নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীর চারঘাটে সাবেক এক ইউপি চেয়ারম্যান কর্তৃক তারই সৎ মা-ভাইয়ের জমি জোরপূর্বক দখল, গাছ চুরি করে বিক্রিসহ উক্ত জমিতে পুকুর খননের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলাটি পুনঃ তদন্ত করছে অপরাধ অনুসন্ধান বিভাগ (সিআইডি)। আদালত কর্তৃক মামলাটি পুনঃ তদন্তের নির্দেশনা পেয়ে রাজশাহী সিআইডি’র একটি টিম শনিবার বিকেলে চারঘাটের ঝিকরা পশ্চিম বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের সেই জমিটিতে পরিদর্শনে যান। এসময় মামলার তদন্তকারী অফিসার ও রাজশাহী সিআইডি’র পুলিশ ইন্সপেক্টর আনিসুর রহমান ঘটনাস্থলে উপস্থিত মামলার বাদী ও সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। পরে মামলার বাদী’র নিকট থেকে জমির কাগজপত্রসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আলামত সাক্ষীদের উপস্থিতিতে জব্দ করেন। মামলাটি তদন্তকালে ঘটনাস্থলে রাজশাহী সিআইডি’র সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলামও উপস্থিত ছিলেন।
আদালত ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, জমি দখল, গাছ চুরি ও পুকুর খননের ঘটনায় গত ২০১৭ ডিসেম্বরের ২৮ তারিখে সরদহ ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান এসএম ইউসা ভোলাসহ ৩জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ৫/৬ জনের বিরুদ্ধে চারঘাট মডেল থানায় মামলা দায়ের করে ওই জমির প্রকৃত মালিক ইয়াহিয়া হোসেন সরকার। যাহার চারঘাট মডেল থানার মামলা নং – ৩২, তারিখ- ২৮/১২/১৭ইং।
মামলার তদন্ত চলাকালীন সময়ে আসামী পক্ষের দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার অভিযোগে মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তন চেয়ে গত বছরের ২৩ জানুয়ারী রাজশাহী জেলা পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত আবেদন করেন মামলার বাদী। পরে রাজশাহী জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশে মামলাটির পূর্বের তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই শরিফুল ইসলামের পরিবর্তে এসআই আবু তাহেরকে মামলাটি’র তদন্তভার দেয়া হয়। কিন্তু তিনিও একই ভাবে আসামী পক্ষের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে মামলাটি সুষ্ঠ ভাবে তদন্ত না করেই আদালতে চুড়ান্ত রিপোর্ট জমা দেন। পরবর্তীতে মামলার বাদী ইয়াহিয়া হোসেন সরকার মামলাটি
পুনঃ তদন্তের জন্য আদালতে নারাজি পিটিশন জমা দেন। বাদীর আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালতের বিচারক উভয় পক্ষের শুনানি শেষে মামলাটি পিবিআই কর্তৃক পুনঃ তদন্তের নির্দেশ দেন। মামলাটি তদন্তকালে পিবিআই-এর তদন্তকারী কর্মকর্তাও আসামী পক্ষের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে একই ভাবে আদালতে মামলাটির চুড়ান্ত রিপোর্ট আদালতে জমা দেন। পরবর্তীতে আদালতের বিচারক মামলার বাদী ইয়াহিয়া সরকারের বক্তব্য শুনে মামলাটি পুনঃ তদন্তের জন্য সিআইডিকে হস্তান্তর করেন। উক্ত মামলায় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান এসএম ইউসা ভোলা ও তার ছেলে রাকিব হোসেন সরকার ওরফে রোকনকে গ্রেফতারও করে চারঘাট থানা পুলিশ। বর্তমানে তারা দু’জনেই জামিনে মুক্ত আছেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে ওই জমিটি ভোগ দখলের বিষয়ে মামলার