রাজশাহীতে কোটাবিরোধী আন্দোলন দমনে ছাত্র-জনতার ওপর পুলিশের খরচকৃত গুলি সহ দায়িত্বরত পুলিশের তথ্য চেয়ে পাঠিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের তদন্ত সংস্থা। গত ২৭ মার্চ এই চিঠি প্রেরণ করা হয় রাজশাহী মহানগ পুলিশ (আরএমপি) কমিশিনার বরাবর।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের তদন্ত সংস্থার কো-কোঅর্ডিনেটর মুহাম্মদ শহীদুল্যাহ চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে গত ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত আরএমপির বোয়ালিয়া থানায় কর্তব্যরত পুলিশের নামের তালিকা, ফায়ারকৃত গুলির হিসাব সহ সংশ্লিষ্ট পুলিশের বর্তমান ও স্থানীয় ঠিকা সহ তাদের কর্তমান কর্মস্থলের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে। চিঠিটি আরএমপি কমিশনার বরাবর প্রেরণ করা হয়েছে। একই সাথে এই তথ্য প্রদানে ব্যবস্থা গ্রহনণের জন্য সংশ্লিষ্ট থানা ও ডিসি বরাবর প্রেরণ করা হয়েছে।
বিভিন্ন তথ্য ও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে গত ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত রাজশাহী জেলার মধ্যে আএমপি এলাকার বোয়ালিয়া ও মতিহার জোনে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সাথে ছাত্র-জনতার দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এসময় সামনের সারিতে ছিলেন তৎকালীন ট্রাফিক বিভাগের ডিসি অনির্বাণ চাকমা, বোয়ালিয়া জোনের ডিসি বিভূতি ভূষণ বানার্জী, বোয়ালিয়া থানার ওসি হুমায়ন কবির, ওসি তদন্ত আমিরুল ইসলাম, এসআই (সেকেন্ট অফিসার) ইফেতাখার আল আমীন, এসআই মোস্তফা, কন্সটেবল আশরাফ, মতিহার থানার ওসি তদন্ত মো. শাহিন সহ শতাধিক পুলিশ কর্মকর্তা ও কনস্টেবল । আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও পুলিশের সাথে প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে ছাত্রজনাতার ওপর হামলা চালায়।
এসব সংঘর্ষের সময় পুলিশ পিছিয়ে আসলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হামলার জন্য এগিয়ে যায়। আবার তারা পিছু হটলে পুলিশকে অস্ত্র নিয়ে এগিয়ে যেতে দেখা যায়। মহিহার থানা এলাকার তালাইমারি মোড়ে এবং বোয়ালিয়া থানা এলাকার কামারুজ্জামান চত্বর ও আলুপট্টি স্বচ্ছ টাওয়ার মোড়ে দফায় দফায় এই সংঘর্ষ হয়। এর মধ্যে স্বচ্ছ টাওয়ারের কাছে গত ৫ আগস্ট পুলিশ ও আওয়ামী লীগের হামলায় আলী রায়হান ও সাকিব আনজুম নিহত হন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের তদন্ত সংস্থার কো-কোঅর্ডিনেটর প্রেরণ করা চিঠিতে বলা হয়, উপযুক্ত বিষয় ও সূত্রের আলোকে জানানো যাচ্ছে যে, ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত দেশব্যাপী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা কোটাবিরোধী আন্দোলন দমনে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিষয়ে অত্র সংস্থায় তদন্ত চরকমান রয়েছে। মামলা সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আরএমপি বোয়ালিয়া বিভাগের নিম্ন লিখিত তথ্যাদি পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। ৫ আগস্ট বোয়ালিয়া বিভাগে ডিউটি বন্টন প্রোগ্রাম। বোয়ালিয়া বিভাগে ডিউটিতে নিয়োজিত অফিসার ফোর্সদের নামের তালিকা। অফিসার ফোর্সদের জিডি ও সিসির সত্যায়িত ফটোকপি, তাদের নামে ইসুকৃত অস্ত্র ও গুলির হিসাব বিবরণী (ফায়ারকৃত গুলির হিসাব সহ), পুলিশ কমিশনার, ডিসি ডিবি, ডিসি বোয়ালিয়া, এডিসি বোয়ালিয়া, ওসি বোয়ালিয়ার নামের তালিকা, পদবী, বিপি নম্বর সহ স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকা এবং বর্তমান কর্মস্থল।
মামলা সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে উপরোক্ত তথ্যাদি জরুরী ভিত্তিতে প্রেরণের জন্য অনুরোধ করা হলো। আগমী ৪ এপ্রিল তারিখের মধ্যে প্রেরণ করতে বলা হয়েছে।
এদিকে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ওপর হামলার অভিযোগ তুলে গত বছরের নভেম্বর মাসে বোয়ালিয়া আমলী আদালতে মামলা করেন পবা উপজেলার শ্রীপুর গ্রামের বেলাল হোসেনের ছেলে মারুফ মুর্তজা। মামলায় রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি আনিসুর রহমান, অতিরিক্ত জিআইজি বজিয় বশাক, আরএমপির কমিশিনার বিপ্লব বিজয় তালুকদার, বোয়ালিয়া জোনের ডিসি বিভূতি ভূষণ বানার্জী, সাইবার ক্রাইম ইউনিটের এডিসি উৎপল, বোয়ালিয়া থানার ওসি হুমায়ন কবির, কাটাখালী থানার ওসি তৌহিদুর রহমান, বোয়ালিয়ার তদন্ত ওসি তদন্ত আমিরুল ইসলাম, এসআই (সেকেন্ট অফিসার) ইফেতাখার আল আমীন, এসআই মোস্তফা সহ পুলিশের অন্তত ২০ জনের নাম উল্লেখ রয়েছে।
একাধিক ফুটেজ ও তথ্যপ্রমাণ থাকলেও পুলিশের কাউকে গ্রেপ্তর বা কোন আইনগত ব্যবস্থা না নিয়ে বরং মামলার পর তাদেরকে কৌশলে রাজশাহী বাইরে বিভিন্ন রেঞ্জে বদলি করা হয়েছে।
আরএমপি কমিশনার আবু সুফিয়ান বলেন, এধরণের চিঠি পুলিশ হেড কোয়াটার হয়ে আসে। আমরা এর আগেও এমন চিঠি পেয়েছি। তাছাড়া এসব তথ্য ফ্যাক্ট ফইন্ডিং কমিটিকে এর আগেও আমরা প্রদান করেছি ।
ন/জ