গোদাগাড়ী প্রতিনিধিঃ রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার কৃষকরা এসিআই ক্রপ কেয়ারের আগাছা নাশক কীটনাশক জাম্প ব্যবহার করে ক্ষতিগ্রস্থ জমির ধান গাছ গুলো প্রাণফিরে পেতে চলেছে। সেই ধানগুলো এখন অনেকটা অগ্রগতির পথে।
মাত্র এক সপ্তাহ আগে ধানের গাছে গুলো যে ভাবে জীর্ণশীর্ণ হয়ে গিয়ে মড়তে বসেছিলো এসিআই কোম্পানীর সহযোগিতায় সেই ধানগাছগুলি প্রাণ ফিরে পেয়েছে। এক সপ্তাহ আগে কৃষকদের ভষ্য ছিলো এসিআই ক্রপ কেয়ারের জাম্প নামক বালাই নাশক ব্যবহার করে আবাদি জমির ধান গুলো মারা যেতে পারে।
তবে মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে কৃষকদের সাথে কথা বলে জানাযায়, ধানের যে সমস্যা দেখা গিয়েছিলো সেটি আর বেশী হয়নি বরং এসিআই কোম্পানী কৃষকদের ক্ষতির কথা শুনে তাৎক্ষণিক আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে এবং সুপরামর্শ দিয়ে কিছু কীটনাশক আমাদের দিয়ে সহযোগিতা করেছে।
উপজেলার বিড়ইল গ্রামের মোঃ সাইফুল ইসলাম জানান, ধান লাগার ৯ দিনপর জাম্প নামক আগাছা নাশক কীটনাশক দিয়ে ধানের অবস্থা খারাপ হয়। ভাল ধানগাছে হলুদ রং ধারন করে ধানের গোছবৃদ্ধি নেয়া বন্ধ ছিলো।
এসব নিয়ে বিভিন্ন মিডিয়াতে খবর প্রকাশিত হওয়ার পর এসিআই কোম্পানীর উদ্ধর্তন কর্মকর্তারা কৃষকদের জমিতে এসে পরিদর্শন করে কৃষকদের প্রতিজনকে ১কেজি সালফক্স ও ফ্লোরা দিয়ে জমিতে প্রয়োগ করে পানি দিতে বলার পাশাপাশি অন্যান্য পরামর্শ দিয়ে এখন সেই জামির ধান গুলো অনেকটা অগ্রগতির পথে। তিনি বলেন, হয়তো ধান যেভাবে ভাল ফলন করব বলে আশা করেছিলাম সেটি হবে না কমে যাবে।
মঙ্গলবার বিকেলে সরেজমিনে এসিআইয়ের সেলস ম্যানেজারসহ উদ্ধর্তন কর্মকর্তাদের কেউ কৃষকদের জমি ও কথা বলতে দেখা গেছে।
তবে সরেজমিনে গিয়ে কৃষকদের জমি গুলোতে ডিপটিউবয়েলের পানির সমস্যার কারণে পর্যাপ্ত পানির অভাব বোঝা গেছে।
তবে এসিআইয়ের কর্মকর্তারা ধানের ফলন কমে যাবে ও ধান তেমন ভাল হবে না কৃষকদের এমন কথা মানতে নারাজ। সেলস ম্যানেজার মোঃ কমাল হোসেন বলেন, ধান যে ‘জাম্প’ ব্যবহারেই ক্ষতি হয়েছে তা একচেটিয়া ভাবে বলা যাবে না। আমাদের এই প্রডাক্ট শুধু গোদাগাড়ীর জন্যই উৎপাদ করি নি সারা দেশের জন্যই উৎপাদন করে বাজারজাত করেছি। অন্য কোন জায়গাতে এমন অভিযোগ পাইনি শুধু গোদাগাড়ীতেই এই সমস্য দেখা দিয়েছে।
তবে আমরা কৃষকদের দূরে ফেলে যাইনি সার্বক্ষণিক পাশে আছি। তবে কোম্পানীর লোকদের ধারণা কীটনাশক ব্যবহারে হয়তো সঠিক মাত্রা ব্যবহার না করার ফলে এমনটি হয়েছে সেটি কৃষক বলতে চাইছে না।
