খবর ২৪ ঘণ্টা ডেস্ক:শুক্রবার (১৫ মার্চ) জুমার নামাজের সময় নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে জড়ো হয়েছিল শত শত মুসলিম। কিছুক্ষণ পরই শান্তির নিউজিল্যান্ড হয়ে ওঠে রক্তস্নাত।
২৮ বছর বয়সী উগ্র শ্বেতাঙ্গ বন্দুকধারী জঙ্গির আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয় মসজিদের জায়নামাজ। হামলাকারীর লক্ষ্য ছিল সবার মাঝে ভীতির সঞ্চার করা।
কিন্তু দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাসিন্দা আরদার্ন সেই ভীতির সম্ভাবনাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছেন। জয় করেছেন সবার মন।
মুসলিমদের পাশে দাঁড়িয়ে ঐক্যের জয়গান শুনিয়েছেন তিনি। সারা বিশ্বে এখন জাসিন্দার ‘হৃদয় জয়ে’র গল্প। বিশ্বের সব দেশে প্রয়োজন জাসিন্দার মতো নেতা। বৃহস্পতিবার নিউইয়র্ক টাইমসের সম্পাদকীয় বোর্ড এ বিবৃতি ছেপেছে।
সেখানে বলা হয়, হামলার সঙ্গে সঙ্গেই জাসিন্দা দেশটির বিদ্যমান অস্ত্র আইনে সংস্কারের উদ্যোগ নেন। হামলার এক সপ্তাহ না গড়াতেই নিউজিল্যান্ডে সব ধরনের স্বয়ংক্রিয় এবং আধা স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র নিষিদ্ধ হয়।
বছরের পর বছর শত শত রক্তক্ষয়ী বন্দুক হামলার পরও কোনো মার্কিন নেতা এ রকম শক্তিশালী অবস্থান দেখাতে পারেননি। মার্কিন গান লবির সামনে সবাই হাঁটু মুড়ে বসতে বাধ্য হয়েছেন।
এর আগে পার্লামেন্টে জাসিন্দা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোকে হামলার ভিডিও প্রচার বন্ধে পদক্ষেপ নেয়ার ব্যাপারে হুশিয়ারি দেন। তিনি বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো শুধু লভ্যাংশ গুনবে তা মেনে নেয়া হবে না।’ নিউজিল্যান্ড প্রধানমন্ত্রীর থেকে বিশ্বের সব নেতাদের শিক্ষা নেয়া প্রয়োজন।
নিউজিল্যান্ড কৃষি ও পশুপালননির্ভর দেশ। দেশটির প্রায় ১২ থেকে ১৫ লাখ কৃষকের প্রায় সবার কাছেই কোনো না কোনো আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে। এর মধ্যে আড়াই লাখ অস্ত্রের কোনো রেজিস্ট্রেশন নেই। এসবের কোনো তথ্যই নেই সরকারের কাছে। তবুও এখন পর্যন্ত জাসিন্দা যে দৃঢ়তা দেখাচ্ছেন তাতে তার সরকারের পক্ষে এই কঠিন কাজকে অসম্ভব বলে মনে হচ্ছে না।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় রাইফেল সংস্থা ও তাদের রাজনৈতিক মিত্ররা এআর-১৫ অস্ত্রের মতো আধা-স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের নিষেধাজ্ঞা প্রতিরোধ করতে সচেষ্ট। নিউজিল্যান্ডে একটি হামলার ঘটনাই দেশের সরকারের টনক নড়িয়ে দিয়েছে।
