1. [email protected] : Abir k24 : Abir k24
  2. [email protected] : bulbul ob : bulbul ob
  3. [email protected] : Ea Shihab : Ea Shihab
  4. [email protected] : khobor : khobor 24
  5. [email protected] : অনলাইন ভার্সন : অনলাইন ভার্সন
  6. [email protected] : omor faruk : omor faruk
  7. [email protected] : R khan : R khan
নাটোরের বাগাতিপাড়ায় তাল পাখার গ্রাম হাঁপানিয়া - খবর ২৪ ঘণ্টা
রবিবার, ১২ জানয়ারী ২০২৫, ০৭:৫৯ অপরাহ্ন

নাটোরের বাগাতিপাড়ায় তাল পাখার গ্রাম হাঁপানিয়া

  • প্রকাশের সময় : শুক্রবার, ৯ মারচ, ২০১৮
khobor24ghonta.com

মোঃ মিজানুর রহমান, বাগাতিপাড়া প্রতিনিধিঃ তালের পাখা, প্রাণের সখা। গ্রীষ্মের খরতাপে কাহিল প্রকৃতির বুকে তৃষাতপ্ত শরীর একরাশ শান্তির পরশে জুড়িয়ে দিতে অনবদ্য তালপাখা। শৈল্পিক দৃষ্টিভঙ্গি আর মমতার বুননে হাতে তৈরী তালপাখাই জীবন-জীবিকার অন্যতম মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার জামনগর ইউনিয়নের হাঁপানিয়া ফকিরপাড়া গ্রামের মানুষদের। বছরের ছয়টি মাসে হাতপাখা তৈরি তাদের দিয়েছে বাড়তি উপার্জনের সুযোগ। মহিলাদের করেছে স্বাবলম্বী।

তবে প্রয়োজনীয় সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা ও ঋণ সুবিধা না থাকায় সম্ভাবনাময় এ শিল্পটি বিকশিত হচ্ছে না। নাটোর শহর থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত হাঁপানিয়া গ্রামটিতে তালগাছ না থাকলেও এখন তালপাতার গ্রাম নামেই এর পরিচয়।


khobor24ghonta.com

গত বৃহস্পতিবার সরেজমিন গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, গ্রামের প্রায় শতাধিক পরিবার পাখা শিল্পের সাথে জড়িত। পরিবারের নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, ছোট-বড় সকলেই তালপাখা তৈরির সাথে জড়িত। ফাল্গুনের শুরুতে তালপাখার চাহিদা বেশী থাকে বলেই একনাগাড়ে সকলেই তা তৈরী করেন। তালপাখা তৈরীর কারিগররা জানান, এর প্রধান কাঁচামাল ডাগুরসহ তালপাতা। উত্তরের জেলা নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে তালপাতা কিনে আনতে হয় পৌষ মাসের শুরুতে। প্রতিটি পাতা ডাগুরসহ কিনতে খরচ পড়ে ৫ থেকে ৭ টাকা। এই ডাগুরগুলোকে পাখার আকারে গোল করে কাটা হয় সতর্কতার সাথে। কাটার পর রোদে শুকানো হয় কয়েকদিন। শুকানো শেষে গুচ্ছ হয়ে থাকা ডাগুরের সংকুচিত পাতা প্রসারিত করা হয় বাঁশের তৈরী কাঠির মাধ্যমে। পাতার এক একটি শিরা প্রসারিত করে কয়েক শিরা মিলে দুই প্রান্তে আটকানো থাকে কাঠি। এভাবে রাখার পর তালপাতা স্বাভাবিক প্রসারিত আকার ধারণ করলে গোলাকার পাখাটি রং করা বাঁশের খিল দিয়ে দুপাশ আটকে সেলাই করে দেয়া হয়। একটি তালপাখা কাঁচামাল থেকে তৈরি করতে খরচ হয় আরো ২ থেকে ৩ টাকা। গড়ে ১০ থেকে ১১ টাকা দামের তালপাখার কারিগররা দেশের বিভিন্নস্থান থেকে আসা পাইকারদের কাছে বিক্রি করেন ১২ থেকে ১৫ টাকায়। প্রধানত রাজধানী ঢাকা, টাঙ্গাইল, খুলনা, পাবনা ও সিরাজগঞ্জে তালপাখার চাহিদা মেটায় হাঁপানিয়ার পাখা।

