চাঁপাইনবাবগঞ্জ ব্যুরো: ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য হিসেবে নিবন্ধিত হতে যাচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের স্বসাদু ‘খিরসাপাত’ আম। এর আগে এই তালিকায় জামদানী ও ইলিশ যক্ত হয়েছিল।
এ সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশের প্রক্রিয়া চলছে। সেই সাথে খুব শিগগির তা জিআই জার্নালে প্রকাশ করা হবে। নিবন্ধন পেলে সুস্বাদু এই ফল চাঁপাইনবাবগঞ্জের খিরসাপাত আম নামে বিশ্ববাজারে পরিচিতি পাবে। এতে উপকৃত হবেন স্থানীয় আম চাষি ও ব্যবসায়ীরাও।
বর্তমানে দেশের মোট উৎপাদিত আমের ২০-২৫ ভাগই খিরসাপাত। প্রতিবছর রপ্তানি হওয়া আমের মধ্যে শীর্ষেও রয়েছে এই জাতটি। অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে বর্তমানে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে বাংলাদেশের আম। সম্ভাবনা বিবেচনায় আমের স্বত্ব সুরক্ষার চিন্তা থেকেই ২০১৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জের খিরসাপাত আমকে জিআই পণ্য হিসেবে নিবন্ধনের আবেদন করা হয়েছিল। খিরসাপাত ছাড়াও চাঁপাইনবাবগঞ্জের আরো দুটি আমের জাত ল্যাংড়া ও আর্শিনাকে জিআই পণ্য হিসেবে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা হয়েছে। সেগুলোরও ব্যাপারেও আশাবাদী চাঁপাইনবাবগঞ্জের ফল বিজ্ঞানীরা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসনের কার্যলয়ের সার্বিক তর্তাবধানে আবেদন প্রক্রিয়াটি সাথে সম্পন্ন করেছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউট।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত¦ গবেষণা কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড মো শরফ উদ্দিন বলেন, এ বিষয়ে আমরা ২০১৭ সালে পুরো এক বছরই কাজ করেছি। তিনি জানান,প্রায় দুইশ বছরের প্রাচীন লোকসংগীত আলকাপ গান। চাঁপাইনবাবগঞ্জের আলকাপ গান এখন টিকে আছে তার অনন্য বৈশিষ্ট্যর কারণে। আলকাপ গানে সমসাময়িক বিষয়গুলো তুলে ধরা হয় বস্তুনিষ্ঠভাবে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিশিষ্ট আলকাপ সরকার (১৯৩৫-২০০৪) অসংখ্য গান গেয়েছেন বিভিন্ন অঞ্চলে। তাঁর সংগৃহীত আলকাপ গানের বন্দনা ছড়ায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমের ঐতিহ্যের কথা জানা যায়। ১৯৫৫ সালে তিনি আম বিষয়ক একটি বন্দনা ছড়া সংগ্রহ করে আসরে পরিবেশন করেন (এবার বড় বাগানে চলো সেখানে খিরসা আম ভালো)। সেই বন্দনা ছড়ার সূত্র ধরেই আমরা প্রমানের চেষ্টা করেছি যে, খিরসাপাত জাতটি চাঁপাইনবাবগঞ্জে। এছাড়াও বেশ কিছু দালিলিক তথ্য প্রমান যুক্ত করেছি। খিরসাপাতকে আমরা তালিকায় প্রথমে রেখেছিলাম। কারন এ আমটি সবচেয়ে স্বসাদু, দেশে ও বিদেশে সবচেয়ে বেশি দাহিদা আছে।
আশা করছি, ভৌগলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার আমের প্রথম জাত হিসেবে খিরসাপাতা অন্তর্ভুক্ত হবে। এই ফল বিজ্ঞানী আরো বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ল্যাংড়া ও আর্শিনা আমের বিষয়েও আমরা আশাবাদী। এ দুটি জাতও জিআই পণ্য হিসেবে নিবন্ধিত হবে।
এদিকে আম ব্যবসায়ীরাও বলছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমের স্বৃকিতি ভৌগলিক ভাবেই চাহিদা বাড়াবে, বৃদ্ধি পাবে এ জেলার আম কেন্দ্রীক অর্থনীতি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার আম ব্যবসায়ী সেতাব উদ্দীনের মতামত, বিদেশের মানুষের কাছে পরিচিত বাড়লে অবশ্যই বানিজ্যও বাড়বে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের খিরসাপাত আমের ভৌগোলিক নির্দেশকের আবেদন প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত ছিলেন ও ব্যাক্তি হিসাবে আবেদন কারী তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ উদ্যোনতত্ব গবেষনা কেন্দ্রের মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড মোঃ হামিম রেজা। তিনি জানালেন এটা আমার জন্যও একটা ভালো লাগার বিষয়, সেই সাথে জিআই পণ্য হিসাবে চাঁপাইনবাবগঞ্জের খিরসাপাত আম পরিচিতি এ আমের চাষাবাদে আরো আগ্রহী করে তুলবে বাগান মালিকদের। ফলে উৎপাদনও বাড়বে, বাড়বে আম কেন্দ্রিক অর্থনীতি।
এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হাসান জানান, আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জ শিরোনামে এ জেলা ব্যান্ডিং করছি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনায় আমরা এ ব্যান্ডিং করে যাচ্ছি। এ ব্যান্ডিং এ অংশ হিসাবে আমরা মনে করি জেলায় যে ৪৮ টি আমের জাত রয়েছে, যে গুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ন জাত গুলোকে জিআই পন্য হিসাবে রেজিস্ট্রেশনের কাজ আমরা করব। ইতিমধ্যেই আমরা তিনটি জাতের জিআই পন্য হিসাবে রেজিস্ট্রেশনের আবেদন করেছি। এরমধ্যে খিরসাপাত জাতটি চুড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে, আশা করছি শীঘ্রই এ জাতটির রেজিস্ট্রেশন পাব। ল্যংড়া ও আর্শিনা জাত দুটি রেজিস্ট্রেনের প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। খিরসাপাত জাতটির রেজিস্ট্রেশন পাওয়ার পরই আমরা অন্য দুটি জাতের বাকি কাজ গুলোও শেষ করে ফেলব। আশাকরছি আরো যে গুরুত্বপূর্ণ জাত রয়েছে সেগুলোও পর্যায়ক্রমে আমরা জিআই পন্য হিসাবে অন্তভুক্তের আবেদন জানাব।
খবর২৪ঘণ্টা.কম/রখ