নিজস্ব প্রতিবেদক : ইচ্ছে করেই কোটি টাকার সড়কবাতি পুড়িয়ে গ্রেপ্তার হয়েছেন খোদ রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) এর স্ট্রিট লাইট মিস্ত্রি। তিনি নগরীর রাজপাড়া থানার বিলসিমলা এলাকার বাসিন্দা মিজানুর রহমান ওরফে শাহীন (৪০)। গত বৃহস্পতিবার বোয়ালিয়া মডেল থানা পুলিশ তাকে আদালতে পাঠিয়ে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছে। পুলিশ তাকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করবে।
সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মীরা কর্তৃপক্ষকে জানায়, অতিরিক্ত ভোল্টেজের কারণে লাইটগুলো পুড়ে গেছে। কিন্তু বিদ্যুৎ বিভাগ জানায় অতিরিক্ত ভোল্টেজ থাকে না। দীর্ঘ দিন ধরে লাইটগুলো নষ্ট হওয়ার কারণই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। অবশেষে কারণ উদঘাটন হয়েছে।
সিটি করপোরেশন জানতে পেরেছে, সড়কবাতিগুলো ইচ্ছে করেই পুড়িয়েছেন খোদ তাদের এক কর্মী মিজানুর রহমান ওরফে শাহীন। ইচ্ছে করে সড়কবাতি পোড়ানোর অভিযোগে তার বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে। গত মঙ্গলবার (১৯ মে) রাতে রাসিকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সমর কুমার পাল বাদী হয়ে মামলা করেছেন।
এ মামলায় শাহীনের বিরুদ্ধে প্রায় কোটি টাকার সড়কবাতি ইচ্ছে করে নষ্ট করার অভিযোগ আনা হয়েছে। পুলিশ অভিযুক্ত শাহীনকে গ্রেপ্তার করে বুধবার (২০ মে) আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে।
রাসিকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সমর কুমার পাল বলেন, দুটি কারণে শাহীন সড়কবাতি পোড়াতে পারেন। ঠিকাদারের সঙ্গে যোগসাজস করে বার বার লাইটগুলো নষ্ট করা হতে পারে যেন ঠিকাদার আবারও লাইট সরবরাহ করতে পারেন। এছাড়া আগের যে ঠিকাদার লাইট সরবরাহ করেছেন তার লাইটের মান খারাপ প্রমাণ করতে লাইটগুলো নষ্ট করা হতে পারে। এটি পুলিশ তদন্ত করবে।
সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, একই সড়কে বার বার লাইট নষ্ট হয়ে যাওয়ার কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। মিস্ত্রিরা বলছিলেন অতিরিক্ত ভোল্টেজের কারণে লাইট পুড়ে যাচ্ছিল। আর বিদ্যুৎ বিভাগ বলছিল, অতিরিক্ত ভোল্টেজ ছিল না। বিষয়টি রহস্যজনক হওয়ায় গেল বছরের ১১ সেপ্টেম্বর নগরীর বোয়ালিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। দীর্ঘ তদন্ত শেষে পুলিশ উদঘাটন করেছে যে লাইটগুলো ইচ্ছে করেই নষ্ট করতেন রাসিকের শাহীন। তার এমন কাণ্ডের সাক্ষীও পাওয়া যায়। এরপর তাকে আটক করা হয়। পরে সিটি করপোরেশন তার বিরুদ্ধে মামলা করে।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত ৪ মার্চ দুপুরে নগরীর কুমারপাড়া এলাকায় পাঁচটি এলইডি লাইট পোড়ানো হয়েছে। এর পর বিভিন্ন সময় রাজশাহী কলেজ থেকে ফায়ার সার্ভিস মোড় পর্যন্ত ১৫টি লাইট পোড়ানো হয়েছে। নগরীর কাদিরগঞ্জ বড় মসজিদের সামনে থেকে বর্ণালী মোড় পর্যন্ত লাইটগুলো তিন-চারবার পোড়ানো হয়েছে। শালবাগান থেকে বিজিবি গেট হয়ে আলিফ-লাম-মিম ভাটা পর্যন্ত লাইটগুলোও তিন-চারবার পোড়ানো হয়েছে। দেবিশিংপাড়া আরএইচ ছাত্রাবাস থেকে তালাইমারি মোড় পর্যন্ত লাইটগুলো পোড়ানো হয়েছে সাত-আটবার। পাঁচ-সাতবার পোড়ানো হয়েছে ডাবতলার মোড় থেকে তেরখাদিয়া পর্যন্ত রাস্তার লাইটগুলো। গোরহাঙ্গা কামারুজ্জামান চত্বর থেকে শিরোইল বাস টার্মিনাল পর্যন্ত রাস্তার লাইটগুলো পোড়ানো হয়েছে ১০-১২ বার।
এছাড়া গত বছরের ৩ অক্টোবর নগরীর দড়িখড়বোনা থেকে বর্ণালী মোড় পর্যন্ত রাস্তার উত্তর পাশে ৮টি এবং দক্ষিণ পাশে ১৮টি লাইট পোড়ানো হয়েছে। একই দিন এ এলাকার আইল্যান্ডের মাঝের সৌন্দর্য্যবর্ধক ২০টি গার্ডেন লাইটও পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। গত বছরের ৪ এপ্রিল তালাইমারি শহীদ মিনার থেকে বাদুড়তলা পর্যন্ত ৩১টি লাইট পোড়ানো হয়েছে। এছাড়া আরও বিভিন্ন এলাকার লাইট পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ প্রায় এক কোটি টাকা বলেও মামলার এজাহারে বলা হয়েছে।
এজাহারে আরও বলা হয়েছে, রাসিকের লাগানো লাইটগুলো ২৯০ ভোল্ট পর্যন্ত সহনশীল। সাধারণত প্রতিটি ফেজ ২২০ ভোল্ট সরবরাহ করে। কিন্তু মই লাগিয়ে বৈদ্যুতিক খুঁটিতে উঠে মেইন ফেজের সাথে আবাসিক ফেজ একসঙ্গে করে ৪৪০ ভোল্ট দিয়ে লাইটগুলো পুড়িয়ে দেয়া হয়। এ মামলার সাক্ষীরা নিজে মিস্ত্রি শাহীনকে এ কাজ করতে দেখেছেন। তারা বাধা দিতে গেলে শাহীন বলেছেন, ওপরের নির্দেশ আছে। নতুন লাইট লাগানো হবে। এভাবে একটি চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে তিনি কোটি টাকার ক্ষতি করেছেন। এতে একটি গোষ্ঠীর লাভ হয়েছে।
এ বিষয়ে নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি নিবারন চন্দ্র বর্মন বলেন, আটক শাহীনকে গত বৃহস্পতিবার আদালতে পাঠিয়ে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে।রিমান্ডে এনে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। কার কথায় তিনি এমন করেছেন তার তদন্ত চলছে। মামলায় আপাতত শাহীনকেই আসামি করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় এই ক্ষতির পেছনে তার সঙ্গে যার যার সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে তাকেই আইনের আওতায় আনা হবে।
এমকে