তালপাখা তৈরীতে পুরুষদের পাশাপাশি কাজ করে নারীরাও। সংসারের নিত্য কাজকর্মের পাশাপাশি পৌষের শুরুথেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত পাখা তৈরী করে বাড়তি আয় করছে নারীরা। তবে এর মজুরী একেবারেই কম। একশ’ পিস পাখা তৈরী করলে মজুরী পাওয়া যায় ৩৫ টাকা। ৩ থেকে ৫ জন নারী একসাথে বসলে ঘন্টায় ৩০০ টি পাখা অনায়াসে তৈরী করা যায়।

হাঁপানিয়া গ্রামের ষাটোর্ধ বয়সী বৃদ্ধা সাবেজান বেগম জানান, তিনি এ গ্রামে বউ হয়ে আসার পর থেকে অদ্যবধি তালপাখা তৈরী করছেন। তালপাখা তৈরী করেই তিনি তার সন্তানদের মানুষ করেছেন ও বিয়ে দিয়েছেন। এখন তার পুত্রবধূও সংসারে বাড়তি উপার্জনের জন্য পাখা তৈরী করেন।

সত্তরোর্ধ বৃদ্ধ আলাউদ্দীন বলেন, গত ৪ দশক ধরে তালপাখাই আমার জীবিকার উৎস। দীর্ঘসময় পাখা তৈরী করলেও সরকারী কোন সহায়তা বা ঋণ পাইনি। পাখার চাহিদা বরাবরই বেশি আর ঋণ পেলে আরো বেশি পাখা তৈরী করা সম্ভব।

মুনসুর আলী নামের অপর এক পাখা প্রস্তুতকারী বলেন, গ্রীষ্মের শুরুতে যে পরিমাণে পাখা এ গ্রাম থেকে সরবরাহ করা হয়, তাতে সরকারের উচিত পাখাপল্লী হিসেবে গ্রামটিকে ঘোষণা করা। নিজস্ব পুঁজি কম থাকায় কোন কারিগরের পক্ষে বেশী পাখা তৈরী করা সম্ভব হয়না।

স্কুলছাত্রী সুমি খাতুন জানায়, গরমের শুরুতে পাখা তৈরী করায় ভাই ও নিজের পড়াশোনার খরচ চালাতে দিনমজুর বাবার উপর চাপ দিতে হয় না। তালপাখা তাকে অল্প বয়সেই আত্ননির্ভর করেছে।

স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী মাহাতাব হোসেন বলেন, শৌখিন অথচ প্রয়োজনীয় এ পণ্যটির জন্যই এই গ্রমের পরিচিতি বেড়েছে। সেইসাথে এখানকার মানুষদের বাড়তি আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আত্নকর্মসংস্থানের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হবার অনন্য দৃষ্টান্ত এখন এই তালপাখার গ্রাম হাঁপানিয়া। তবে বিভিন্ন এনজিও থেকে চড়া সুদে ঋন নিয়ে অনেকেক সমস্যায় পড়তে হয়। এছাড়া ঋনের টাকার সুদ বেশী হওয়া লাভের পরিমান কম হয় তাদের।
বাগাতিপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাসরিন বানু বলেন তাল পাখার গ্রাম হাঁপানিয়া সরেজমিনে ঘুরে দেখেছি, তাল পাখার এই শিল্পকে ধরে রাখতে হবে। তাদের জীবন মানের উন্নয়ন দরকার। গ্রামের মানুষদের নিয়ে সমিতি গঠন করে তাদের মাঝে টাকা প্রদানের জন্য একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পকে বলা হয়েছে। এছাড়া তাদের মাঝে নগদ অর্থ প্রদান সহ উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

খবর২৪ঘণ্টা.কম/নজ 

পোস্টটি শেয়ার করুন

এ ধরনের আরো খবর

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পুর্ণ বেআইনি।

Developed By SISA HOST