নিজস্ব প্রতিবেদক :
নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার গয়লার ঘোপ এলাকার এসআই শফিকের ক্ষমতার দাপটে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করার অভিযোগ তুলছে এলাকাবাসী।
স্থানীয়রা জানান, বাগাতিপাড়া উপজেলার জামনগর ইউনিয়নের গয়লার ঘোপ গ্রামের মৃত খোয়াজ উদ্দিনের ছেলে শফিক ১৯৯৬ সালে পুলিশ কন্সটেবল পদে যোগ দেন। ২০০৩ সালে পদোন্নতি পেয়ে এএসআই ও ২০০৮ সালে এসআই পদে পদোন্নতি পান।
জামনগর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুস জানান, এস.আই শফিক পুলিশের চাকরি পেয়ে এলাকায় ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে নিরীহ মানুষের উপরে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে এবং তিনি ২০১৮ সালে এলাকাতে শফিক ও তার ক্যাডার বাহিনী নিয়ে ঈদ উল ফিতরের আগের দিন রাতে ঈদের জামায়াতের সময় নির্ধারণকে কেন্দ্র করে
কয়েকজনকে কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। জখমীরা হলেন তারই গ্রামের মৃত ইউসুব আলীর ছেলে কপিল উদ্দিন (৬৮), নাজিম উদ্দিন (৬২), মৃত কাশেম আলীর ছেলে মো.ইকবাল হোসেন (৪০), আব্দুল্লার স্ত্রী সেলিনা (২৫), মৃত কপিল উদ্দিনের ছেলে কাওছার (২৫), মো. আব্দুল বাকি (৩০)। এদের মধ্যে কপিল উদ্দিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় নাটোর ইসলামী হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। এটাতেই ক্ষান্ত হননি এস.আই শফিক। কৌশলে তার আত্মীয় রিপনকে বাদি করে ইকবাল ও বাকি মোল্লাহ্ সহ ৫ ভাইকে আসামী করে একটি চাদাবাজির মিথ্যা মামলা দিয়েছে। যার কোনো সত্যতা নাই। সর্বশেষ ২০১৯ সালে বাকিমোল্লাহ্ সহ ৪ জনের বিরুদ্ধে রোড ডাকাতির মামলা দিয়েছে এসআই শফিকের ভাই নজরুল ইসলাম।
তার কর্মস্থল বগুড়া। সেখান থেকেই তিনি নিজ এলাকার মৃত কপিল উদ্দিন মোল্লার পুত্র আব্দুল বাকি মোল্লা, মো. নাজিম উদ্দিনের পুত্র আবু তালহা, তফিল উদ্দিনের পুত্র আব্দুল্লা, মৃত কাশেম মোল্লার পুত্র ইকবাল হোসেনকে আসামী করে মিথ্যা ডাকাতি মামলা দায়ের করে হয়রানি করছে।
তারা পুলিশের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
এছাড়া বড়াল কৃষি খামারের মসুরের ভুষি টেন্ডারে ক্রয়কে কেন্দ্র করে এসআই শফিকের পরামর্শে তার আত্মীয় বাঘা উপজেলার বাজুবাঘা গ্রামের আজিজুল আলমের ছেলে কামরুজ্জামান (রিপনকে) বাদি করে বাগাতিপাড়া থানায় ১০ হাজার টাকার চাদাবাজির অভিযোগ নিয়ে এসে ৫ জনের নামে মামলা করে।
বড়াল কৃষি খামারের অফিসার হিমাদ্রী শেখর মজুমদার জানান, আমি খামারের দায়িত্বরত অফিসার। আমার বড়াল কৃষি খামারের পাহরাদার ইকবালসহ ৫ জনকে যে মামলাটি দিয়েছে এটা সম্পূর্ন মিথ্যা ও বানোয়াট। আমি মামলার স্বার্থে একটি প্রত্যয়ন পত্র দিয়েছি ইকবালকে। আশা করি দ্রুত মামলাটি নিষ্পত্তি ঘটবে।
মামলার বাদী কামরুজ্জামান (রিপন) বলেন, আমি একজন ব্যবসায়ী এবং আমার নিজস্ব গরুর খামার আছে। আমি বাগাতিপাড়া বড়াল কৃষি খামারের টেন্ডারের মাধ্যমে মসুরের ভুষি ক্রয় করি। যার মূল্য অনুমান ৩১ হাজার টাকা। যাতায়াতের রাস্তা ভাল না থাকায় আমার ক্রয়কৃত ভুষিগুলো খামারে নির্ধারিত জায়গায় কয়েক মাস রাখা হয়েছিল। ভুষিগুলো দেখভালের জন্য ওই খামারেরই পাহারাদার ইকবালকে দায়িত্ব দেয়া হয়। দীর্ঘ প্রায় ২ মাস পরে রাস্তা ভাল হওয়ায় আমি খামারে ভুষিগুলো আনার জন্য গাড়ী ও শ্রমিক পাঠাই। ভুষি গাড়ী ভর্তি করে নিয়ে আসার সময় পাহারাদার ইকবাল গাড়ীর চালকের কাছে টাকা দাবী করেন। চালক আমাকে মোবাইল ফোনে জানায় ইকবালকে টাকা না
