নিজস্ব প্রতিবেদক :
উজান থেকে নেমে আসা ঢলে রাজশাহী পদ্মার পানি বাড়ছে। প্রতিদিনই বাড়ছে পদ্মার পানি। গত কয়েকদিন ধরে যেভাবে পানি বাড়ছে তাতে কিছু দিনের মধ্যে পদ্মার পানি বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করবে পদ্মার পানি। এতে হুমকির মুখে পড়তে পারে শহর রক্ষা বাঁধও। নদীতে এরই মধ্যে বয়ে যাচ্ছে স্রোত। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় রাজশাহীতে পদ্মা নদীর পানির উচ্চতা মাপা হয়েছে ১০ দশমিক ৭৬ সেন্টিমিটার। আর রাজশাহীতে পদ্মার বিপদসীমা হচ্ছে ১৮ দশমিক ৫০ সেন্টিমিটার। গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর রাজশাহীতে পদ্মার পানির সর্বোচ্চ উচ্চতা ছিল ১৭ দশমিক ৩৪ সেন্টিমিটার। ছুঁই ছুঁই করলেও এর পর আর পদ্মার পানি বাড়েনি। ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে পানি কমতে শুরু করে।
রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) গেজ রিডার এনামুল হক বলেন, গত সোমবার (৮ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টায় পদ্মা নদীতে পানির উচ্চতা মাপা হয়েছিল ১০ দশমিক ৪৮ সেন্টিমিটার। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৭৬ সেন্টিমিটারে। গত ফলে ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহীর পদ্মায় পানি বেড়েছে ২৮ সেন্টিমিটার। এভাবে প্রতিদিনই পানি বাড়ছে। এর আগে গত ২ জুলাই রাজশাহীতে পদ্মানদীর পানির ১০ দশমিক ৭৮ সেন্টিমিটার। ওই দিন থেকেই পদ্মায় পানি বাড়তে শুরু করলেও আবার কমে যায়। গত ৩ জুলাই রাজশাহীতে পদ্মার পানির সর্বোচ্চ উচ্চতা মাপা হয় ১০ দশমিক ৭২ সেন্টিমিটার, ৪ জুলাই ছিল ১০ দশমিক ৪৫ সেন্টিমিটার, ৫ জুলাই ছিল ১০ দশমিক ৩১ সেন্টিমিটার, ৬ জুলাই ছিল ১০ দশমিক ২৮ সেন্টিমিটার, ৭ জুলাই ছিল ১০ দশমিক ৩৪
সেন্টিমিটার। এদিন থেকে রাজশাহীতে পদ্মার পানি আবারও বাড়তে শুরু করে। এর মধ্যে ৮ জুলাই ছিল ১০ দশমিক ৪৮ সেন্টিমিটার। তিনি আরো বলেন, এটা নিয়ে নিয়ে উৎকণ্ঠা থাকলেও এখনই আতঙ্কের কিছু নেই। ২০১৬ সালের ২৮ আগস্ট রাজশাহীতে পদ্মার পানির প্রবাহ উঠেছিল সর্বোচ্চ ১৮ দশমিক ৪৬ সেন্টিমিটার। এরপর আর বাড়েনি। বরং পরদিন ২৯ আগস্ট থেকে পদ্মার পানি আবারও ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে।
কেবল ২০০৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর রাজশাহীতে পদ্মার সর্বোচ্চ উচ্চতা ছিল ১৮ দশমিক ৮৫ সেন্টিমিটার। এরপর ২০১৩ সালের ৭ সেপ্টেম্বর রাজশাহীতে পদ্মা বিপদসীমা অতিক্রম করেছিল। ওই বছর পদ্মার উচ্চতা দাঁড়িয়েছিল ১৮ দশমিক ৭০ সেন্টিমিটার। এর পর আর এই রেকর্ড ভাঙেনি বলেও উল্লেখ করেন পাউবোর এই গেজ রিডার।
জানা যায়, বন্যায় ১৮৫৫ ও ১৮৬৪ সালে রাজশাহী শহর বন্যার পানিতে ডুবেছিল। মহানগরীর ভেতরে বন্যার পানি ১৫ থেকে ২০ দিন স্থায়ী ছিল। ১৮৫৫ সালের বন্যার কারণে মহানগরীর বুলনপুরে শহর রক্ষা বাঁধ তৈরি করা হয়। এর দৈর্ঘ ছিল ১ হাজার ৭২৯ ফুট। আর শহর রাজশাহী শহরকে পদ্মার ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য ১৯৯৫ সালে অবশিষ্ট এই বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে রাজশাহী শহর রক্ষা বাঁধ ঘুরে দেখা গেছে বর্তমানে নদীতে স্রোত বইছে। এর প্রভাবে রাজশাহী মহানগরীর বুলনপুর থেকে নবগঙা পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় একটু একটু করে পানি
শহররক্ষা বাঁধ ছুঁতে শুরু করেছে। পানি বাড়ায় মহানগরীর বসুড়ি এলাকার মানুষ আবারও উদ্বিগ্ন হয়ে উঠছেন। রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ সাহিদুল আলম বলেন, ২ জুলাই রাজশাহীতে পদ্মার পানি হঠাৎ ১০ দশমিক ৭৮ সেন্টিমিটার বেড়ে ছিল। এরপর থেকে পানি আবার কমতে শুরু করে। তবে ৭ জুলাই থেকে পানি আবার বাড়তে শুরু করেছে। বর্তমানে পদ্মায় পানির যেই প্রবাহ, তা দেখে ধারণা করা হচ্ছে পানি বাড়ার এই প্রবণতা অব্যাহত থাকবে।
এস/আর