খুনি, হুন্ডির টাকা আত্মসাৎকারি ইয়াবা ও হিরোইন তৈরীর কারিগর এবং নিরীহ মানুষকে আটকে অর্থ লুটকারী পুলিশ সদস্যদের দিয়ে শুধু বদনামই হবে। ভালো কিছু আশা করা যায় না । তাই আরো বড় কোন বদনাম এবং বিব্রতকর পরিস্থিতির উদ্ভব হওয়ার আগেই গোপন তথ্যের ভিত্তিতে বিপথগামী সদস্যদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। সর্বোচ্চ পদক পেয়েও অনেকেই সেই পদকের মর্যাদা রক্ষা করতে পারেননি। অনেকে পারছেন না। আশির দশকে ডিএমপির ডিবির এসি আকরাম সর্বোচ্চ পদক নিয়েছিলেন অথচ একটি হত্যা মামলায় তাকে জেলে যেতে হয়েছে। সব অর্জন তার বিফলে গেছে। ওসি প্রদীপ পদকধারী পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন। কিন্তু আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে ভয়াবহ ঘটনা ঘটিয়ে দেশে পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ করলেন। রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশে এ ধরনের ঘটনা না ঘটলেও সিলেটের পুলিশ ফাঁড়ির মত ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ
এখানে বেশ কয়েকজন বিপথগামী সদস্য রয়েছেন যারা চরম বেপরোয়া। একজন টি এস আই আছেন যিনি টার্মিনাল পুলিশ বক্সের হাবিলদার থাকাকালে হুন্ডির একটা বড় চালান আত্মসাৎ করেন এবং সেই হুন্ডির টাকা বহনকারীকে হত্যা করে বস্তাবন্দি লাশ ফেলে আসেন পদ্মা আবাসিক এলাকায়। আমি এবং প্রথম আলোর তখনকার সাংবাদিক আনু মোস্তফা বিষয়টি জেনে ফেলি। পত্রিকায় খবর প্রকাশ হয়, কিন্তু ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত পর্যন্ত হয় না। হত্যা মামলাটিও শেষ করে দেওয়া হয়। ঐ সময়কার পুলিশ কমিশনার সাহেব আলী খন্দকার। আর বোয়ালিয়া থানার ওসি ছিলেন রুহুল আমিন। তখনকার একজন এআইজি,
একজন রাজনৈতিক নেতা এবং ওসি ভিকটিম পরিবারের সঙ্গে মোটা অঙ্কের অর্থ দিয়ে মীমাংসার ব্যবস্থা করেন। এর ফলে হত্যা মামলার আসামি হওয়া থেকে ওই হাবিলদার রক্ষা পান। পরবর্তীতে সিলেট ও পাবনা জেলায় কিছুদিন থেকে আবারো আর এম পি তে বদলি হয়ে আসেন। বড় মাপের কথিত অভিনেতা ওই হাবিলদার মিথ্যা কথা বলতে গিয়ে অঝোরে চোখের পানি ফেলতে পারেন। তার চোখের পানির বিনিময়ে আর বিশেষ কায়দায় তিনি এখন টি এস আই। তার সম্পর্কে অনেক পুলিশ কর্মকর্তাই সবকিছু অবগত ছিলেন।
এখনো কেউ কেউ অবগত থাকতে পারেন। তিনি ইয়াবা ও হেরোইন তৈরীর কারিগর। যা দিয়ে অনেক নিরীহ মানুষকে তিনি ফাঁসিয়েছেন। তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে আরও কেউ কেউ এমন কাজ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। রাজশাহী বাস টার্মিনালের ঘটনাটি কেবল ওইদিনই ঘটেনি। প্রকাশ্য দিবালোকে প্রতিদিন নানান কায়দায় নিরীহ মানুষকে পকেট শূন্য করা হয়েছে। সে কারণে ওই এলাকার নাম কেউ কেউ পকেট খালির মোড় হিসেবে অভিহিত করেন। আর এখানে যারা
দায়িত্বে ছিলেন তাদের অনেকেই নিয়মনীতি না মেনে বছরের-পর-বছর বহাল ছিলেন। আরো পুলিশ বক্স, ফাঁড়ী ও থানায় মেয়াদ উত্তীর্ণ পুলিশ সদস্য পাওয়া যাবে। চরম বিতর্কে জড়িয়ে পড়া একজন পরিদর্শক (ওসি) এবং তার আস্থাভাজন কয়েকজন এ এস আই এবং এসআই একাধারে স্বেচ্ছাচারিতা করে যাচ্ছে। যা আরএমপির সুনাম বৃদ্ধির জন্য সহায়ক নয়। বর্তমান পুলিশ কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক যোগদানের পর সাংবাদিকদের কাছে যেসব বলেছিলেন তাতে আমরা খুব আশান্বিত হই। যোগদানের এক সপ্তাহের মধ্যে সাইবার ক্রাইম ইউনিট চালু করেন। যা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় অভূতপূর্ব সাফল্য বয়ে এনেছে। এর পাশাপাশি
নগরীর অধিকাংশ স্থানে তিন শতাধিক সিসি ক্যামেরা স্থাপন আর একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। যা অপরাধী শনাক্তকরণে বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখছে। করোনা রোগীদের জন্য বিনামূল্যে অক্সিজেন সিলিন্ডার এর ব্যবস্থা করা এবং অসহায় দরিদ্রদের মাঝে খাদ্য সহায়তা প্রশংসার দাবি রাখে। কিন্তু নিয়ন্ত্রণহীন মাদকদ্রব্য বিক্রয় ও সেবন, মুষ্টিমেয় বিপথগামী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে গাছাড়া ভাব এবং চুরি ছিনতাই রোধে সমন্বিত উদ্যোগের অভাব ও কিশোর অপরাধী নিয়ন্ত্রণেও ঢিলেঢালা ভাব পরিলক্ষিত। বর্তমান পুলিশ কমিশনার অত্যন্ত মেধাবী, পেশাদারিত্ব সম্পন্ন ও ধার্মিক। তার অধীনে দুইজন অতিরিক্ত পুলিশ
কমিশনার, ১২ জন ডেপুটি পুলিশ কমিশনার সহ অন্তত ৫০ জন গেজেটেড কর্মকর্তা দায়িত্বে নিয়োজিত। এরপরও ইনাদের চোখে ধুলো দিয়ে কতিপয় পুলিশ সদস্য বেআইনি কর্মকাণ্ড করবেন এটা মেনে নেয়া যায়না। আমি বিশ্বাস করি, মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা আরো আন্তরিক ও কঠোর হলে বিরাজমান সংকট এক সপ্তাহের মধ্যে দূর হবে। আমরা চাই আরএমপি কে নিয়ে গর্ব করতে। চাই বাংলাদেশ পুলিশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল থাকুক।আর চাই বলেই দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন কথাটি যেন সব সময় সত্যি হয়।
সিনিয়র সাংবাদিক (এটিএন বাংলা) সুজাউদ্দিন ছোটনের ফেসবুক থেকে নেওয়া।