খবর২৪ঘন্টা নিউজ ডেস্ক: সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে মহামারী নভেল করোনাভাইরাস তথা কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ রোধে সরকারের যে নির্দেশনা সেটি অনেকাংশেই উপেক্ষিত রাজধানীর বস্তিগুলোতে।
গত কয়েকদিনে রাজধানীর কয়েকটি বস্তি ঘুরে দেখা গেছে, নিম্নআয়ের বিপুল মানুষের বসবাসের এই কেন্দ্রগুলোতে আগেকার মতোই জমায়েত, মেলামেশা ও আড্ডা চলছে। করোনাভাইরাস সংক্রান্ত কোনো সচেতনাও তাদের মধ্যে পরিলক্ষিত হয়নি।
যদিও বস্তিবাসীদের অনেকেরই ভাষ্য, একে তো রয়েছে খাদ্য যোগানোর চিন্তা তার ওপর ঘন বসবাসের কারণে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা সম্ভব নয় তাদের পক্ষে। আবার মাস্ক-গ্লাভস পরে স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়েও তাদের উপেক্ষা রয়েছে।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের নবোদয় হাউজিং বস্তি, আদাবর ১০ নম্বর বস্তি, মোহাম্মদীয়া হাউজিং, শিয়া মসজিদ বাজার, কল্যানপুর পোড়াবস্তি, আগারগাও বস্তি ঘুরে দেখা যায়, বস্তির বাসিন্দারা বস্তিতে কোনো ধরনের সুরক্ষা সামগ্রী ছাড়াই অবাধে চলাচল করছেন। শিশু, কিশোর, যুবক, বৃদ্ধ সকল বয়সের পুরুষদের দেখা গেছে খালি গায়ে চলাফেরা করতে। তাদের মধ্যে নেই নূন্যতম সামাজিক দূরত্ব।
বস্তিবাসীর যুক্তি, অল্প জায়গার মধ্যে তাদের অনেক মানুষের বসবাস। ফলে তারা চাইলেও দূরত্ব বজায় রেখে চলাচল করতে পারছেন না।
বেশ কিছু বস্তির রান্না ঘর এক জায়গায়। ফলে সেখানকার গৃহিনীদের একে অন্যের পাশাপাশি বসেই রান্না করতে হচ্ছে। গোসল করতে হচ্ছে একই গোসলখানায়।
মোহাম্মদপুরের নবোদয় হাউজিংয়ের কালুর বস্তির বাসিন্দা আব্দুল মান্নান বলেন, ‘বস্তিতে হাঁটার জাগাই তো ঠিক মতো থাকে না। দূর দূরে হাঁটে কেমনে? একজন হাঁটলে বাকিরা কি দাঁড়াইয়া থাকব!’
বিশ্বে মহামারি আকার ধারণ করা কোভিড-১৯ এ যখন বাংলাদেশের হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত, তখনো কপালে ভাঁজ পড়েনি বস্তির বাসিন্দা রেহানা বেগমের। বলেন, ‘গরিবের করোনা হয় না। ঘরে খাওন নাই, সেই চিন্তায় বাঁচি না। পোলাপান নিয়া কি খামু সেই চিন্তায় চিন্তায় দিন যায়। করোনা নিয়া ভাবি কখন! আমগোও কিছু হইব না।‘
রেহানার কথায় সুর মেলালেন আদাবর সুনিবিড় হাউজিং বস্তির বাসিন্দা কালু। বলেন, ‘কি কয়, বারবার হাত ধোও, হাত ধোও। এতো হাত ধোয়ার সাবান কিনব কে? আমরাগো ঘরে খাবার নাই ভাই। নিজের চিন্তা না করলাম, পোলাপালের চিন্তা করতে হয়।’
এদিকে বস্তিতে অবাধ চলাফেরার পাশাপাশি অনেকেই মেতেছেন লুডু খেলায়। দেখা যায়, চারজন একত্রে বসে মোবাইল ফোনে লুডু খেলছেন, আর সে খেলা দেখতে পাশে ভিড় করছেন আরও চার পাঁচজন। তাদের মধ্যে নেই কোনো সামাজিক দূরত্ব।
আবার চায়ের দোকান খোলার নিয়ম না থাকলেও বস্তির ভেতরের চায়ের দোকানগুলো খোলাই থাকছে। বিক্রি হচ্ছে চা-সিগারেট। দোকানকে ঘিরে চলছে আড্ডা।
খবর২৪ঘন্টা/নই
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পুর্ণ বেআইনি।