খবর ২৪ঘণ্টা ডেস্ক: পুরান ঢাকার পুরানো কেন্দ্রীয় কারাগার ঘিরে কড়া নিরাপত্তাবেষ্টনী গড়ে তোলা হয়েছে। কারাগারের ভেতর স্থাপিত বিশেষ আদালতে আজ বুধবার জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। মামলার আসামি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অপর মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে এই কারাগারেই বন্দী আছেন।
সরেজমিন দেখা গেছে, কারাগারের আশপাশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য অবস্থান নিয়েছেন। আশপাশের রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। আদালত সূত্র বলছে, ইতিমধ্যে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫–এর কর্মচারীরা সেখানে এসেছেন। তবে এখনো এ আদালতের বিচারক আখতারুজ্জামান এসে পৌঁছাননি।
গতকাল মঙ্গলবার আইন মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপন জারি করে আজ এই কারাগারেই আদালত বসার কথা জানায়।
দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল গতকাল দুপুরে সাংবাদিকদের জানান, খালেদা জিয়া এ মামলায় নির্ধারিত তারিখে হাজিরা না দেওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা বলছেন, এটি হলে তা হবে আইনের পরিপন্থী। আদালত সূত্র বলছে, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলাটি আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানির পর্যায়ে রয়েছে।
এর আগে এ মামলা পুরান ঢাকার আলীয়া মাদ্রাসার মাঠে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালতে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছিল। গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ে খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও অর্থ দণ্ডাদেশ দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫। বয়স ও সামাজিক মর্যাদার কথা বিবেচনা করে আদালত তাঁকে এই দণ্ডাদেশ দেন। এরপর থেকে খালেদা জিয়া নাজিমুদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন।
দুদকের কৌঁসুলি মোশাররফ হোসেন কাজল গতকাল এই কারাগারের সামনে সাংবাদিকদের বলেন, ‘খালেদা জিয়ার মামলাটা গত ফেব্রুয়ারি থেকে ছয় মাস হয়ে গেল কোনো কার্যক্রম করতে পারছি না। জিয়া চ্যারিটেবল মামলায় খালেদা জিয়া উপস্থিত হচ্ছেন না। এ কারণে আমরা বলেছি, খালেদা জিয়া যেখানে আছেন, সেখানেই আদালত বসানো প্রয়োজন। আমরা বলার পর আজ গেজেট প্রকাশ করার সম্ভাবনা আছে। গেজেট সাপেক্ষে আগামীকাল (আজ) কারাগারে আদালতের কার্যক্রম বসবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ কি না, তা আমি জানি না। যে রেকর্ড আছে, সেখানে তিনি গুরুতর অসুস্থ, তা উল্লেখ নেই। আমরা জানি, তিনি আসার জন্য অনুপযুক্ত ছিলেন। যেদিন মামলার শুনানির তারিখ ছিল, সেদিন ডাক্তার লিখেছিলেন, তিনি ওই দিন চলাচলে অনুপযুক্ত।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে কাজল বলেন, ‘এটা প্রকাশ্য আদালত। জনগণ ও সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে, তাঁর আইনজীবীদের উপস্থিতিতে এ মামলার বিচার কার্যক্রম পরিচালনা হবে। ফৌজদারি কার্যবিধির বিধানমতে এ আদালত হচ্ছে।’
মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমরা আদালতকে বারবারই বলেছি, তাঁকে (খালেদা জিয়া) আদালতে আনার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। কিন্তু তিনি আদালতে উপস্থিত হননি। আমরা আদালতকে বলেছিলাম, সাক্ষ্য আইন সংশোধন করে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিচার করার জন্য। আমরা আদালত এও বলেছিলাম, এটা একটা পরিত্যক্ত জেলখানা। এখানে অনেক জায়গা আছে। জনগণের উপস্থিতিতে এখানে বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব।’
মোশাররফ হোসেন জানান, কারাগারের ভেতরে আদালতের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। তিনি নিজে তা দেখে এসেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কারাগারের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, এ কারাগারের ভেতর আদালতের অবকাঠামো প্রস্তুত করা হয়েছে। আগে সেটি অফিস ভবন হিসেবে ব্যবহৃত হতো।
কারাগারের ভেতর বিচার অনুষ্ঠিত হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, খালেদা জিয়ার বিচার কারাগারের ভেতর হবে, তাঁরা এমন খবর জানেন না। কারাগারের ভেতর আদালত করা আইনের পরিপন্থী, এটা হতে পারে না।
খালেদা জিয়ার অপর আইনজীবী আবদুর রেজাক খান বলেন, কারাগার কখনো প্রকাশ্য আদালত বলে বিবেচিত হতে পারে না। সংবিধান অনুযায়ী বিচার হতে হবে প্রকাশ্য আদালতে। জ্যেষ্ঠ এই আইনজীবী বলেন, তাঁর জানামতে বাংলাদেশে সামরিক আইনে কারাগারের ভেতর কর্নেল তাহেরের বিচার হয়েছিল। আর পাকিস্তান আমলে একজন রাজনীতিকের মামলার বিচার কারাগারের ভেতরের আদালতে হয়েছে।
আগামীকাল জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার শুনানির তারিখ ধার্য রয়েছে। মামলাটি যুক্তিতর্ক পর্যায়ে শুনানির জন্য রয়েছে।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় এ মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলার অপর আসামিরা হলেন হারিছ চৌধুরী, জিয়াউল ইসলাম ও মনিরুল ইসলাম খান।
খবর ২৪ঘণ্টা/ নই