গোগ্রামের কৃষক ইসরাইল হক মুন্টু বলেন, ১২ বিঘা ধান সম্পূর্ন বর্গা নিয়ে ধারদেনা করে চাষ করছি। ধান আগের চেয়ে বেশী ক্ষতির পর্যায়ে যায়নি এক রকম স্থির আছে বলা যায়। হয়তো কিছু দিনের মধ্যে ভাল ফল পাব। তিনি বলেন, এসিআই কোম্পানী হতে এক সপ্তাহ আগে আমাদের এলাকার প্রত্যেক কৃষকে ১ কেজি সালফক্স ও ফ্লোরা দিয়ে সহযোগিতা করেছে এবং প্রত্যেকদিন তাদের কর্মকর্তারা মাঠে থাকছেন কোন পরামর্শ থাকলে তারা কৃষকদের দিচ্ছে।
কৃষক মোঃ ফারুক জানান, আগের চাইতে জমির ধানগাছের গোড়ায় থোক বৃদ্ধি পাইছে এবং ধানের যে লালচে ভাব ছিলো তা দূর হয়ে সবুজ হচ্ছে।
তবে কৃষকরা বলেন, আমাদের জমিতে ধানের বয়স ৫০ দিন পার হয়ে গেছে সেই ধান গাছ গুলোকে অন্যান্য ধানের মত ভাল করতে পারব না। ফলন কমে গিয়ে হয়তো বিঘায় ৭-৮ মন ফলন হবে। সবার বর্গানিয়ে জমি করা সেই সাথে সারের দোকানে আমাদের বাকি পড়ে আছে। ধানের এমন দশা দেখে দোকান সার ডিলাররা আর বাকি দিয়ে চাইছে না।
তাদের দাবি আমরা যে ভাবে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছি আমাদের কে সেই দিকটা বিবেচনা করে যদি সহযোগিতার হাত বাড়াই তাহলে আমরা বেশ উপকৃত হবো এবং এসিআই কোম্পানীর নিকট কৃতজ্ঞ থাকবো।
স্থানীয় কীটনাশক ডিলার ওবাইদুলও বলেন ধান আগের চাইতে ভাল আছে।
গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ শফিকুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কৃষকদের ক্ষতিগ্রস্থ ধানে জমি গুলো আগের চাইতে ভালর দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে এবং তাদের সার্বক্ষণিক মনিটরিং আছে বলে জানান। কৃষকদের আর্থিক ভাবে সহযোগিতা করার জন্য কৃষি বিভাগ হতে কোম্পানীর নিকট কোন চাহিদার কথা বলা হয়েছে কিনা ? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা প্রায় ১৪৭ জন ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের ৪৩০ বিঘার জমির পরিমান তালিকা ভূক্ত করে উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠিয়েছি তারাই বিষয় গুলো দেখলাভ করবে বলে জানান।
এসিআই কোম্পানীর রাজশাহী অফিসের টেরিটরি এক্র্যিকিউটিভ অফিসার মোঃ সারওয়ার হোসেন বলেন, ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের পাশে আমরা সব সময় আছি । প্রতিদিন আমাদের লোক মাঠ মনিটরিং করছে। তবে আগের চাইতে ক্ষতিগ্রস্থ ধান গুলো স্বাভাবিক ও উন্নতি হয়েছে। আশা করি কিছুটা দিন পার হলে ধান গুলো স্বাভাবিক হয়ে যাবে। কৃষকদের আর্থিক সহযোগিতার বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের ব্যবস্থাপনা বিভাগ আছে সেটি তারাই ভাল বুঝবেন বলে মন্তব্য করেন।
খবর২৪ঘণ্টা.কম/নজ