আর যুক্তরাষ্ট্রে বহু ঘটনা ঘটছে। যেমন, নিউটাউনে ২৬ শিক্ষার্থীকে হত্যা, অরল্যান্ডোর নাইট ক্লাবে ৪৯ জনকে হত্যা, লাসভেগাসে ৫৮ জন, ফ্লোরিডার পার্কল্যান্ডে ১৭ শিক্ষার্থী হত্যার পরও যুক্তরাষ্ট্রের সরকার কিছুই করতে পারেনি।
এ ধরনের বর্বর হামলার পর বিশ্বের সব নেতার উচিত বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে নিন্দা জানানো, হতাহতদের পাশে দাঁড়ানো এবং অস্ত্রধারীদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করা। নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্দা এ পথই দেখাতে পেরেছেন।
নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্দা আরদার্নের হিজাব পরা ছবিটি পুরো বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। এবার নিউজিল্যান্ডের এক নারী পুলিশ কর্মকর্তা মনোযোগ আকর্ষণ করেছে পুরো বিশ্বের। বৃহস্পতিবার ক্রাইস্টাচার্চ মেমোরিয়াল পার্ক কবরস্থানের বাইরে সামরিক চেহারায় রাইফেল হাতে পাহারায় থাকতে দেখা যায় ওই নারী পুলিশকে। তার নাম মাইকেল ইভান। ছবিতে দেখা যায়, মাথায় হিজাব, বুকে গোলাপ আর হাতে একটি আধা-স্বয়ংক্রিয় বুশমাস্টার রাইফেল।
নিউজিল্যান্ড হেরাল্ড জানায়, মসজিদে জঙ্গি হামলায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে অনেকেই ক্রাইস্টচার্চ মেমোরিয়াল পার্ক কবরস্থানে আসেন। এ সময় কবরস্থানের গেটে পাহারারত পুলিশ কর্মকর্তা ইভানের ছবিটি তোলেন আলোকচিত্রী অ্যাল্ডেন উইলিয়ামস। তিনি বলেন, ‘ওই নারী পুলিশ কর্মকর্তার চোখে-মুখে গম্ভীরতা, সম্মান ও সুরক্ষা- এ তিনের মিশ্রণ ফুটে উঠেছে।
আমি দীর্ঘদিন ধরে পুলিশদের ছবি তুলছি। কিন্তু হিজাব, রাইফেল আর গোলাপের এত দারুণ মিশ্রণ আগে কখনো দেখিনি।’ পরে ছবিটি স্টাফ ব্লগে প্রকাশ করা হলে তা অতি দ্রুত শেয়ার হতে থাকে। নিজের ইন্সটাগ্রামেও এটি পোস্ট করেন উইলিয়ামস। তিনি জানান, কয়েক ঘণ্টার মধ্যে অন্য ছবির চেয়ে বেশি লাইক পেতে থাকে এই ছবিটি।
একজন ছবিটি দেখে মন্তব্যে বলেন, ‘ছবিটি নিউজিল্যান্ডের সহনশীলতা, সমবেদনা ও মানবতাকে দৃঢ়তার সঙ্গে তুলে ধরেছে। এটি খুব সুন্দর ও শক্তিশালী।’ নিউজিল্যান্ডের ওহানগানুই শহরে বেড়ে উঠেছেন মাইকেল ইভান।
ছোটবেলা থেকেই পুলিশ হওয়ার স্বপ্ন তার। ২০১৬ সালে ওহানগানুই ক্রোনিক্যাল পত্রিকাকে বলেন, আমি বাস্তবতার মধ্যে বড় হয়েছি। আমি শুধু মানুষকে সাহায্য করতে চাই।
এটা খুবই মজার যে, মানুষকে সাহায্য করছি, অর্থও পাচ্ছি। প্রধান পত্রিকাগুলোর প্রথম পাতায় ‘সালাম’ : শুক্রবার নিউজিল্যান্ডের প্রধান জাতীয় দৈনিকগুলোর প্রথম পাতায় ছাপা হয়েছে আরবি শব্দ ‘সালাম’, যার অর্থ শান্তি। ক্রাইস্টচার্চের হামলায় নিহত মুসল্লিদের স্মরণ করেই নজিরবিহীন এ পদক্ষেপ নিয়েছে পত্রিকাগুলো।
খবর২৪ঘণ্টা, জেএন