খবর২৪ঘণ্টা ডেস্ক: কোটা সংস্কার আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খাঁনকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছাত্রলীগের বর্তমান ও সাবেক শীর্ষ নেতারা হত্যার হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন আন্দোলনকারীরা। এদিকে তাদের এই হুমকির জবাব রাজপথে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতাকর্মীরা।
শুক্রবার বিকেল থেকে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারা তাদের ফেসবুকে এই হুমকি দেয়। কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্লাটফর্ম ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের’ ফেসবুক গ্রুপে শিক্ষার্থীরা এর পাল্টা জবাবও দিচ্ছেন।
রাশেদ খাঁনকে হুমকি দিয়ে ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্স তাঁর ফেসবুক টাইমলাইনে লিখেছেন, ‘শিবির রাশেদ তার আসল পরিচয় প্রকাশ করল… কারণ সে জামায়াত-শিবিরের এজেন্ট হিসেবে যেকোনো ভাবেই সরকারের বিরুদ্ধে সাধারণ শিক্ক্ষার্থীদের ব্যবহার করতে চায়।’
‘রাশেদ শিবির প্রমাণিত হওয়ায় তাঁকে সূর্যসেন হল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল… রাশেদকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করা হোক… না হয় বাংলার ছাত্রসমাজ ধোঁকা দেওয়ার অপরাধে তোকে ছার পোকার মতো পিটাবে…’, যোগ করেন প্রিন্স।
এদিকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদ্যবিদায়ী সহসভাপতি সাকিব হাসান সুইম রাশেদ খাঁনকে হুমকি দিয়ে ফেসবুকে লিখেছেন, ‘শিবির রাশেদ তোর কলিজাটা অনেক বড় হয়ে গেছে। মাপটা সামনাসামনিই নিব।’
ছাত্রলীগের ঢাবি শাখার স্যার এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান তুষারও কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের হুমকি দিয়েছেন। তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হাতে খাতা এবং কলম তুলে দিয়েছেন তাই তো ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা পড়ার টেবিলে থাকতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। কিন্তু আপনারা যদি ষড়যন্ত্র করতে চান তাহলে এদেশের স্বার্থে, এ দেশের মানুষের স্বার্থে, এ দেশের মানুষের ভাতের এবং ভোটের অধিকার রক্ষায় সর্বোপরি জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার প্রয়োজনে ছাত্রলীগ যতটা পড়ার টেবিলকে ভালোবাসে ঠিক ততটা ভালোবাসে রাজপথকে। রাজপথে থেকে সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহত করা হবে।’
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের আরেক সাবেক সহসভাপতি ইমতিয়াজ বাপ্পি ফেসবুকে রাশেদ খাঁনকে হুমকি দিয়ে ফেসবুকে লেখেন, ‘কোটা ফোটা আর বুঝি না আমাদের একমাত্র আশ্রয়ের জায়গা দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে নিয়ে যারা ধৃষ্টতাপূর্ণ কথাবার্তা বলবে সে যেই হোক আর যত বড় ব্যাকআপ নিয়েই থাকুক বিন্দুমাত্র ছাড় দেব না। রাশেদের কত বড় বাপ আছে দেখব আমি। আর কে পদক্ষেপ নিক আর না নিক রাশেদকে যেখানে পাব সেখানেই মাটিতে পুতে ফেলব। পারলে মাঠে আয় ফেসবুকে ম্যা ম্যা না করে…।’
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক উপ-সম্পাদক আল মামুন তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘নেত্রী সম্পর্কে কটূক্তিকারী শিবির রাশেদকে ন্যাড়ি কুত্তার মতো পিটুনি দেওয়ার অপেক্ষায় আছি।’
ছাত্রলীগ নেতাদের এসব হুমকির বিষয়ে মুহাম্মাদ রাশেদ খাঁন বলেন, ‘আমার বক্তব্যে কোনো সময় প্রধানমন্ত্রী বা দেশের বিরুদ্ধে কথা বলিনি। আমি ছাত্রসমাজের প্রতিনিধি হিসেবে কোটা সংস্কারের যৌক্তিক আন্দোলনের কথা বলেছি। কিছু কুচক্রি মহল আমার বক্তব্যগুলোর আগে পরে বাদ দিয়ে এডিট করে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।’
রাশেদ দাবি করেন, ছাত্রলীগের হুমকির কারণে তিনি গত ১১ এপ্রিল হল ত্যাগ করেছেন। ছাত্রলীগের নেতারা প্রতিনিয়ত তাঁকেসহ কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী নেতাকর্মীদের হুমকি দিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
হুমকির বিষয়ে ঢাবি ছাত্রলীগের সদ্য বিদায়ী সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্স বলেন, রাশেদ খাঁনের বক্তব্যে আমরা জঙ্গিবাদের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছি। তাঁকে ছাত্র সমাজ প্রতিহত করবে। তবে কাউকে ফেসবুকে হত্যার হুমকি দেওয়ার অধিকার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি ফোন কেটে দেন। পরবর্তীতে কল দিলে তিনি ফোন ধরেননি।
এদিকে ছাত্রলীগের স্যার এফ রহমান হলের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান তুষার বলেন, তিনি তাঁকে কোনো হুমকি দেননি। কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতারা ষড়যন্ত্র করছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। কী ষড়যন্ত্র করছে জানতে চাইলে তিনি বলতে পারেননি।
এদিকে ছাত্রলীগ নেতাদের এসব হুমকির পাল্টা জবাব দিচ্ছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা। তাঁরাও কোটা সংস্কার ফেসবুক গ্রুপে ছাত্রলীগ নেতাদের এসব স্ট্যাটাস উল্লেখ করে বিভিন্ন মন্তব্য করেছেন।
ফেসবুকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের অন্যতম রিশা সিনথেয়া ফেসবুকে লিখেছেন, ‘রাশেদ ভাই নাকি শিবির তাকে নাকি যেখানে পাবে মারবে। আসিস মারতে একটা বোনও ঘরে বসে থাকবে না।’
আজ শনিবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনের ডাক দেওয়া হয়েছে। এই সংবাদ সম্মেলন থেকে পরবর্তী আন্দোলনের ডাক আসবে বলে একটি সূত্র জানিয়েছেন।
‘কোটা আন্দোলনের সেই চার নেতার একজন শিবিরের সক্রিয় সমর্থক’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ করলে ছাত্রদের প্রতিবাদে তা প্রত্যাহার করে নেয় জাতীয় দৈনিক ইত্তিফাক পত্রিকা।এনটিভি অনলাইন
খবর২৪ঘণ্টা.কম/নজ