দিলে গাড়ী যেতে দিচ্ছে না। পরে আমি দ্রুত মোটরসাইকেল নিয়ে বড়াল কৃষি খামারে গিয়ে ইকবালের সঙ্গে কথা বলি এবং তাকে ২ হাজার টাকা দিয়ে ভুষি নিয়ে চলে আসি। পরবর্তীতে আমার সাথে খারাপ আচরণ করায় আমার ফুফা-ফুফুর পরামর্শে বাগাতিপাড়া থানায় ইকবালসহ ৫ জনের নামে ১০ হাজার টাকার একটি চাদাবাজির মামলা করি। মামলাটি নাটোর আদালতে চলমান রয়েছে।
ইকবাল হোসেন বলেন, আমি বড়াল খামারের একজন পাহারাদার। প্রায় ১৫/১৬ বছর যাবত কর্মরত রয়েছি। প্রতি বছর ছিজিনালি খামারের ভুষি টেন্ডারের মাধ্যমে ক্রয়-বিক্রয় হয়। গত বছর বাঘা উপজেলার বাজুবাঘা গ্রামের আজিজুল আলমের ছেলে কামরুজ্জামান ওরফে রিপন খামারের মসুরের ভুষি কিনে ৩১ হাজার টাকায় এবং খামারে ২ মাসের জন্য রেখে দেয় এবং আমাকে ভুষিগুলো দেখ-ভালের জন্য দায়িত্ব দেয়া হয় এবং আমাকে খরচ বাবদ কিছু টাকা দেওয়ার কথা হয় কিন্তু হঠাৎ ২ মাস পরে রিপন গাড়ী পাঠিয়ে খামার থেকে ভুষি নিয়ে যাচ্ছে। খবর পেয়ে আমি বাধা দিলে রিপন এসে ২ হাজার টাকা মিষ্টি খাওয়ার জন্য দিলাম বলে ভুষি নিয়ে চলে যায়।
প্রায় ১ মাস পরে জানতে পারি আমিসহ আমার ৫ ভাইয়ের নামে রিপন বাদী হয়ে বাগাতিপাড়া থানায় একটি চাদবাজি মামলা করেছেন।
আসামী ইকবালের ভাই বাকি বলেন, আমাদের ৫ ভাইয়ের নামে যে মামলাটি দিয়েছে এটা সম্পূর্ন মিথ্যা ও ষড়যন্ত্র মুলক হয়রানি ছাড়া আর কিছুই না। আরো বলেন, এসআই শফিকের সংগে আমাদের পারিবারিক কিছু সমস্যার কারণে শফিক রিপনকে দিয়ে চাদাবাজির মামলা করিয়েছে। কারণ রিপনের ফুফা-ফুফুর বাড়ি এসআই শফিকের বাড়ির সংগে হওয়ায় কুপরামর্শ দিয়ে এই মামলা করানো হয়েছে।
বাকির চাচা স্কুল শিক্ষক নাজিম উদ্দিন বলেন, এসআই শফিক পুলিশের চাকরি পেয়ে ক্ষমতার দাপটে একের পরে এক বিভিন্নভাবে মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দিয়ে হয়রানি করছে আমাদেরকে এবং নিজের ভাই নজরুল ইসলামকে বাদী করে তার কর্মস্থল বগুড়াতে রোড ডাকাতির মামলা করিয়েছে। তাতেও হয়নি এসআই শফিক। ঈদের নাামাজ পড়ানোকে কেন্দ্র করে এসআই শফিক তার গুন্ডা বাহিনী নিয়ে এসে আমাদের
ওপরে হামলা চালিয়ে ব্যাপক মারপিট করে এবং আমার বড় ভাই কফিল উদ্দিনসহ আমরা কয়েকজন গুরুতর রক্তাক্ত জখম হই এবং এসআই শফিক নিজে হাসুয়া দিয়ে আমার বড় ভাইয়ের মাথায় কোপ দিয়ে গুরুতর আহত করে। এ সময় বাড়ির মহিলারা এগিয়ে আসলে তাদেরকেও মারপিট করে জখম করে।
জামনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুস বলেন, শফিক পুলিশ কনস্টেবল থেকে এসআই পদে পদোন্নতি পাওয়ার পর থেকে এলাকায় দাপট আরো বেড়ে গেছে। তিনি নামে-বেনামে অনেক সম্পত্তি করেছেন। এলাকায় একটা বাহিনী তৈরি করছেন। তিনি কাউকেই মানেন না। ইউনিয়ন পরিষদের রায় বাস্তবায়নে বাধার সৃষ্টি করেন।
এ বিষয়ে এসআই শফিকের সাথে মুঠো ফোনে কথা হলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এলাকার চেয়ারম্যান আমার কাছে দাবিকৃত টাকা না পাওয়ায় এসব করাচ্ছে। আমার বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ সত্য নয়। বিষয়টি খোঁজ নিলে জানা যাবে।
রাজশাহী জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর বলেন, যেটুকু শুনেছি তাতে এসআই শফিককে হেনস্তা করার জন্য মামলা ও এসব অভিযোগ আনা হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছিল তার সত্যতা পাওয়া যায়নি।
এম/আর