বৃদ্ধ হাতেম আলী ভোট দিতে কেন্দ্রে আসেন দুপুর ১২টায়। এরপর ১ নম্বর বুথে ঢুকে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের কাছ থেকে ব্যালট পেপার নেন।সেটি হাতে নিয়ে ভোট দিতে গোপন কক্ষের দিকে যাওয়ার মুখেই বাধা পান তিনি। সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক যুবক তাকে থামিয়ে বলেন, ‘চাচা, কষ্ট করার দরকার নেই; এখানেই নৌকায় সিল দিয়ে ব্যালট আমার কাছে দিয়ে তারপর ভেতরে গিয়ে কাউন্সিলরদের ভোট দেন। ’
মুহূর্তেই পরিস্থিতি বুঝে নিয়ে সতর্ক হয়ে যান ওই বয়োবৃদ্ধ ভোটার। তিনি ওই যুবককে বলেন, ‘ঠিক আছে বাবা; নেও, সিলটাও তুমরায় মারি দেও। ’ পরে কাউন্সিলরদের ব্যালটেও প্রকাশ্যেই সিল মেরে কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে আসেন ওই ভোটার।
শনিবার (১৬ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় দফার পৌরসভা নির্বাচনে কুষ্টিয়ার মিরপুর পৌরসভার পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের একটি বুথের চিত্র এটি। একই চিত্র ওই কেন্দ্রের ৫ নম্বর কক্ষেও দেখা গেছে। দুপুর ১টা। একই কেন্দ্র। কয়েকজন পুলিশ সদস্য ছাড়া ভোটার উপস্থিতি তেমন নেই। কিন্তু সমর্থক ও এজেন্টে সয়লাব পুরো ভোটকেন্দ্র। কক্ষের বাইরে তালা মেরে ভেতরে চলে নৌকায় সিল মারার মহোৎসব। এ কেন্দ্রে ভোট দিতে আসা ভোটার রবজেল হোসেন বললেন, ‘ব্যালট শেষ, তাই ভোট দিতে পারিনি। ’ এ সময় এ ঘটনার প্রতিবাদ করায় নৌকার প্রার্থীর লোকজন স্বতন্ত্র মেয়র পদপ্রার্থী আরিফুর রহমানের ওপর হামলা চালান। এলোপাতাড়ি হামলায় তিনি গুরুতর আহত হন। ঘটনার পরপরই পুলিশসহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সেখানে এলে হামলাকারীরা পালিয়ে যান। এ হামলার ঘটনা ঘিরে কেন্দ্রে কিছু সময়ের জন্য ভোটগ্রহণ বন্ধ থাকে।
রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্বে থাকা ইউএনও লিংকন বিশ্বাস এ ব্যাপারে বলেন, ‘কেন্দ্রে হট্টগোল হওয়ার খবর পেয়ে আমি এখানে এসেছি। এ হামলার বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’ কেন্দ্র দখল করে নৌকা প্রতীকে সিল মারা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থীর পক্ষ থেকে এমন অভিযোগ পেয়েছি। তবে আমার সামনে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। ’
বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থী রহমত আলী রব্বান এ সময় বলেন, ‘প্রশাসনের সহায়তায় প্রিজাইডিং অফিসাররাই ভোটার ও অন্য দলের এজেন্টদের বের করে দিয়ে ব্যালট পেপারে নৌকায় সিল মেরে বাক্স ভরেছেন। ’ সে সময় তিনি ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। সূত্র: কালের কণ্ঠ।