খবর২৪ঘন্টা নিউজ ডেস্ক: ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন করোনাভাইরাস শনাক্ত রোগীদের মধ্যে পালিয়ে যাওয়া ৬০ জনের বেশি রোগীকে পুলিশ খুঁজছে বলে কর্তৃপক্ষ বলছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক হিসাবে দেখা যাচ্ছে, গত তিন দিনে বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ৬৬ জন পালিয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলেছেন, হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে আস্থার অভাব এবং ভয় থেকে তারা পালিয়ে থাকতে পারেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেছেন, হাসপাতালগুলোতে সব রোগীর তথ্য থাকায় কেউ পালিয়ে গেলে তাকে খুঁজে বের করা সম্ভব।
তারা উল্লেখ করেছেন, কোভিড-১৯এর জন্য নির্ধারিত হাসপাতালগুলো থেকে রোগীদের বের হওয়ার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি করা হয়েছে।
বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে যে ৬৬ জন পালিয়ে গেছে, তাদের মধ্যে ৪৬ জনই ঢাকার চারটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। বাকি ২০ জন পালিয়েছেন বরিশাল, চট্টগ্রাম, খুলনা এবং রংপুর বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে।
বিশ্লেষকদের অনেকে বলেছেন, এমন রোগীদের পালানোর ক্ষেত্রে হাসপাতালগুলোর ওপর চিকিৎসা নিয়ে আস্থা না থাকার বিষয়টি বড় কারণ হিসাবে কাজ করছে। এছাড়া এসব রোগীর মধ্যে তাদের পরিবারের সামাজিকভাবে হেয় হওয়ার ভয়ও থাকতে পারে বলে তারা মনে করেন।
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় হাসপাতালে যারা চিকিৎসা নিয়েছেন, বিভিন্ন সময় তাদেরও অনেকে চিকিৎসায় অব্যবস্থাপনার নানা অভিযোগ করেছেন।
উত্তরের জেলা বগুড়ার একটি হাসপাতালে বেশ কয়েকদিন ভর্তি থাকার পর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন, নাম প্রকাশ না করার শর্তে এমন একজন অভিযোগ করেছেন যে, হাসপাতালে থাকা অবস্থায় সেখানকার চিকিৎসার বেহালদশা তার মধ্যে ভয় তৈরি করেছিল।
‘আমি অনেকদিন হাসপাতালে থাকছি। আমি মাত্র দুই দিন ডাক্তার পাইছি। তারপর সেখানে বিড়ালের উৎপাত অনেক বেশি ছিল। আরেকটা ভয়ানক অবস্থা ছিল, সেটা হচ্ছে, একটাই বাথরুম ব্যবহার করা হতো। সেখান থেকে আমরা যে পানি নিতাম, সেটা পজেটিভ রোগী যেমন নিতো, তেমন একই জায়গা থেকে নেগেটিভ রোগীও নিতো।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ড. আয়শা আকতার বলেছেন, রোগীদের হাসপাতাল থেকে পালানোর ক্ষেত্রে মূলত তাদের মানসিক দুর্বলতা এবং ভয় কাজ করে, প্রাথমিক বিশ্লেষণে তারা এমন মনে করছেন।
বেশ কিছু কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, ‘পালিয়ে যাওয়ার কিছু তথ্য আসছে। অনেকে হয়তো বা ভয় পেয়ে আতঙ্কিত হয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। আবার এমনও হয়, অনেকে নেগেটিভ হলে হাসপাতাল ভর্তির পর তাদের আত্নীয়রা হয়তো বোঝায় যে, এখনো টেস্টের রেজাল্ট পাওয়া যায়নি এবং এখনো যেহেতু নেগেটিভ আছে ফলে এখানে থাকার দরকার নাই।’
‘অনেক পজেটিভ রোগীর পাশের কেউ শ্বাস কষ্ট নিয়ে এসে মারা যাচ্ছে, তখন সে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে যে আমার পাশের রোগী মারা গেছে, এখানে থাকলে হয়তো আমিও মারা যাব।’
তিনি আরও বলেছেন, ‘হাসপাতালে সার্বক্ষণিক ডাক্তার নার্স সবাই আছে এবং চিকিৎসা দিচ্ছে। কিন্তু তাদের মনে যে একটা ভয় বা আতঙ্ক থাকে, সেজন্য তারা তখন অস্থির হয়ে পালিয়ে যায়। তারা তখন মনে করে যে তার চিকিৎসা হয়তো হচ্ছে না। কিন্তু যথাযথ চিকিৎসা তাদের যে হচ্ছে, তারা সেটা বুঝতে পারে না।’
ঢাকায় কোভিড-১৯ এর জন্য নির্ধারিত যে চারটি হাসপাতাল থেকে রোগী পালানোর তথ্য এসেছে, তার মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ৩০ জনের বেশি পালিয়েছে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে দেখা যায়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসিরউদ্দিন বলেছেন, ‘এটাকে পালিয়ে যাচ্ছে বলা যাবে না। এটি হচ্ছে প্রথম যখন রোগী আসে, তারপর দুই, তিন বা চারদিন থাকার পর একটু ভালো হলে তারা অনেকেই থাকতে চায় না। তারা বাড়ির পরিবেশে থাকতে চায়। সেটা কিন্তু গাইড লাইন অনুযায়ীই করা যায়। এ ধরনের ঘটনাই হচ্ছে।’
তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ড. আয়শা আকতার বলেছেন, ‘রোগী যারা পালিয়ে যাচ্ছে, তাদের কিন্তু আনার ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। পালিয়ে যাওয়াদের ডাটাবেজ কিন্তু আছে। সেক্ষেত্রে সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কিন্তু কাজ করছে। তাদের ট্র্যাকিং করা হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেছেন, হাসপাতালে রোগীর যাওয়া আসা বন্ধ করা যায় না। এরপরও এখন কোভিড-১৯ হাসপাতালগুলো থেকে রোগীরা যাতে বের হতে না পারে, সেজন্য কড়াকড়ি করা হয়েছে। -বিবিসি বাংলা
খবর২৪ঘন্টা/নই