নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার আলীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে দখল করে চলছে মেলার নামে বাণিজ্য। এর নৈপথ্যে রয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালী কিছু নেতাকর্মী।
স্থানীয়রা জানান, কোন স্কুলের খেলার মাঠ দখল করে মেলা আয়োজনের কোনো সুযোগ নেই। তবুও অলৌকিক ভাবে চলছে দোকান-পাট বসিয়ে বাণিজ্য। সেই সাথে মানুষের হাঁটাচলা রাস্তার পাশে ফুটপাত দখল করে বসানো হয়েছে মেলা। এতে দুর্ভোগ পড়েছেন পথচারীরা এলাকায় আলীপুর ও উজানখলনীতে এ রকম দু’টি মেলা চলছে। এসব মেলা আয়োজনের নামে মূলত দোকান ভাড়া দিয়ে মেলায় ‘বাণিজ্য’ করছেন স্থানীয় প্রভাবশালী কিছু নেতারা।
জানাগেছে, উপজেলার আলীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে মেলার আয়োজন করেছে আলীপুর জামাই মেলা’ নামের একটি মেলা কমিটি। গত ১৬ অক্টোবর থেকে ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত এই মেলা চলবে বলে জানিয়েছেন মেলা কমিটি । বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, স্থানীয় মেলা কমিটির সভাপতি শাহআলম ও বিএনপি নেতা আব্দুল আলী সুপারিশ করায় মেলা আয়োজনের অনুমতি দিয়েছেন তারা। এ ধরনের মেলা আয়োজনের পেছনে কোনো জনস্বার্থ নেই, আছে শুধু ভাগবাঁটোয়ারা জানান স্থানীয়রা।
বুধবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,বাঁশ পুঁতে ত্রিপালের ছাউনি দিয়ে পাঁচশতাধিক স্টল (দোকান) বানানো হয়েছে রাস্তার পাশে ও বিদ্যালয় মাঠে। এসব দোকানে খেলনা, কসমেটিক, মিষ্টান্ন, মনোহারি, গৃহস্থালি পণ্য ও খেলনা সামগ্রী বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া মাঠে বিভিন্ন ধরনের রাইড (খেলার উপকরণ) বসানো হয়েছে। মেলা আয়োজকদের কাছে বরাদ্দ নেওয়া দোকানিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একেকটি দোকানের আয়তন অনুসারে নেয়া হবে টাকা। মেলা কমিটির চাপে একেকটি স্টলের জন্য ২ থেকে ৩ হাজার টাকা দিতে হয় বাধ্য হচ্ছে দোকানিরা । আর একটি নাগরদোলা ও রাইড (চার থেকে ছয়টি দোকানের সমপরিমাণ জায়গা) বরাদ্দ নিলে চাঁদা দিতে হবে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। মেলাতে দোকানের বাইরেও শিশু–কিশোরদের জন্য বিভিন্ন ধরনের রাইড আছে। সেগুলোর ক্ষেত্রে টিকিট বিক্রির টাকার ২০ শতাংশ চাঁদা নিচ্ছেন মেলা আয়োজকরা । মেলায় দর্শনার্থীদের গাড়ি পার্কিং এর জন্য (মোটরসাইকেল) প্রতি ৪০ টাকা টিকেট দিয়ে আদায় করা হচ্ছে টাকা। সে হিসাবে তিনদিন মেলা থেকে আয়োজকেরা পাবেন প্রায় ৮/১০ লাখ টাকা।
মেলা পরিচালনা কমিটির সভাপতি শাহ আলম চৌধুরী জানান, দোকানীদের কাছে থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করে বলেন, আমরা মেলার অনুমতি চেয়ে আবেদন দিয়েছি। এখনো আনুমতি পায়নি। তবে মেলার সার্বিক দায়িত্বে রয়েছে বিএনপি নেতা আব্দুল আলী।
নওপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির সা.সম্পাদক আব্দুল আলী বলেন, এই জামাই মেলা স্থানীয় একটি ঐতিহ্য তাই মেলা বসানো হয়েছে। তবে স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই আমরা মেলা শুরু করেছি। এ বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ও কোন বাঁধা নেই।
দুর্গাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দুরুল হুদা বলেন, মেলার অনুমতির বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন দিয়ে থাকেন। স্থানীয় পুলিশের কোনো কর্মকর্তার এ ধরনের অনুমতি দেওয়ার এখতিয়ার নেই।
দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সাবরিনা সারমিন জানান, মেলার অনুমতি চেয়ে তারা আবেদন দিয়েছে। মেলা কমিটিকে শর্ত সাপেক্ষে পরিচালনা করতে বলা হয়েছে। মেলায় কোন অনিয়ম করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে ।
বিএ….