মারণাস্ত্র ও মরণ নেশা মাদক। নানা কৌশলে এই মারণাস্ত্র ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে দেশজুড়ে। সীমান্তের কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্য দিয়েই ঢুকছে অস্ত্র ও মাদক। জড়িত রয়েছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। মাঝে-মধ্যে আটক হচ্ছে মাদক ও অস্ত্রের চালান।
গত কয়েক মাসে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও মাদক দেশে ঢুকেছে। সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ফল, সবজি, মাছসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকে করে মাদক ছড়িয়ে দেয়া হয় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। একই পদ্ধতিতে অবৈধপথে আমদানি করা হয় অস্ত্র। বৈধ অস্ত্র নিয়ে গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠান ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপ সেন্টার’ এর তথ্যানুসারে, দেশে অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায় ১২৮টি শক্তিশালী সিন্ডিকেট সক্রিয়।
গত শুক্রবার (১৮ আগস্ট) রাজশাহীর পুঠিয়া থেকে এক অস্ত্র কারবারিকে আটক করা হয়েছে। তিনি ছদ্মবেশী বাদাম বিক্রেতা।
তার বাদামের ডালা থেকে চারটি ওয়ান শুটারগান ও ছয় রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। শুক্রবার (১৮ আগস্ট) রাতে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে এ অভিযান চালায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-৫ এর সদস্যরা। শনিবার (১৯ আগস্ট) দুপুরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। আটক অস্ত্র কারবারির নাম মিলন হোসেন (২৬)। তিনি চারঘাট উপজেলার ভাটাপাড়া ঝাউবোনা গ্রামের আতাউর রহমানের ছেলে। তার বাদামের ডালা তল্লাশি করে চারটি ওয়ান শুটারগান, ছয় রাউন্ড গুলি, একটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। পরে মিলনকেও আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে পুঠিয়া থানায় সোপর্দ করা হয়। থানায় মিলনের নামে অস্ত্র আইনে একটি মামলা হয়েছে।
রাজশাহীর পুঠিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফারুক হোসেন বলেন, জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আটক মিলনকে আজকে সকালে থানায় সোপর্দ করেছে ।
এসব অস্ত্র যাতে দেশে না আসতে পারে, অস্ত্রের চালান ছড়িয়ে না যায় এজন্য র্যাব তৎপর রয়েছে বলে জানান তিনি।
র্যাব সূত্রে জানা গেছে, দেশেও তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন অস্ত্র। চাঁপাইনবাবগঞ্জের সীমান্তে দুর্গম দিয়ে দেশে ঢুকছে অস্ত্র ও মাদক। দাম কম ও সহজলভ্য হওয়ায় এসব অস্ত্রের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে বিদেশীএলজি, পিস্তল, পাইপগান, বন্দুক উল্লেখযোগ্য। এসব অস্ত্র যাচ্ছে বিভিন্ন প্রভাবশালীদের হাতে। যাদের বেশির ভাগই রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এ ছাড়াও সন্ত্রাসী, জঙ্গিদের হাতে যাচ্ছে এসব অস্ত্র।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, অর্ধশতাধিক রুটে বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্রের চোরাচালান আনা-নেয়া করা হচ্ছে। অস্ত্র ও মাদকের সবচেয়ে বড় চালানগুলো ঢুকছে সীমান্ত দিয়ে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপরতা বাড়ালে ওই চক্রটিও রুট পরিবর্তন করে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এসব সীমান্ত এলাকা পার হয়ে সীমান্তের এপারের কোন নির্দিষ্ট স্থানে রাখা হয় অস্ত্র। এরপর তা রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দেয়া হয়। আর এ পৌঁছে দেয়ার কাজ করে দিনমজুর, কৃষক, অটো চালক বা নিম্ন শ্রেণীর লোকজন।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, একাধিক প্রভাবশালী চক্র জড়িত রয়েছে অস্ত্র আমদানিতে। দেশের বাইরে থেকে আমদানি করা বিভিন্ন অস্ত্র চট্টগ্রাম হয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকা ও ভারতে পাঠায় একটি চক্র। আবার ভারত থেকেও অবৈধ অস্ত্র আমদানি করে তারা। অস্ত্রগুলো চড়া দামে বিক্রি হয় দেশের বাজারে। সীমান্ত এলাকার দর্শনা, শাঁকারা, চাঁপাই নবাবগঞ্জ, যশোর সীমান্ত এলাকা থেকে মূলত ফল ও বিভিন্ন ধরনের পণ্যের ট্রাকসহ নানা মাধ্যমে আনা হয় অবৈধ অস্ত্রের চালান। ছোট অস্ত্রগুলো পাচার করতে তেমন বেগ পেতে হয় না চক্রের সদস্যদের।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়াতে বিভিন্ন সবজি ও মৌসুমি ফলের ভেতরে ঢুকিয়েও পাচার করা হয় অস্ত্র। সীমান্ত এলাকা থেকে রাজধানীতে ঢুকতে প্রতিটি অস্ত্রের পরিবহন ব্যয় হয় পাঁচ-সাত হাজার টাকা। আন্ডারগ্রাউন্ডের এসব অস্ত্রের বেশির ভাগই ভারত, ইতালি, চিন, ব্রাজিল, আমেরিকা, জার্মানি ও আর্মেনিয়ার তৈরি।
ওপার থেকে বস্তায় ভরে তারকাঁটার ওপর দিয়ে মাদক এপারে পাঠিয়ে দেয় চক্রের সদস্যরা। এরকম নানা কৌশলে আসছে অস্ত্র ও মাদক।
রাজশাহীর রেঞ্জের ডিআইজি আনিসুর রহমান বলেন, চোরাকারবারীরা তাদের অস্ত্র ও মাদক পাচারে নানা কৌশল ব্যবহার করে। আমরা তৎপর বলেই এটি হাত বদলের আগেই গ্রেফতার করতে সক্ষম হচ্ছি। তিনি আরো বলেন, আমরা গডফাদারদেরও আইনের আওতায় আনতে চায়। এ লক্ষ্যে আমরা কাজও করছি।
বিএ/