আসামী এসএম ইউসা ভোলা, তার ছেলে রাকিব উদ্দিন সরকার ও ভোলার স্ত্রী মমতাজ বেগমসহ অজ্ঞাত আরো ৫/৬ জনের সাথে ইয়াহিয়া হোসেন সরকারের ঝগড়া বিবাদ চলে আসছিলো। বিষয়টি স্থানীয়ভাবে একাধিকবার মিমাংসা করার চেষ্টা করা হলেও আসামীরা তা মেনে নেয় নি। এরই জের ধরে ২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর সকাল ৯টায় আসামীরা গাছ ও আখ কাটার উপকরণ নিয়ে ইয়াহিয়া সরকারের জমিতে প্রবেশ করে। এসময় জমিতে থাকা ৫০টি মেহগনি গাছ, ০৩টি কাঁঠাল গাছ ও ১০টি লিচু গাছ এবং জমিতে থাকা আঁখ চুরি করে কেটে বিক্রি করে দেয়। বিক্রয়কৃত গাছ ও আখের মূল্য ৭ লাখ ২০ হাজার টাকা ধরা হয়েছে। পরবর্তীতে ওই জমিতে অবৈধ্যভাবে পুকুর খনন করতে থাকে। পরে জমির মালিক ইয়াহিয়া সরকার অসুস্থ্য অবস্থায় স্থানীয় লোকজন ও আত্মীয় স্বজনদের মোবাইল ফোনের
মাধ্যমে খবর পেয়ে গত বছরের ২২ ডিসেম্বর বিকেল ৪টায় ঘটনাস্থলে পৌঁছান। সেখানে গিয়ে তিনি দেখেন, তার জমিতে থাকা গাছপালা ও আখগুলো চুরি হয়ে গেছে। সামান্য কয়েকটি গাছ জমিতে পড়ে আছে। এসময় আসামীদের গাছ ও আখ কাটার কারণ জিজ্ঞাসা করলে, আসামীরা তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ, মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে হয়রানিসহ হত্যা করে লাশ গুম করার হুমকি প্রদান করে। তিনি এর প্রতিবাদ জানালে, মামলার ২য় আসামী রোকন তাকে ধারালো চাকু প্রদর্শন পূবর্ক হত্যার হুমকি দেয়। এসময় তার চিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে আসলে আসামীরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
এ ব্যাপারে মামলার বাদী ইয়াহিয়া হোসেন সরকার অভিযোগ করে বলেন, প্রায় ১৫ বছর আগে তার পিতা শোয়েব উদ্দিন সরকার মারা গেছেন। পিতার মৃত্যুর এতো বছর পেরিয়ে গেলেও তার সৎ ভাই এসএম ইউসা ভোলা সন্ত্রাসী কায়দায় জোর পূর্বক তাদের সমস্ত সম্পত্তি দখল করে রেখেছে। একই কায়দায় তার ও তার মায়ের নিজ নামীয় সম্পত্তি জোর পূর্বক দখল করে জমিতে থাকা নানা প্রজাতির গাছ চুরি করে বিক্রি করেছে। সেই জমিতে অবৈধ্যভাবে পুকুর খনন করেছে। সে ব্যাপারে তিনি সুষ্ঠু বিচার চেয়ে মামলাটি দায়ের করেছিলেন। কিন্তু মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা আসামী পক্ষের দ্বারা
প্রভাবিত হয়ে মামলাটি’র চুড়ান্ত রিপোর্ট আদালতে জমা দেন। আদালতের নির্দেশে মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করে পিবিআই। পিবিআইয়ের তদন্তকারী কর্মকর্তা তারসহ মামলার সাক্ষীদের কোন ধরনের জিজ্ঞাসাবাদ ছাড়াই আসামী পক্ষের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে একই ভাবে আদালতে মামলাটির চুড়ান্ত রিপোর্ট জমা দেয়। পরে আদালতের বিচারক তার বক্তব্যে শুনে মামলাটি পুনঃ তদন্তের জন্য সিআইডি’র কাছে হস্তান্তর করেন। বর্তমানে মামলাটি সিআইডি’র কর্মকর্তারা তদন্ত করছেন।
মামলাটির বর্তমান তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সিআইডি’র পুলিশ ইন্সপেক্টর আনিসুর রহমান জানান, তিনি মামলাটি’র তদন্তের দায়িত্ব নেয়ার পর শনিবার বিকেলে সিআইডি’র সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। প্রাথমিকভাবে মামলার বাদী ও সাক্ষীদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। তবে মামলাটির তদন্তের স্বার্থে এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি।
আর/এস