেমী সেবাপ্রার্থীরা ভিড় করছেন পাঠাগারে। কেউ বই পড়ছেন, আবার কেউ দেখছেন। আদিবাসী শিক্ষার্থীরা শিক্ষাবৃত্তি ও বাইসাইকেল নিতে এসেছিল উপজেলায়। তাদের মধ্যে এক শিক্ষার্থী বলল,‘তার বই পড়তে ভালো লাগে। বাসায় পাঠ্য বই ছাড়া অন্য বই নাই। এখন উপজেলা চত্বরে এসে বইপড়া যাবে। কোনো পয়সা লাগবে না। এটা একটা ভালো ব্যবস্থা হলো।
উপজেলার হুজুরীপাড়া ইউনিয়নের সরিষাকুড়ি গ্রাম থেকে সেবা নিতে আসা ৬৯ বছর বসয়ী বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সামসুজ্জোহাকে দেখা যায় পাঠাগারে। তিনি বলেন, এটি নিঃসন্দেহে ইউএনও’র একটি মহৎ উদ্যোগ। আমি উপজেলায় একটি কাজে এসেছিলাম। মানুষের অনেক ভিড় থাকায় কাজটি করতে দেরি হবে। ভাবছিলাম চায়ের স্টল থেকে চা খেয়ে আসি। বের হওয়ার সময় চোখে পড়ল পাঠাগারটি। তাই বাইরে সময় নষ্ট না করে যতক্ষণ সময় পেয়েছি বই পড়ছি।
এ সময় কথা হয় উপজেলার নওহাটা গার্লস স্কুলের প্রধান শিক্ষক সামসুদ্দীন প্রামাণিকের সঙ্গে। তিনি বললেন,‘তথ্য-প্রযুক্তির উৎকর্ষতার এই যুগে তরুণ প্রজন্মসহ সবাই ব্যস্ত ভার্চুয়াল জগতে। অনলাইন জগতে অনেকেই হচ্ছেন বিপথগামীও। ঠিক এমন সময় তাদের বইমুখী করে তুলতে উপজেলা চত্বরে গড়ে তোলা হয়েছে উন্মুক্ত পাঠাগার। ইউএনও এর উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।’
এই উদ্যোগ নেওয়ার ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহরাব হোসেন বলেন, উপজেলা পরিষদে বিভিন্ন কাজে প্রতিদিনই অনেক মানুষ আসেন। আমি লক্ষ্য করে দেখেছি সেবা নিতে আসা অপেক্ষারত মানুষ গল্পগুজব করে অলস সময় কাটায়। অনেকেই মোবাইল হাতে নিয়ে ভার্চুয়াল জগতে ঝুঁকে থাকেন। তাই আমার উদ্দেশ্য হচ্ছে, সেবা নিতে আসা এসব মানুষ যাতে অলস সময় না কাটান। তাদের বইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করতে উপজেলা পরিষদ চত্বরে উন্মুক্ত পাঠাগার করে দিয়েছি। তিনি বলেন, আগামী রোববার থেকে বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নাম নিবন্ধন করানো হবে। তারা নিকটবর্তী বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অবসরে উপজেলা চত্বরে বসে বই পড়তে পারবে। আবার ইস্যু করে বাড়িতে নিয়েও যেতে পারবে। হিসাব রাখা হবে। বছর শেষে যারা সবচেয়ে বেশি বই পড়বে। তাদের পুরস্কৃতি করে উৎসাহিত করা হবে।
পাঠাগারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সোহরাব হোসেন এর সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. জাহিদ হাসান, সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ফাবলিহা আনবার, বিএনপি’র জাতীয় নির্বাহী কমিটির ত্রাণ ও পূনর্বাসন বিষয়ক সহ-সম্পাদক এ্যাড. শফিকুল হক মিলন, হড়গ্ৰাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো আবুল কালাম আজাদ, নওহাটা পৌর বিএনপির আহ্বায়ক শেখ মকবুল হোসেন। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন- উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।
বিএ..