1. [email protected] : Abir k24 : Abir k24
  2. [email protected] : bulbul ob : bulbul ob
  3. [email protected] : Ea Shihab : Ea Shihab
  4. [email protected] : khobor : khobor 24
  5. [email protected] : অনলাইন ভার্সন : অনলাইন ভার্সন
  6. [email protected] : omor faruk : omor faruk
  7. [email protected] : R khan : R khan
নওগাঁর টুপি যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে - খবর ২৪ ঘণ্টা
সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৩৯ অপরাহ্ন

নওগাঁর টুপি যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে

  • প্রকাশের সময় : বুধবার, ৩০ মে, ২০১৮

নওগাঁ প্রতিনিধিবাড়ির পাশে আম বাগানে পাটি ও চট বিছিয়ে গল্পে মেতেছেন কয়েকজন নারী। তবে তাদের সময় যে একেবারে অনর্থক কাটছে, তা নয়। সবার হাতে সুই-সুতা ও কাপড়। কারও হাতে সাদা রংয়ের কাপড়। সুইয়ের ফোঁড়ে নান্দনিক নকশা ফুটে উঠছে একেকটা কাপড়ে। বিশেষ কায়দায় সেলাই ও ভাঁজ করে এই কাপড় দিয়ে বানানো হচ্ছে টুপি। এই টুপি যাবে মধ্যপ্রাচ্যের ওমানসহ বিভিন্ন দেশে।

নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার খোসালপুর, কুঞ্জবন, খাজুর, রনাইল ও ভালাইন গ্রাম ঘুরে দেখা গেল এমন দৃশ্য। খোঁজ নিয়ে জানা গেল এসব গ্রাম ছাড়াও উপজেলার সুলতানপুর, শিবগঞ্জ, তাতারপুর, মধুবন, হরমনগর, উত্তরগ্রামসহ শতাধিক গ্রামের বিভিন্ন বয়সী নারী এই বিশেষ ধরণের টুপি তৈরির কাজের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। বাড়ির নারীরা টুপি তৈরি করে সংসারে এনেছেন স্বচ্ছলতা। তাদের নকশা করা টুপি যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। দেশে আসছে বৈদেশিক মুদ্রা।

১০-১২ জন নারী কারিগর ও তিনজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার কমপক্ষে ৩০টি গ্রামের প্রায় ১৫ হাজার নারী কারিগর টুপিতে নকশা তৈরির কাজ করেন। এসব কারিগরের কাছে নওগাঁ ও মহাদেবপুরের খুচরা ব্যবসায়ীরা বিদেশী ব্যবসায়ীদের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন নকশার ছাপ দেওয়া সাদা রংয়ের টুপির কাপড় ও সুতা কারিগরদের কাছে পৌঁছে দেন। এসব কাপড়ে সুই-সুতা দিয়ে সুন্দর সুন্দর নকশা ফুটিয়ে নারী কারিগরেরা। টুপিতে নকশা তৈরিতে সময় এবং শ্রমের ওপর ভিত্তি করে কারিগরদের পারিশ্রমিক দেওয়া হয়। কোনো টুপিতে নকশা তুলতে ২০-২৫ টাকা আবার কোনো টুপিতে নকশা করতে ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত দেওয়া হয়। টুপিতে নকশা তৈরির কাজ একজন নারী কারিগরের মাসে তিন থেকে চার হাজার টাকা আয় হয়। টুপিতে নকশা তোলার কাজ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন অনেক নারী। অভাবের সংসারে ফিরেছে সুখ ও স্বাচ্ছন্দ্য।

কথা হয় খোসালপুর গ্রামের রাবেয়া খাতুনের সঙ্গে। জানালেন, ১৫ বছর আগে উপজেলার সুলতানপুর গ্রামের রবিউল ইসলামের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। অভাবের তাড়নায় স্বামী রবিউল মহাদেবপুর সদরে একটি চালকল কারখানায় কাজ নেয়। ১০ বছর আগে স্বামীর সঙ্গে মহাদেবপুর সদরের খোসালপুর এলাকায় একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকা শুরু করেন। এখানে এসে এক বছর পর এক প্রতিবেশীর উৎসাহে শুরু করেন টুপিতে নকশা তোলার কাজ। স্বামী ও নিজের আয় দিয়ে এখন সংসার চলছে স্বাচ্ছন্দ্যে। নিজেদের উপার্জিত টাকা দিয়ে তিন শতক জমি কিনে তাতে ইটের বাড়িও তুলেছেন।

রনাইল গ্রামের শামিমা আক্তার বলেন, স্বামী দিন মজুরের কাজ করে। তার একার আয় দিয়ে আগে টেনেটুনে কষ্ট করে সংসার চলত। অনেক সময় আধপেটা করে খেয়ে থাকতে হত। তবে গত চার-পাঁচ বছর টুপিতে নকশা তোলার কাজ শুরু করে এখন সংসার ভালোই চলছে। বাড়িতে হাঁস-মুরগি, ছাগল ও গরু পালন করছে তারা। এক মেয়ে ও ছেলে লেখাপড়া করে। কলেজে পড়ুয়া মেয়ে লেখাপড়ার পাশাপাশি মায়ের সঙ্গে টুপিতে নকশা তোলার কাজ করে।

শামিমার মেয়ে কলেজছাত্রী আরিফা খাতুন বলেন, পড়াশোনার পাশাপাশি টুপি তৈরর কাজ করে মাসে দুই থেকে তিন হাজার টাকা আয় হয় তার। এই আয় দিয়ে বই, কাগজ-কলম ও কলেজে যাওয়া-আসার খরচ সহ আনুষঙ্গিক কাজে ব্যয় করে সে।

কুঞ্জবন গ্রামের এক বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল শাহেদা বেগম নামের এক গৃহবধু বাড়ির বারান্দায় বসে টুপিতে নকশা তোলার কাজ করছেন। তিনি বললেন, সংসারের অন্য কাজের সঙ্গেই এই কাজ করা যায়। সংসারের সব কাজ সেরেও শুধু টুপিতে নকশা তোলার কাজ করে মাসে তিন হাজার টাকা আয় হয়। তবে কাজের তুলনায় মজুরি খুবই কম বলে জানান তিনি। অযথা সময় নষ্ট করার চেয়ে আমরা এই কাজ করে সময় কাটাই। এই কাজ শেষে টুপি জমা দেওয়ার কয়েক মাস পর কাজের মজুরি পাওয়া যায়।

মহাদেবপুরের খুচরা টুপি ব্যবসায়ী মাজহারুল ইসলাম জানান, ‘প্রায় ১০ বছর ধরে এই এলাকায় বিদেশি টুপি তৈরির কাজ শুরু হয়। আগে শুধু ‘কুপিয়া’ টুপি এখানে তৈরি হতো। এটি ওমানের জাতীয় টুপি। এখন পাকিস্তান, সৌদিআরব, মালয়েশিয়া, কুয়েত, কাতার, বাহরাইন সহ মধ্যপ্রাচের বিভিন্ন দেশে এখানকার তৈরি টুপি যাচ্ছে। এসব টুপি ঢাকার চকবাজার, বাইতুল মোকাররম মসজিদ মার্কেটসহ বিভিন্ন মার্কেটে পাঠানো হয়। সেখানকার ব্যবসায়ীরা আবার মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে এসব টুপি রপ্তানি করেন। কাপড় ও নকশাভেদে এসব টুপি ১ হাজার থেকে দেড় হাজার টাকায় বিক্রি হয়।’

আরেক ব্যবসায়ী জিল্লুর রহমান বলেন, ‘সারা বছরই আমরা কারিগরদের টুপির অর্ডার দিয়ে থাকে। তবে রমজান ও ঈদ উপলক্ষে টুপির চাহিদা বেড়ে যায়। এ সময় দেশের বাইরে সবচেয়ে বেশি টুপি রপ্তানি হয়। চাহিদা অনুযায়ী টুপি সরবরাহ করতে আমাদের হিমশিম খেতে হয়।’

মহাদেবপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোবারক হোসেন বলেন, ‘মহাদেবপুরের নারীরা টুপি তৈরি করে স্বাবলম্বী হওয়ার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে। তাদের প্রচেষ্টার কোনো তুলনা হয় না। এসব কারিগররা যাতে সঠিক মজুরি পান এবং কোনো ধরণের হয়রানির শিকান না হন সে জন্য প্রশাসন তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করে আসছে। এই সব কারিগরদের আরও উন্নত প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

খবর২৪ঘণ্টা.কম/নজ 

পোস্টটি শেয়ার করুন

এ ধরনের আরো খবর

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পুর্ণ বেআইনি।

Developed By SISA HOST